‘বিচারপতিরা প্রকাশ্যে এতো কথা বলেন না’

আপনি অনেক উন্নয়শীল দেশ দেখেছেন; অনেক উন্নত দেশ দেখেছেন; প্রতিবেশী দেশ ভারতও দেখেছেন। বিচার কার্য ছাড়া অন্য কোনো দেশের প্রধান বিচারপতি পাবলিকলি এতো কথা বলেন না।

বুধবার,২৬ এপ্রিল সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধান বিচারপতির উদ্দেশ্যে এসব কথা বলেন আইন বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক। ২৮ এপ্রিল জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

প্রসঙ্গত, গতকাল মঙ্গলবার হবিগঞ্জ আইনজীবী সমিতির দেওয়া এক সংবর্ধনায় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, বিচার বিভাগের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করেছে সব সরকার। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা চায় না প্রশাসন। তারা বিচার বিভাগকে নিজেদের প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে।

তিনি আরও বলেছিলেন, প্রশাসন ও আইন বিভাগের সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করে বিচার বিভাগ। প্রশাসনের লোকজন অবসরে গেলে তাদেরও রক্ষা করে বিচার বিভাগ। চাকরিকালে বিভিন্ন সমস্যায়ও তাদের বিচার বিভাগেই যেতে হয়।

প্রধান বিচারপতির এমন বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে বিচার বিভাগের সঙ্গে নির্বাহী বিভাগের সংকটের বিষয়ে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী আরও বলেন, প্রধান বিচারপতিকে আমি অত্যন্ত সম্মান করি। তিনি যা বলেছেন- তার কারণ আমাদের বললে অনেক সুবিধা হতো।

তিনি বলেন, বিচারকদের স্বাধীনভাবে কাজ করার সুয়োগ দিয়েছে বর্তমান সরকার। আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, বিচার কার্যে হস্তক্ষেপ করে না বর্তমান সরকার। আগামীতে কখনও হস্তক্ষেপ করবে না; বিচার বিভাগ স্বাধীন। এতেই বিচার কাজে গতি এসেছে। এরপরও যদি বিচারকদের কোনো সমস্যা থাকে- তা জনসম্মুখে না বলে সরকারের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যাবে।

তিনি আরও বলেন, অন্য সরকারকে ডিফেন্ড করার কোনো দরকার আর নেই। বর্তমান সরকার বিচার বিভাগের সঙ্গে ‘সৎ মা’ সুলভ আচরণ করছে- এমন বক্তব্য অত্যন্ত দুঃখজনক।

প্রধান বিচারপতির উদ্দেশ্য আনিসুল হক বলেন, বিচার বিভাগের প্রতি সবিনয় ও প্রধান বিচারপতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলছি, আপনি অনেক উন্নয়শীল দেশ দেখেছেন, অনেক উন্নত দেশ দেখেছেন। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতও দেখেছেন। বিচার কার্য ছাড়া অন্য কোনো দেশের প্রধান বিচারপতি পাবলিকলি এতো কথা বলেন না।

মন্ত্রী বলেন, আমি স্বীকার করি, তিনি নিশ্চয় প্রয়োজনে কথাগুলো বলেন। কিন্তু আপনাকে কোনো দুঃখ-কষ্ট থাকলে সেগুলো জনসম্মুখে না বলে আমাদেরকে জানান। আমরা সুরাহার চেষ্টা করবো। আমি সব সময় আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যার নিরসন করতে চাই। সরকারের কোনো আচারণে সৎ মা সুলভ ব্যবহার দেখি না। তবু তিনি যদি পয়েন্টআউট করেন- সেটা আলোচনার মাধ্যমে নিশ্চয় নিষ্পত্তি করতে পারবো।

তিনি আরও বলেন, হাইকোর্টের বিচারপতির বেতন ৪৯ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৫ হাজার টাকা করেছে শেখ হাসিনার সরকার; সুবিধাদি যোগ করলে বিচারপতিদের বর্তমান বেতন ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি হবে। আপিল বিভাগের বিচারপতির বেতন ৫৩ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা এবং প্রধান বিচারপতির বেতন ৫৬ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা করা হয়েছে। সুবিধাদিসহ আপিল বিভাগের বিচারপতি এবং প্রধান বিচারপতির বর্তমান বেতন দেড় লাখ টাকার বেশি হবে।

আনিসুল হক বলেন, একজন বিচারপতির মর্যাদারক্ষার জন্য যে আনুসাঙ্গিক সুবিধা দরকার- সেটা দেওয়া হয়েছে। এটা হচ্ছে, অবকাঠামো বৃদ্ধির প্রথম পদক্ষেপ। বিচার বিভাগকে খুশি করার জন্য এটা করা হয়নি।

তিনি বলেন, স্টেপ মাদারলি বিহেভিয়ার সরকারের মধ্যে থাকলে বিচারপতিদের বেতন বাড়ানোসহ অন্যান্য সুবিধা দেওয়া হতো না।

নিম্ন আদালতের বিচারপতিদের প্রসঙ্গ টেনে মন্ত্রী বলেন, প্রত্যেক ক্ষেত্রেই বিচারক এবং বিচারপতিরা যেন স্বাধীনভাবে বিচার করতে পারেন- সেদিকে নজর দিয়েই প্রয়োজনীয় অবকাঠামো করা হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক উপস্থিত ছিলেন।

আজকের বাজার:এলকে/এলকে/২৬এপ্রিল,২০১৭