প্লাবনভূমিতে মাছ চাষ, ভৈরবে বেকারদের সুদিন

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে বর্ষা মৌসুমে প্লাবনভূমিতে মাছের চাষ বেকারত্ব দূরীকরণে এক নয়াদিগন্ত উন্মোচন করেছে। একক প্রচেষ্টা বা সম্মিলিত উদ্যোগে এখানে গড়ে ওঠা মাছ চাষে স্থানীয় বেকার যুবকদের যেমন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলছে, তেমনি দেশের গুরুত্বপূর্ণ আমিষের চাহিদা পূরণে রাখছে অনন্য ভূমিকা। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় সহজ শর্ত ও স্বল্প সুদে মেয়াদী ঋণসুবিধায় এই খাতের উজ্জ্বল সম্ভবনা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

হাওর ও ভাটি অঞ্চলের প্রবেশমুখ ভৈরব মেঘনা, ব্রক্ষ্মপুত্র, কালী নদীসহ শীতলপাটি, কোদালকাটি ও সাতমুখি, বাদশাবিল, ওরারখাল ইত্যাদি অসংখ্য শাখা নদী ও খাল-বিল বিদৌত নিম্নভূমি। এখানে বর্ষাকালে উজান থেকে প্রচুর পানি নেমে আসে। আর ওই পানি বিভিন্ন খাল-বিল-নালা ভরে এলাকার বিশাল নীচুভূমিকে প্লাবিত করে। এক সময় ওইসব প্লাবনভূমি শাপলা-শালুকের অভয়ারণ্য হলেও বর্তমানে সেই দৃশ্যপট আর নেই। সেই দৃশ্যে এখন স্থান হয়েছে বাশের খুঁটি,সূতারজালের। আর কিছু লোকের কর্মচাঞ্চল্যতা।

স্থানীয় মৎস্য বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, বিগত কয়েক বছর আগে প্রথমে অল্পসংখ্যক লোক তাদের নিজস্ব নীচুজমিতে জমে থাকা প্লাবনভূমিতে এই মাছের চাষ শুরু করলেও কালক্রমে সেগুলি এখন বিশাল ও সার্বজনীনতায় রূপ নিয়েছে। এখন একক ব্যক্তির পাশাপাশি গ্রামের অসংখ্য মানুষ এইসব ভূমিতে মাছের চাষ করছে। এতে করে নিজেরা আর্থিকভাবে লাভের পাশাপাশি প্রতিটি খামারে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে ১০ থেকে ১২জন শ্রমজীবি মানুষের।

প্লাবনভূমিতে মাছের চাষ করা ওইসব খামারিদের মধ্যে কালিকাপ্রসাদ ইউনিয়নের চরেরকান্দা গ্রামের মো. বিল্লাল মিয়া, আব্দুস সালাম ও শিমুলকান্দি ইউনিয়নের শিমূলকান্দি গ্রামের হাজী আফিকুল ইসলাম হারিছ জানান, লাভজনক প্রকল্প হওয়ায় দিনে দিনে এই পদ্ধতির মাছের চাষ বাড়ছে এলাকায়। কর্মীর কর্মসংস্থানসহ এলাকার মাছের চাহিদা পূরণে তারা ভালো ভূমিকা রাখছেন।

তাদের দাবি, যদি এ খাতে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় মেয়াদি প্রকল্পের আওতায় সহজ শর্তে স্বল্প সুদে ঋণ সহায়তা পাওয়া যেতো, তবে এ খাতের ব্যাপক উন্নয়ন হতো। তখন আরও বেশী সংখ্যক উদ্যোক্তা এই প্রকল্পে পূঁজি বিনিয়োগ করতেন। এতে করে মাছের ঘাটতি পূরণসহ দেশের অর্থনীতিতে তারা আরও বেশী করে ভূমিকা রাখতে পারতেন।

এদিকে ওইসব খামারে কর্মরত মঞ্জুর আলী, ইউনুস মিয়া, হরেন দাস, চিত্ত রঞ্জন দাস জানান, নিজেদের এলাকায় এইসব মাছের খামার গড়ে ওঠায় তাদের কর্মসংস্থান হয়েছে। প্রতিটি খামারে বিভিন্ন কাজে ১০ থেকে ১২জন শ্রমিক তারা কাজ করে তাদের সংসার পালন করছেন।

অন্যদিকে মৎস্য ব্যবসায়ী লিটন দাস, সবুজ মিয়া আর নবকৃষ্ণ দাস জানান, এইসব মাছের প্রকল্প থেকে তারা প্রতিদিন মাছ কিনে নিয়ে ভৈরবসহ আশে পাশের উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করেন। এতে করে তারা দৈনিক ৫-৬শ টাকা আয় করতে পারছেন। যা দিয়ে তারা পরিবার পরিজন নিয়ে ভালোভাবে বেঁচে আছেন।

এদিকে স্থানীয় লোকজন জানান, তারা প্রতিদিন সকালে এলাকার মাছের খামারগুলি থেকে কম দামে তাজা মাছ কিনে নিয়ে তাদের পরিবারের চাহিদা মেটাতে পারছেন। কালিকাপ্রসাদের চরেরকান্দা গ্রামের সুরুজ মিয়া বলেন, হঠাৎ করে বাড়িতে মেহমান আসলে বাজারে না গিয়ে ছুটে আসেন প্লাবনভূমির মৎস্য খামারে। এখানকার শ্রমিকদের বললে জাল টেনে চাহিদা মতো মাছ তুলে বিক্রি করেন। এতে করে তাদের অনেক সুবিধা হয়। একই মতামত তুলে ধরেন শিমূলকান্দির তিয়ারিরচর গ্রামের খালেক মিয়া ও রাজনগরের ফজলু ভূঁইয়ার।

ভৈরবে প্লাবনভূমিতে মাছের চাষ নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে উল্লেখ করে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কুমার পাল জানান, চলতি বছর ভৈরবে ৫ থেকে ৬ হেক্টর আয়তনের ২৫ থেকে ৩০টি প্লাবন ভূমিতে রুই, কাতলা, মৃগেল, সরপুঁটির ইত্যাদি মাছের চাষ হয়েছে।

তিনি জানান, এ পদ্ধতির মাছ চাষের ফলে এলাকার আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতিসহ বেকারত্ব দূরীকরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। তবে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মাছের খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় চাষীদের লাভ অনেক কমে গেছে বলেও জানান তিনি।
আজকের বাজার: সালি / ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭