প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা সমাজের অবক্ষয় ও ব্যর্থতার চিত্র: হাইকোর্ট

বরগুনায় রাস্তার মোড়ে প্রকাশ্যে যুবককে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। ঘটনাটিকে সমাজের অবক্ষয় ও ব্যর্থতার চিত্র বলে মন্তব্য করেন আদালত।

বৃহস্পতিবার সকালে বরগুনার ঘটনাটি হাইকোর্টের নজরে আনেন এক আইনজীবী।

প্রতিক্রিয়ায় আদালত বলেন, প্রকাশ্য দিনের আলোয় এমন ঘটনা ঘটলো, ভিডিও করা হলো, ঘটনাস্থলে লোকজন দাঁড়িয়ে থাকলো, অথচ কেউ সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেনি। এটা সমাজের অবক্ষয়ের চিত্র। সারাদেশের মানুষ এ হত্যাকাণ্ডে মর্মাহত।

দিনের আলোতে এমন ঘটনা অবিশ্বাস্য বলেও মন্তব্য করেন হাইকোর্ট।

বুধবার সকালে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে হামলার ঘটনাটি ঘটে। নিহত রিফাত সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের বড় লবণগোলা গ্রামের দুলাল শরীফের ছেলে।

এদিকে প্রকাশ্যে রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার স্থিরচিত্র ও ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, দুই যুবক রাম দা দিয়ে কোপাচ্ছে রিফাতকে। এ সময় তার স্ত্রী আয়শা আক্তার মিন্নি ওই দুই যুবককে বারবার প্রতিহত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এই ঘটনায় দেশব্যাপী তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে; বইছে নিন্দার ঝড়।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা দেশ রূপান্তরকে জানান, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে স্ত্রীকে নিয়ে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন রিফাত। এ সময় কয়েক যুবক তাদের পথরোধ করে। ওই যুবকদের মধ্যে দুজনের হাতে ছিল রাম দা।

তারা রিফাততে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। তখন তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়েও হামলাকারীদের নিবৃত্ত করতে ব্যর্থ হন। রিফাতকে বাঁচাতে তার স্ত্রী বারবার চিৎকার করলেও আশপাশের কেউ এগিয়ে আসেনি। হামলাকারী যুবকরা রিফাতকে রক্তাক্ত করে সবার সামনে দিয়েই চলে যায়।

হামলাকারীরা চলে যাওয়ার পর রিফাতকে উদ্ধার করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সেখানকার চিকিৎসকরা উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেল ৪টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

নিহত রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ দেশ রূপান্তরকে জানান, তার ছেলে দুই মাস আগে বরগুনার পুলিশ লাইন এলাকার জনৈক কিশোরের মেয়ে আয়শা আক্তার মিন্নিকে বিয়ে করে। বিয়ের পর মিন্নিকে নিজের সাবেক স্ত্রী দাবি করে উত্ত্যক্ত করতে শুরু করে শহরের পশ্চিম কলেজ সড়কের নয়ন বন্ড নামে এক যুবক। সে ফেইসবুকে বিভিন্ন আপত্তিকর ছবিও পোস্ট করে। এই নিয়ে রিফাতের সঙ্গে নয়নের বিরোধ সৃষ্টি হয়। এর জের ধরে বুধবার সকালে নয়ন, রিফাত ফরাজী, রিশান ফরাজী ও রাব্বি আকন রিফাতকে কুপিয়ে জখম করে ফেলে রেখে যায় বলে অভিযোগ করেন দুলাল শরীফ।

এ ঘটনায় বুধবার রাতে নিহত রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করলে পুলিশ ৪ নম্বর আসামি চন্দনকে রাতেই গ্রেপ্তার করে।

আজকের বাজার/এমএইচ