সচেতন বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বৃদ্ধির তাগিদ

পুঁজিবাজার শক্তিশালী হলে দেশের শিল্পায়নে অর্থ বা পুঁজির যোগান বাড়বে। এতে দেশ এগিয়ে যাবে। যে দেশের বিনিয়োগকারী যত বেশি সচেতন তাদের পুঁজিবাজার তত বেশি শক্তিশালী। তাই আমাদের সচেতন বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি করা জরুরী।

বুধবার ২০ ডিসেম্বর ঢাকার একটি হোটেলে আয়োজিত এক সেমিনারে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েনের (বিএমবিএ) সভাপতি সাইদুর রহমান। এ সময় তিনি শিল্প উদ্যোক্তা ও পুঁজিবাজারের মধ্যে সমন্বয় সাধনের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

সাইদুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নয়নের গতিধারা বিশ্বের নজর কেড়েছে। সরকারের গতিশীল নেতৃত্ব ও বর্তমান কমিশনের গুরুত্বপূর্ন ভূমিকার কারণে পুঁজিবাজার সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। অচিরেই বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার পুঁজিবাজারের মডেলে পরিণত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

বিএমবিএ’র এই সভাপতির অভিযোগ- ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উপর বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা, অতিমাত্রায় নিয়ন্ত্রন ব্যবস্থা কোন কোন ক্ষেত্রে ভুল ব্যাখ্যা বিনিয়োগকারীদের হতাশ করে।

যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও যে সকল কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হচ্ছে না তাদের পুঁজিবাজারে আসতে বাধ্য করা এবং নতুন উদ্যোক্তাদের পুঁজিবাজারে আসা সহজ করার উপর তাগিদ দেন তিনি।

‘দীর্ঘ মেয়াদী অর্থায়নে পুঁজিবাজারে ভ’মিকা: বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট বিষয়ক এই সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন।

সেমিনারে শিল্পমন্ত্রী আমীর হোসেন আমু বলেন, পুঁজিবাজার দেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। পুঁজিবাজারের প্রবৃদ্ধি থেকে একটি দেশের অর্থনীতির উন্নতি ঘটে। পুঁজিবাজারে আস্থা ফিরিয়ে আনতে আমাদের সরকার ২০১০ সালে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রণোদনা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। এখন আগের চাইতে অনেক বেশি গতিশীল পুঁজিবাজার।

দেশে ছড়ানো ছিটানো টাকাই শিল্পায়নে বড় ভূমিকা রাখছে বলে মনে করেন শিল্পমন্ত্রী। আর সেই সব ছড়ানো ছিটানো টাকা পুঁজিবাজারের মাধ্যমে একত্রিত হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন মন্ত্রী।

আমু বলেন, শিল্পায়ন হয় দেশের মধ্যে থাকা ছড়ানো ছিটানো অর্থেই। তবে বিভিন্ন জনের হাতে সেই টাকা থাকায় তা সচারাচর কাজে আসে না। কিন্তু পুঁজিবাজারের যখন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা সেই টাকা বিনিয়োগ করে তখনই তা একটি বড় মূলধন হয়ে ওঠে। আর তা শিল্পায়নে ভুমিকা রাখে।

পূজিবাজার দেশের শিল্পায়ন, সেবা খাতের উন্নয়নসহ অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নের উৎস হতে পারে। এই উৎসের মাধ্যমে শিল্প-কারখানায় বিনিয়োগের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে জিডিপিতে অবদান রাখা সম্ভব বলে মনে করেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিস এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেন।

তিনি আরো বলেন, যেসব বড় কোম্পানি এখনও পুঁজিবাজারে আসেননি, তাদের বাজারে নিয়ে আসা উচিৎ। নতুন কোম্পানি বাজারে আসলে বিনিয়োগকারী যেমন উপকৃত হবে, কোম্পানি নিজেও উপকৃত হবে এবং তা সামগ্রিকভাবে দেশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে।

পুঁজিবাজার থেকে টাকা নিয়ে শিল্পায়নের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আহবান জানিয়ে খায়রুল বলেন, দেশের শিল্পায়নের জন্য গত ৮ বছরে প্রায় ৮০০ বিলিয়ন ডলার পুঁজিবাজার থেকে দেওয়া হয়েছে। এতে করে এক দিকে যেমন শিল্পায়ন হচ্ছে, অন্যদিকে দেশের কর্মসংস্থান হচ্ছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ৭৫ শতাংশ অবদান প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানগুলোর।

পুঁজিবাজারে আসতে ইচ্ছুক কোম্পানিগুলোর যোগ্যতা অনুযায়ী দর নির্ধারনের জন্য পাবলিক ইস্যু রুলস সংশোধন করা হয়েছে। এই রুলসে প্রিমিয়ামের ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোর জন্য বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে আসার জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বুক বিল্ডিং পদ্ধতির অপব্যবহার হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। বুক বিল্ডিং নিয়ে অপব্যবহার রোধে বিএসইসি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে-এমন আশা তার।

ব্যাংক নির্ভর শিল্পায়নের দিকে না গিয়ে পুঁজিবাজারে আশার অনুরোধ করেন বিএসইসির চেয়ারম্যান। পুঁজিবাজারে আসলে ঋণ খেলাপী হওয়ার কোনো ভয় নেই বলেও মনে করেন তিনি।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অ্যাসোসিয়েশনের সহ সভাপতি মোশারফ হোসেন।

এতে আরও বক্তব্য দেন তালিকাভূক্ত কোম্পানি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আজম জে চৌধুরী, ইফাদ অটোসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাসকিন আহমেদ, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান খান চৌধুরী, খান ব্রাদার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তোফায়েল কবীর খান প্রমুখ।

আজকের বাজার: এনএল/ ওএফ/এলকে/ ২০ ডিসেম্বর ২০১৭