ব্রেক্সিট নীতি নিয়ে মত বিরোধ, পদত্যাগ করলেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র ব্রেক্সিট নীতি নিয়ে মত বিরোধের কারণে পদত্যাগ করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন। সোমবার পার্লামেন্টে মে’র ব্রেক্সিট নীতি নিয়ে দেখা ভাষণের আধঘন্টা আগে তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

এরআগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে বাণিজ্য পরিচালনার ক্ষেত্রে থেরেসা মে যে প্রস্তাব দিয়েছে তার উপর অনাস্থা জানিয়ে পদত্যাগ করেন ব্রেক্সিট বিষয়ক মন্ত্রী ডেভিড ডেভিস। তিনি জানান, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডে নীতি নীতি নিয়ে এগোতে চান, তাতে ইইউ থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে আসা কখনোই সম্ভব নয়।

ব্রেক্সিট ইস্যু নিয়ে ক্যাবিনেটের গুরুত্বপূর্ণ দুইজন মন্ত্রীর ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে পদত্যাগের কারণে কিছুটা চাপের মুখে পড়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে।তবে, মিসেস মে মনে করেন, তার গৃহীত পরিকল্পনাই হবে ২০১৬ সালের ব্রেক্সিট পরবর্তী সবেচেয়ে সম্মানজনক ফলাফল।

ব্রিটেনের ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ত্যাগের প্রশ্নে যখন গণভোট হয়েছিল – তখন এই বরিস জনসনই ছিলেন ইইউ ত্যাগের সমর্থক শিবিরের প্রধান নেতা। ২০১৬ সালের ওই গণভোটে ইইউ ত্যাগের পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পড়ে।

এর পর সে সময়কার প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন পদত্যাগ করেন, এবং টেরিজা মে নতুন প্রধানমন্ত্রী হয়ে বরিস জনসনকে তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী করেন।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে তার নতুন ব্রেক্সিট বিষয়ক পরিকল্পনা প্রকাশ করার পর থেকেই তার কনসারভেটিভ পার্টির এমপিদের একাংশের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়।

বলা হয়, বরিস জনসন এবং তার অনুগামীরা ইইউ থেকে ব্রিটেনের প্রায় সম্পূর্ণ বিচ্ছেদের পক্ষে, যাতে ইউরোপ থেকে অবাধ অভিবাসন এবং ব্রিটেনের ওপর ব্রাসেলসের কর্তৃত্ব বন্ধ হয়। এদের বলা হয় `হার্ড বেক্সিট` গ্রুপ ।

আর অন্য পক্ষকে বলা হয় `সফট ব্রেক্সিট` পক্ষ – এরা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্নতার বিরোধী, তারা চান ইউরোপীয়ান ইউনিয়নে থেকে ব্রিটেন যে সুবিধাগুলো পায় সেগুলো অব্যাহত রাখতে – যাতে তাদের ভাষায় ব্রিটেনে কর্মসংস্থান এবং ইইউ-ব্রিটেন ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

তাই গণভোটের পর থেকেই ব্রিটেনে এ বিতর্ক চলছে যে ব্রিটেন ইউরোপ থেকে কতটুকু আলাদা হবে এবং কিভাবে তার বাস্তবায়ন হবে। ব্রিটেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ত্যা্গ করবে ২০১৯ সালের ২৯শে মার্চ।

এখন টেরিজা মে ব্রেক্সিটের যে পরিকল্পনা দিয়েছেন তার সমালোচনা করে কড়া ব্রেক্সিটপন্থীরা বলছেন, এতে ইউরোপকে খুব সহজে অনেক বেশি ছাড় দেয়া হয়েছে।

এর পর প্রথম পদত্যাগ করেন ব্রেক্সিটমন্ত্রী ডেভিড ডেভিস।

তার কথা, এ পরিকল্পনায় তিনি বিশ্বাস করেন না, তাই এর পক্ষ নিয়ে ব্রাসেলসের সাথে ব্রেক্সিটের আলোচনায় নেতৃত্ব দেয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়।

এর কয়েক ঘন্টা পরই পদত্যাগ করেন ব্রেক্সিটের পক্ষের মূল নেতা বরিস জনসন – যিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েও টেরিজা মে`র ব্রেক্সিট পরিকল্পনার সমালোচনা করে চলেছিলেন, কিন্তু সরকার ছেড়ে যান নি।

বিবিসির বিশ্লেষক লরা কুয়েন্সবার্গ বলছেন, বরিস জনসনের বিদায়ের মধ্যে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে এক অপ্রস্তুত এবং কঠিন অবস্থায় পড়ে গেছেন, এবং এটা এখন পূর্ণাঙ্গ সংকটে পরিণত হয়েছে।

তিনি বলছেন, এর ফলে হয়তো কড়া ব্রেক্সিটপন্থী শিবির থেকে মিসেস মে`র নেতৃত্বের প্রতি চ্যালেঞ্জ আসতে পারে। তাকে এই বার্তা দেয়া হয়েছে যে তিনি তার পরিকল্পনা ত্যাগ না করলে একের পর এক মন্ত্রী পদত্যাগ করবেন।

বিরোধীদল লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন বলেছেন, মি. জনসন এবং মি ডেভিস সরকারের ডুবন্ত জাহাজ থেকে নেমে গেছেন, এবং মিসেস মে তার দলে ঐক্য আছে বলে যে বিভ্রম তৈরি করে রেখেছিলেন – তা ভেঙে পড়েছে।

এরকম সংকটের মধ্যে টেরিজা মে কিভাবে তার সরকারকে টিকিয়ে রাখেন এটাই এখন দেখার বিষয়।

সূত্র : বিবিসি