পীরগঞ্জে রেকর্ড পরিমাণ জমিতে সরিষা চাষ

জেলার পীরগঞ্জ উপজেলায় এবার রেকর্ড পরিমান জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। কৃষকের মাঠে-মাঠে ফুটে আছে হলুদ সরিষা ফুল। শীতের হাওয়ায় ছড়িয়ে পড়ছে সুবাস। মধু আহরণে ফুলে-ফুলে বসছে মৌমাছি। সেই সাথে সরিষার হলুদ ফুলে মনোমুগ্ধকর হয়ে ছবি তুলছেন কোমলমতি শিশুসহ সকল বয়সী নারী ও পুরুষ। কিছু এলাকায় যত দূর চোখ যায় হলুদের সমারোহ। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

পীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে ৪ হাজার ১৫০  হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও দিগুন হয়ে ৮ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নসহ পৌর এলাকার বিভিন্ন গ্রামের মাঠগুলোতে চোখে পড়ার মত সরিষার ক্ষেত।
পাঁচগাছি ইউনিয়নের প্রথম ডাঙ্গা গ্রামের সরিষাচাষী আব্দুল জলিল জানান, কৃষি অফিসের সহযোগিতায় ও আমাদের এলাকার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সার্বিক তত্বাবধানে আমাদের সরিষার আবাদ ভালো হয়েছে। প্রতিটি সরিষা গাছে প্রচুর পরিমাণ ফুল ধরেছে। ফুলগুলো আকারেও অনেক বড় হয়েছে। মনে হচ্ছে, এবার সরিষার ফলন ভালো পাব। সময়মতো সরিষা তুলে বিক্রি করতে পারলে বাড়তি কিছু টাকা ঘরে আসবে বলে আশা রাখি। এতে পুরোদমে ইরি-বোরো চাষ করতে পারব।

একই গ্রামের ওয়াদুদ মিয়া, দুদু মিয়া, পাহাড়পুরের রাফিকুল ইসলাম, ফজলু মিয়া, রুবেল মিয়া, রন্জু মিয়া, কাজীরপাড়ার জিতেন্দ্র চন্দ্র জানান, গতবছর সরিষার দাম ভালো থাকায় এ বছর দিগুন জমিতে জমিতে সরিষার চাষ করেছি। এতে ফলন ভালো হয়েছে। আশা করছি ভালো দাম নিয়ে বিক্রি করতে পারব। ওই টাকা দিয়েই আমি বোরো চাষ করতে পারব।
চতরা ইউনিয়নের সরিষা চাষী আব্দুর রহিম জানান, এ বছর আবহাওয়া ভালো থাকায় ভালো ফলনের আশা করছি। বাজারেও সরিষার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। নিজ পরিবারের তেলের যোগান ও বাড়তি আয়ের জন্য তারা সরিষার চাষ করছেন বলেও জানান।

পীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ সাদেকুজ্জামান বলেন, চলতি মৌসুমে কৃষি প্রণোদনার আওতায় বিনামূল্যে কৃষকদের সরিষা বীজ ও সার প্রদান করা হয়েছে। উন্নত ফলনশীল জাতের বারী-১৪, ১৫, ১৭, ১৮, বিনা- ৪, ৯, ১১ জাতের সরিষার চাষসহ স্থানীয় বিভিন্ন জাতের সরিষার চাষ হয়েছে।
তিনি আরও জানান, জেলার পীরগঞ্জ উপজেলায় সরিষার চাষ এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। অনেকেই  ভোজ্য তেল হিসেবে সয়াবিনের পরিবর্তে এখন সরিষার তেল ব্যবহার করছেন। উপজেলায় সরিষার চাষ এবছর লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় চলতি মৌসুমে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ১৫০ হেক্টর। চাষ করা হয়েছে ৮ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে। কৃষক তাদের জমিতে উৎপাদিত সরিষা থেকে তেল উৎপাদন করবেন। অনেকে ভোজ্যতেল হিসেবে সয়াবিনের পরিবর্তনে এখন সরিষার তেল নিয়মিত ব্যবহার করছেন। ফলে গত বছরের চেয়ে এবার দ্বিগুন আবাদ বেড়েছে।

সরিষা চাষি কাঙ্গুরপাড়ার দীলিপ কুঞ্জু, যোশেক কুঞ্জু, মারডাল কুঞ্জু, দেবাশীষ কুঞ্জু, নিমাই সরেন, সুমন হাসদা জানান নিজেদের জমির আবাদি সরিষা তেলের স্বাদ ঘ্রাণ, গুনগত মানের দিক দিয়ে অনেক ভালো। যে কারণে সরিষার তেলের প্রতি বেশি ঝুঁকে পড়েছেন। সয়াবিনের পরিবর্তে এখন মানুষ সরিষার তেলের দিকে ঝুঁকছে। তারা প্রত্যেকে ১ একর জমিতে সরিষার চাষ করে নিজের সংসারের নিজের তেলের চাহিদা পূরণ করবেন এবং অতিরিক্ত বাজারেও বিক্রি করবেন।
সর্বোপরি কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাদের যথাযথ পরামর্শ ও পরিচর্যার বিষয়ে দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে কোনো ধরনের ক্ষতি না হলে এ উপজেলায় সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। (বাসস)