বাজারে আসতে শুরু করেছে দিনাজপুরের লিচু

জেলার সুস্বাদু  লিচু এর মধ্যেই  বাজারে আসতে শুরু করেছে। প্রথম পর্যায়ে  মাদ্রাজি ও বেদানা লিচু  বাজারে উঠেছে।
দিনাজপুর কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নুরুজ্জামান মিয়া এ তথ্য নিশ্চিত করেন।  তিনি বলেন, এবারে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এক সপ্তাহ পর বাজারে উঠলো এ জেলার সুস্বাদু বিভিন্ন জাতের লিচু। মাদ্রাজি ও বেদনার লিচু গতকাল বুধবার থেকে বাজারে উঠতে শুরু করেছে। দিনাজপুর শহরের কালিতলা লিচুর আরতে এ দুই জাতের লিচু গতকাল থেকেই বেচা বিক্রি শুরু হয়েছে ।
তিনি বলেন, পর্যায়  ক্রমে মধু মাস হিসেবে পরিচিত গ্রীস্মের এ জ্যৈষ্ঠ মাসে বিভিন্ন  জাতের লিচু একের পর এক বাজারে আসতে শুরু করবে। প্রথম পর্যায়ে মাদ্রাজি ও বেদেনা লিচু বাজারে উঠেছে। এরপর দেশি বোম্বাই ও কাঁঠালি লিচু আসবে। জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষে আষাঢ়ের ১৫  তারিখ পর্যন্ত বাজারে চায়না থ্রি ,চায়না ২ ও চায়না ফোর লিচু পাওয়া যাবে।
তিনি বলেন, এবারে তীব্র তাপদাহের কারণে অনেক কষ্ট করে লিচু বাগানিরা লিচু গাছে পানি সেচ এবং বিভিন্ন ভিটামিন জাতীয় স্প্রে লিচু গাছে প্রয়োগের মাধ্যমে লিচুর গুটি রক্ষা  করতে সক্ষম হয়েছে। তাপদাহের কারণে লিচু একটু দেরিতে বাজারে আসতে শুরু করেছে। তারপরেও সারাদেশে মানুষের চাহিদা পূরণ হবে দিনাজপুরের লিচু দিয়ে।
জেলার বিরল উপজেলার মাধববাটি গ্রামের লিচু চাষি আব্দুস সালাম বলেন, এবারে তাপদাহের তীব্রতায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আগাম জাতের মাদ্রাজি বেদনা জাতের লিচু। গাছের ৩০-৩৫ শতাংশ মুকুল পুড়ে গেছে তীব্র তাপদাহে। এর মধ্যেই বাজারে আসছে মাদ্রাজি ও বেদনা জাতের লিচু। তবে এ মৌসুমে মাদ্রাজি ও বেদনা জাতের লিচুর যোগান কিছুটা কম হবে। গত বারের তুলনায় এবার লিচুর দামও বেশি হবে। কারণ চাহিদা তুলনায় লিচুর যোগান কম। প্রায় দুই একর জমিতে মাদ্রাজি জাতের লিচুর মুকুল কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ।
একই গ্রামের লিচু  চাষি আক্কাস আলী বলেন, তার এক একর মাদ্রাজি ও বেদনা জাতের লিচুর মুকুল প্রায় ৩০-৩৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। যা অবশিষ্ট রয়েছে তা রক্ষায় দিন রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছি। লিচু পাকা শুরু হয়েছে । এরপরেই শুরু হবে বাগান থেকে লিচুপারার উৎসব।  সারা দেশে  পৌঁছে যাবে দিনাজপুরের লিচু। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বেপারীরা আসতে শুরু করেছে লিচু কিনতে। এর মধ্যে বৃষ্টি হওয়ায় রক্ষা পেয়েছে বোম্বাই জাতের লিচুর বাগান গুলো।
সদর উপজেলার গোশাইপুর গ্রামের লিচু ব্যবসায়ী আজিজুল ইসলাম  বলেন, এ মৌসুমে প্রায় ৩০ লাখ টাকার লিচুবাগান কিনে রেখেছি। মাদ্রাজি ও বেদনা জাতের লিচু ৪০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অবশিষ্ট লিচু রক্ষায় দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছি। তবে বোম্বাই জাতের লিচু এখনো অক্ষত রয়েছে। তীব্র তাপদাহে যেটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আশা করছি বোম্বাই জাতের লিচু দিয়ে সেই ক্ষতি পূরণ হবে ।  তাই বাজারে লিচুর দাম গত বছরের তুলনায়  কিছুটা বেশি হবে।
বিরল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ ফরিদুল ইসলাম বলেন, গত ১২ বছরের মধ্যে এ মৌসুমে দিনাজপুরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। যে কারণে আগাম জাতের মাদ্রাজি ও বেদনা জাতের লিচুর বেশ ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা। তবে বোম্বাই জাতের লিচু এখনো অক্ষত অবস্থায় আছে। আমরা দিনরাত পরিশ্রম করে লিচু চাষি ও ব্যবসায়ীদের তাপদাহ থেকে রক্ষায় সেচ, ও কিছু কীটনাশকের ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছি। বিকেলের দিকে বাগান গুলোতে সেচ দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। সেই সাথেই কিছু ভিটামিন জাতীয় ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছি। আমরা দিনরাত পরিশ্রম করে কৃষকদের লিচু রক্ষায় করণীয় বিষয়ে ধারণা প্রদান করছি।
তিনি বলেন, এরই মধ্যে মাদ্রাজি ও বেদনা জাতের লিচু লাল আভা ধারণ করতে শুরু করেছে। আশা করছি কয়েক দিনের মধ্যেই এ লিচু পরিপক্ক হবে এবং বাজারে আসতে শুরু করবে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বেপারীরা আসছে লিচু কিনতে। তাদের থাকা-খাওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে  খোঁজ-খবর রাখছি। এ উপজেলায় প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার মেট্রিক টন লিচু উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
দিনাজপুর হর্টিকালচার বিভাগের উপ-পরিচালক মোঃ মইনুল ইসলাম জানান,  জেলায় এখনো যে পরিমাণ লিচু বাগানে রয়েছে। তা, দিয়ে  সারাদেশের চাহিদা পূরণ হবে। (বাসস)