ব্যাংকের আমানতের সুদহারের ব্যবধান বেড়েই চলছে

বাংলাদেশ ব্যাংকের স্প্রেড সীমা  নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও  তা মানছেনা  স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকসহ দেশের দশ ব্যাংক। গত মার্চ শেষে  এ ব্যাংকগুলোর ঋণ ও আমানতের সুদহারের ব্যবধান (স্প্রেড) ৫ শতাংশের উপরে ছিল।

সবচেয়ে বেশি স্প্রেড রয়েছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ডের। এর আগেও বিদেশি এই ব্যাংকটিকে স্প্রেড অমান্য করতে দেখা যায় । বেশিরভাগ বিদেশি ব্যাংক বরাবরই স্প্রেড নির্দেশনা অমান্য করে আসছে । প্রতিবেদনের তথ্যমতে, স্প্রেড ৫ শতাংশীয় পয়েন্টের ওপরের বিদেশি ব্যাংকগুলোর মধ্যে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, সিটি  ব্যাংক এনএ, উরি ব্যাংক  এবং এইচএসবিসি।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায়, স্প্রেড অমান্যকারী ব্যাংকের তালিকায়  দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বেসরকারি খাতের ব্র্যাক ব্যাংক। এছাড়াও অন্যান্য  বেসরকারি ব্যাংকগুলো  হলো ব্র্যাক ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় স্প্রেড সীমা পাঁচ শতাংশের নিচে রখার নির্দেশ থাকলেও এসব ব্যাংকগুলোর স্প্রেড বরাবরই পাঁচ শতাংশের ওপরে থাকে। কখনও কখনও দুই-একটি ব্যাংক সুদের হারের পার্থক্য কিছুটা কমিয়ে আনলেও তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত সীমার বাইরে চলে যায়। গত মার্চ মাসে এ প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিদেশি খাতের পাঁচটি ব্যাংকের স্প্রেড পাঁচ শতাংশীয় পয়েন্টের ওপর অবস্থান করছে। গত মার্চ শেষে বিদেশি ব্যাংকগুলো ঋণের ক্ষেত্রে গড়ে আট দশমিক ১০ শতাংশ হারে সুদ আদায় করেছে। আমানতের বিপরীতে দিয়েছে মাত্র এক দশমিক ৭০ শতাংশ সুদ; স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ছয় দশমিক ৪০ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, ঋণ ও আমানতের সুদহারের ব্যবধান বা স্প্রেড পাঁচ শতাংশের নিচে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক বারবার নির্দেশনা দিয়ে আসছে। কিন্তু তা মানছে না বেশ কয়েকটি ব্যাংক। ১০টি ব্যাংক আমানতকারীদের ঠকিয়ে ঋণের সুদ বেশি নিয়েছে। এসব ব্যাংক আমানতকারীদের সামান্য সুদ দিলেও ঋণের সুদ নিচ্ছে চড়া দামে।

ব্যাংক খাতের বিশ্লেষকরা বলছেন, যদিও ইতোমধ্যে অধিকাংশ বেসরকারি ব্যাংক তাদের স্প্রেডসীমা কমিয়ে আনছে। তবে বিদেশি ব্যাংকগুলো স্প্রেড কমাচ্ছে না। গত মার্চে পাঁচটি বেসরকারি ব্যাংক স্প্রেডসীমা অমান্য করেছে। গত বছরে ব্যাংকগুলো আমানতের সুদহার কমালেও চলতি বছরের শুরু থেকে ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকটে আমানতের সুদহার বাড়ছে। তবে বিদেশি ব্যাংকগুলোর  স্প্রেড কোনোভাবেই কমছে না। এসব ব্যাংকের স্প্রেড কমানো উচিত। বর্তমানে ব্যাপকহারে আমদানি ব্যয় বাড়ার কারণে অধিকাংশ ব্যাংকে তারল্য সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে আমানত সংগ্রহে ঝুঁকছে ব্যাংকগুলো। পাশাপাশি বেড়েছে ঋণের সুদহারও।এখন  কোনো ব্যাংকের ঋণের সুদহার  সিঙ্গেল ডিজিটে নেই।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড আমানতের বিপরীতে গড়ে এক দশমিক ২৬ শতাংশ সুদ দিয়েছে। আর ঋণের ক্ষেত্রে ব্যাংকটি ৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ সুদ নিয়েছে। বিদেশি খাতের এ ব্যাংকটির স্প্রেড দাঁড়িয়েছে সর্বোচ্চ আট দশমিক ২৩ শতাংশ। এছাড়া বেসরকারি খাতের ব্র্যাক ব্যাংক আমানতের বিপরীতে সুদ

দিয়েছে চার দশমিক ৩১ শতাংশ। আর ঋণের বিপরীতে সুদহার ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ। বেসরকারি খাতের এ ব্যাংকের স্প্রেড দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

অন্যদিকে, সার্বিকভাবে বেসরকারি ব্যাংকের স্প্রেড চার দশমিক ৩১ শতাংশ। বেসরকারি ব্যাংকগুলো আমানতের বিপরীতে পাঁচ দশমিক ৪৪ শতাংশ সুদ দিয়েছে। অন্যদিকে ঋণের বিপরীতে আদায় করেছে ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদ।

তথ্যমতে, গত মার্চ শেষে ব্যাংকগুলো ঋণের ক্ষেত্রে গড়ে ৯ দশমিক ৪২ শতাংশ সুদ আদায় করেছে। আমানতের বিপরীতে পাঁচ দশমিক শূন্য এক শতাংশ সুদ দিয়েছে। ব্যাংকগুলোর গড় স্প্রেড দাঁড়িয়েছে চার দশমিক ৪১ পয়েন্ট।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো ঋণের ক্ষেত্রে গড়ে আট দশমিক ৪১ শতাংশ হারে সুদ আদায় করেছে। আর আমানতের বিপরীতে দিয়েছে চার দশমিক ৩৮ শতাংশ সুদ। এক্ষেত্রে স্প্রেড দাঁড়িয়েছে চার দশমিক শূন্য তিন শতাংশ। তবে বিশেষায়িত ব্যাংকের স্প্রেড সবচেয়ে কম; যা মাত্র দুই দশমিক ৮৫ শতাংশ। বিশেষায়িত বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক আমানতের বিপরীতে গড়ে পাঁচ দশমিক ৮৭ শতাংশ সুদ দিয়েছে। আর ঋণের ক্ষেত্রে সুদ নিয়েছে আট দশমিক ৭২ শতাংশ হারে।

জাকির/আরএম