পাহাড়ে উচ্ছেদ অভিযানে নামছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন

চট্টগ্রামের প্রায় ৩০টি পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ৩০ হাজারের বেশি মানুষ বাস করে। পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাসকারীদের উচ্ছেদে অভিযানে নামছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।

মঙ্গলবার এ তথ্য জানান চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. রুহুল আমীন। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি ইতোমধ্যে ৩০টি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় চিহ্নিত করেছে। যার মধ্যে ১৩টি অতি ঝুঁকিপূর্ণ। এসব পাহাড়ের সব বসতি অবৈধ। কয়েকজন ব্যক্তি পাহাড় কেটে এসব বসতি নির্মাণ করেছেন। এসব পাহাড়ে বসবাসকারীদের উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করবো। এর আগে ঝুঁকিপূর্ণ এসব এলাকার গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে।

মো. রুহুল আমীন জানান, পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির এক সভায় ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে উচ্ছেদের পর বনায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এসব পাহাড়ে বসবাসকারীরা ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষ। তাই নগর ও উপজেলা পর্যায়ে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের নাম অগ্রধিকার ভিত্তিতে গৃহহীনের তালিকায় অন্তর্ভুক্তিসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রতি বছর অতি বৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢল হয়। যেকোনো সময় পাহাড়ে বড় বিপর্যয় ঘটতে পারে। পাহাড়ে বসবাসকারীরা যদি সেখান থেকে না সরলে যেকোনো সময় বড় বিপদ ঘটতে পারে।

পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটি ৩০টি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় চিহ্নিত করেছে। সেগুলো হলো- সিআরবি পাহাড়ের পাদদেশ, টাইগারপাস-লালখান বাজার রোড সংলগ্ন পাহাড়, টাইগারপাস মোড়ের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণ, মোজাফ্ফর নগর পাহাড়, কাট্টলি থেকে সীতাকুণ্ড পর্যন্ত পাহাড়, সলিমপুর বাস্তুহারা পাহাড়, প্রবর্তক পাহাড়, গোলপাহাড়, ইস্পাহানি পাহাড়, বন গবেষণাগার ও বন গবেষণা ইনস্টিটিউট সংলগ্ন পাহাড়, জয়পাহাড়, চট্টেশ্বরী হিল, মতি ঝর্ণা ও বাটালি হিল সংলগ্ন পাহাড়, রেলওয়ে এমপ্লয়িজ গার্লস স্কুল সংলগ্ন পাহাড়, ফয়’স লেক আবাসিক এলাকা পাহাড়, জালালাবাদ হাউজিং সোসাইটি সংলগ্ন পাহাড়, গরীবুল্লাহ শাহ মাজারের পাশের বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটি সংলগ্ন পাহাড়, ডিসি হিলের চেরাগী পাহাড়ের দিকের ফুলের দোকানের অংশ, পরিবেশ অধিদপ্তর সংলগ্ন সিটি কর্পোরেশনের পাহাড়, এ.কে. খান অ্যান্ড কোং পাহাড়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মালিকানাধীন পাহাড়, কৈবল্যধামের বিশ্ব কলোনির পাহাড়, মিয়ার পাহাড়, লালখান বাজার চান্দমারি রোড সংলগ্ন জামেয়াতুল উলুম ইসলামি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের পাহাড়, ফরেস্ট রিচার্চ ইনস্টিটিউট একাডেমির উত্তর পাশের মীর মোহাম্মদ হাসানের মালিকানাধীন পাহাড়, ইস্পাহানি পাহাড় সংলগ্ন দক্ষিণ পাশের হারুন খানের মালিকানাধীন পাহাড়ের পশ্চিমাংশ, নাসিরাবাদ শিল্প এলাকা সংলগ্ন পাহাড়, লেক সিটি আবাসিক এলাকার পাহাড় ও সিডিএ অ্যাভিনিউ রোডের পাশে অবস্থিত ব্লোসম গার্ডেন সংলগ্ন পাহাড়।

বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, চট্টগ্রামে পাহাড় এবং পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ। ২০০৭ সালে পাহাড় ধসে ১২৭ জন মারা যায়। ওই সময় চট্টগ্রামের তৎকালীন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার এম.এন. সিদ্দিককে প্রধান করে ২টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি পাহাড় ধসের ২৮টি কারণ চিহ্নিত করে ৩৬ দফা সুপারিশ করে।

সুপারিশগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- পাহাড়ে বসবাসকারীদের পুনর্বাসন, পাহাড় কাটায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা, নীতিমালা প্রণয়ন, নিরাপত্তা প্রাচীর নির্মাণ, বালি উত্তোলন নিষিদ্ধকরণ, পাহাড়ের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা নির্মাণের অনুমতি না দেওয়া, ৫ কিলোমিটারের মধ্যে হাউজিং প্রকল্প না করা ইত্যাদি। কিন্তু গত ১০ বছরেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।

চট্টগ্রাম শহরে সর্বপ্রথম পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে ১৯৯৯ সালের ১৩ আগস্ট। ওই দিন সিআরবি পাহাড়ের একাংশের সীমানাপ্রাচীরসহ পাহাড় ধসে মারা যান ১০ জন। ২০০০ সালের ২৪ জুন চবি ক্যাম্পাসের আবাসিক এলাকাসহ নগরীতে পাহাড় ধসে ১৩ জন; ২০০৭ সালের ১১ জুন নগরীর সাত স্থানে পাহাড় ধসে ১২৭ জনের মৃত্যু হয়।

২০০৮ সালের ১৮ আগস্ট মতিঝর্ণায় পাহাড় ধসে ১১ জন; ২০১১ সালের ১ জুলাই বাটালী হিলের প্রতিরক্ষা দেওয়াল ধসে ১৭ জন; ২০১২ সালের ২৬ জুন নগরীর ৪ স্থানে পাহাড় ধসে ১৮ জন; ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি খুলশী থানার ইস্পাহানি গোলপাহাড় ধসে একজন; ২৮ জুলাই ভোর ৫টার দিকে লালখান বাজারের টাংকির পাহাড় ধসে দুইজন; ২০১৪ সালের ১৮ জুলাই ঈদ-উল-ফিতরের রাতে দুই স্থানে পাহাড় ও দেয়াল ধসে ৫ শিশুসহ ৬ জন; ২০১৫ সালের ১৯ জুলাই এবং ২১ সেপ্টেম্বর পাহাড় ধসে ৮ জনের মৃত্যু হয়।

আজকের বাজার:এসএ/এলকে/ ০৯ মে ২০১৭