বন্ধ হয়ে গেল বিশ্বের প্রথম সংবাদ যাদুঘর ‘নিউজিয়াম’

প্রায় ১২ বছর ধরে, সাংবাদিকদের উন্নয়ন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সংশোধনী প্রচারের জন্য নিবেদিত একটি প্রতিষ্ঠান হিসাবে কাজ করার পর অবশেষে নতুন বছরের প্রাক্কালে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি’র অন্যতম অনন্য যাদুঘর – দ্য নিউসিয়াম – এর দরজা বন্ধ হয়ে গেল! বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত এই নিউজিয়ামটির অবস্থান ছিল যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অ্যাভিনিউ আর কনস্টিটিউশন অ্যাভিনিউয়ের সংযোগস্থলে।

কেমন করে এবং কেন সংবাদ তৈরি হয় ইত্যাদি হাজারো তথ্যের ভাণ্ডার ছিল এ জাদুঘরে। ভার্জিনিয়ার আরলিংটনে ১৯৯৭ সালের ১৮ এপ্রিল প্রতিষ্ঠিত হয় এই সংবাদ জাদুঘর। ফ্রিডম ফোরাম নামের একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান এটি পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে আসছিল। ২০০০ সালে ফ্রিডম ফোরাম সিদ্ধান্ত নেয়, ওয়াশিংটন ডিসির পোটোম্যাক নদীর তীরে সরিয়ে নেওয়া হবে সংবাদ জাদুঘরটি। এর দুই বছর পর অর্থাৎ ২০০২ সালের ৩ মার্চ মূল নিউজিয়াম বন্ধ হয়ে যায় এবং ওয়াশিংটন ডিসি-তে আরও বড় পরিসরে ৪৫০ মিলিয়ন ডলার খরচ করে গড়ে তোলা হয়েছিল নতুন এই নিউজিয়ামটি। ২০০৮ সালের ১১ এপ্রিল ঢাকঢোল পিটিয়ে দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয় জাদুঘর। গত পাঁচ বছরে প্রায় ৩ মিলিয়ন দর্শনার্থী এ জাদুঘরটি পরিদর্শন করেছেন। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বার্লিন ওয়াল, ৯/১১ হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত নিউ ইয়র্কের টুইন-টাওয়ারের টুকরো, ইউগোস্লাভিয়ায় কর্মরত একটি টিভি ক্রুর বিচ্ছিন্ন গাড়ি, প্রথম সংশোধনী সহ নানাবিধ নিদর্শন সন্নিবেশিত ছিল যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানীর একেবারে কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ডিসি’র নিউজিয়ামে। এছাড়া বিশ্বজুড়ে সংবাদপত্রগুলির প্রথম পৃষ্ঠাগুলির প্রদর্শন ছিল মানুষের আগ্রহের বিষয়। নিউজিয়ামের গ্যালারিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হলোঃ গ্রেট হল অব নিউজ, নিউজ হিস্ট্রি, গ্যালারি, ইন্টারঅ্যাক্টিভ নিউজরুম, গ্লোবাল নিউজ থিয়েটার, রাইজ অব ইলেক্ট্রনিক নিউজ গ্যালারি, ফার্স্ট অ্যামেন্ডমেন্ট গ্যালারি এবং জার্নালিস্টস মেমোরিয়াল। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম সংশোধনীতে বলা হয়েছিল, বাক-স্বাধীনতা তথা সংবাদপত্রের স্বাধীনতার কথা। অ্যামেন্ডমেন্ট গ্যালারিতে যে কেউ সাধারণ দর্শক হিসেবে ঢুকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় স্বাধীন সংবাদপত্রের সমর্থক হয়ে যেত অবলীলায়। সংবাদ সংগ্রহশালার আরেকটি আকর্ষণীয় দিক জার্নালিস্টস মেমোরিয়ালের সংগ্রহশালার তথ্যাদি। সংবাদ সংগ্রহ করার ঝুঁকি নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেসব সাংবাদিক মৃত্যুবরণ করেছেন, তাদের নাম খোদাই করা হচ্ছে এ শ্রদ্ধালিপিতে। বিশ্বের ১৫২৮ জন সাংবাদিকের নাম লেখা হয়েছে তাদের সংবাদপত্র ও মৃত্যু তারিখসহ। এই তালিকায় আছে আজারবাইজান, বাংলাদেশ, কলম্বিয়া, হাইতি, ইরাক ও পাকিস্তান সহ আরও অনেক দেশের সাংবাদিকদের নাম। গত ১৫ বছরে প্রায় ২০০০ অ্যামেরিকান সংবাদপত্র বন্ধ হয়ে গেছে এবং গ্যালাপের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যার অর্ধেকেরও কম লোক বলেছে যে তারা গণমাধ্যমের উপর বিশ্বাস রাখে। নিউজিয়াম বন্ধ হয়ে গেলেও তাদের একটি অনলাইন ফোরামে মুক্ত সাংবাদিকতার গুরুত্বের উপর জোর দেওয়ার জন্য তার মিশন চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে নিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ।খবর ভিওএ

আজকের বাজার/লুৎফর রহমান