বিচারকদের চাকরি বিধি প্রকাশের সময় ২ সপ্তাহ পেছালো

নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাবিধি গেজেট আকারে প্রকাশের সময় আরও দুই সপ্তাহ পেছালো। সময় দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

রোববার অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের সময় আবেদনের প্রেক্ষাপটে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস.কে.) সিনহার নেতৃত্বে ৭ সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ সরকারকে সরকারকে এ সময় দেয়।

বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি নিয়ে বিচার বিভাগের সঙ্গে রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের দীর্ঘ টানাপড়েনের পর গত ৩০ জুলাই ওই বিধিমালার খসড়া সুপ্রিম কোর্টে জমা দিয়েছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তবে তা গ্রহণ করেননি প্রধান বিচারপতি। কয়েকটি শব্দ ও বিধি নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন, খসড়া চূড়ান্ত করার আগে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে বিচারকদের আলোচনা হলেও খসড়ায় তার বাস্তবায়ন দেখা যায়নি। পুরোপুরি ‘ইউটার্ন’ নিয়েছেন আইনমন্ত্রী।

ওই খসড়া গ্রহণ না করে প্রধান বিচারপতি মতপার্থক্য নিরসনে আইনমন্ত্রী, অ্যাটর্নি জেনারেল ও আইন মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞদের আলোচনায় ডেকেছিলেন। ৩ আগস্টের মধ্যে যেকোনো দিন আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি।

প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আলোচনায় বসতে গত বৃহস্পতিবার দিন নির্ধারণ করেছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তবে ওই দিন অসুস্থতার কথা বলে সুপ্রিম কোর্টে যাননি মন্ত্রী।

প্রসঙ্গত, মাসদার হোসেন মামলার চূড়ান্ত শুনানি শেষে ১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ সরকারের নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে আলাদা করতে রায় দেয়। ওই রায়ে আপিল বিভাগ বিসিএস (বিচার) ক্যাডারকে সংবিধান পরিপন্থি ও বাতিল ঘোষণা করে। একইসঙ্গে জুডিশিয়াল সার্ভিসকে স্বতন্ত্র সার্ভিস ঘোষণা করা হয়। বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করার জন্য সরকারকে ১২ দফা নির্দেশনা দেয় সর্বোচ্চ আদালত।

মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পর ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা হয়ে বিচার বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়। আপিল বিভাগের নির্দেশনার পর গত বছরের ৭ মে আইন মন্ত্রণালয় নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালার একটি খসড়া প্রস্তুত করে সুপ্রিম কোর্টে পাঠায়।

সরকারের খসড়াটি ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার অনুরূপ হওয়ায় তা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থি বলে গত ২৮ আগস্ট শুনানিতে জানায় আপিল বিভাগ। ওই খসড়া সংশোধন করে সুপ্রিম কোর্ট আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। একইসঙ্গে তা চূড়ান্ত করে প্রতিবেদন আকারে আদালতে উপস্থাপন করতে বলা হয় আইন মন্ত্রণালয়কে।

এরপর দফায় দফায় সময় দেওয়া হলেও সরকার মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আলোকে ওই বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশ না করায় গত ৮ ডিসেম্বর দুই সচিবকে তলব করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

বিচারকদের চাকরিবিধি প্রকাশে এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকবার সময় পেয়েছে সরকার। প্রতি বার গেজেট প্রকাশের জন্য রাষ্ট্রপক্ষের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে সময় দিয়ে চলেছে আপিল বিভাগ।

আজকের বাজার: আরআর/ ০৬ আগস্ট ২০১৭