বুদ্ধিজীবী হত্যাকারীদের ফেরত পাঠাতে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের প্রতি মোমেনের আহ্বান

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন আজ যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ১৯৭১ সালে বুদ্ধিজীবী হত্যার জন্য দোষী সাব্যস্ত হওয়া দুই চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীকে দেশে ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে ‘বৈশ্বিক সাফল্যের জন্য বাংলাদেশের যুব কর্মশক্তিকে উজ্জীবিতকরন’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি বলেন, ‘আমরা চাই যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ওই দুই খুনিকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাক, যাতে তাদের বিচারের মুখোমুখি করা যায়।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, যুক্তরাজ্য থেকে দন্ডিত যুদ্ধাপরাধী চৌধুরী মুঈন উদ্দিন এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে আশরাফুজ্জামান খানকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। মোমেন বলেন, তারা (খুনি) সেখানে (যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে) ইসলামিক প্রতিষ্ঠানের নেতা সেজে বসেছে, কিন্তু তারা তো খুনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওই দুই খুনিকে নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন করার জন্য গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানান, যাতে ওই স্থানের জনগণ জানতে পারে যে খুনিরা তাদের আশেপাশে অবাধে বসবাস করছে। আজ থেকে ৫২ বছর আগের ১৪ ডিসেম্বর দেশের ইস্পিত বিজয়ের মাত্র দু’দিন আগে, দখলদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাদের স্থানীয় দোসর আল-বদর, আল-শামস ও রাজাকারদের যোগসাজশে সদ্য উদীয়মান জাতি বাংলাদেশকে পঙ্গু করার জন্য দেশের সবচেয়ে বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল। মোমেন বলেন, আমার জানামতে, এ ধরনের বর্বরতা (বুদ্ধিজীবী হত্যা) পৃথিবীর কোথাও দেখা যায়নি। বিশেষ যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়জন শিক্ষক, ছয় সাংবাদিক এবং তিনজন ডাক্তারসহ ১৮ জন বুদ্ধিজীবীকে অপহরণ ও হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করার পর, মুঈন ও আশরাফকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের পরপরই, যখন বাংলাদেশ যুদ্ধে বিজয় অর্জন করে, কুখ্যাত আল-বদর বাহিনীর নেতা মুঈন বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যান এবং যুক্তরাজ্যে মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতা হিসাবে আবির্ভূত হন। তার দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর, বাংলাদেশ মুঈনকে গ্রেফতারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ পুলিশ সংস্থা- ইন্টারপোলের প্রতি রেড এলার্ট জারি করার অনুরোধ জানায়। আর আশরাফুজ্জামান তৎকালীন জামায়াত-ই-ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের একজন নেতা ছিলেন এবং তারপর আল-বদরের কমান্ডার হয়েছিলেন। আল-বদর হচ্ছে,  ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী নিধনের জন্য পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহায়তায় জামায়াত কর্তৃক গঠিত একটি ডেথ স্কোয়াড। আলবদর কমান্ডার হিসেবে আশরাফুজ্জামান শুধু বুদ্ধিজীবীদের অপহরণ ও গণহত্যায় সহায়তা করেনি, নিজে মিরপুরের বধ্যভূমিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাত অধ্যাপককে গুলি করে হত্যা করেছিল। (বাসস)