ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত:কিশোরীদের আতঙ্ক

বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকার পরিবারগুলো তাদের সন্তানদের পাচারের কবল থেকে বাঁচাতে বাল্যবিবাহের পথ বেছে নিচ্ছেন। এ ছাড়া সীমান্ত অঞ্চলগুলো কিশোরীদের কাছে আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠেছে। কারণ প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করা ছাড়াও অপহরণ করে বা মাদক খাইয়েও মেয়েদের নিয়ে যাচ্ছে পাচারকারীরা। ভারতে শিশুদের অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন বেসরকারি সংস্থা ‘জাস্টিস অ্যান্ড কেয়ার’ এ তথ্য জানিয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত এলাকার আটটি গ্রামে সংস্থাটির চালানো এক সমীক্ষায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। মঙ্গলবার ১৬ মে এ সমীক্ষাটি প্রকাশ করা হয়।
বুধবার ১৭ মে যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম বিবিসি এ খবর প্রকাশ করেছে। ‘জাস্টিস অ্যান্ড কেয়ার’ নামের সংস্থাটি বলছে, শিশু-কিশোরীরা পাচার হতে পারে এই আশঙ্কা করলেও তারা পুলিশ অথবা সীমান্তরক্ষীদের না জানিয়ে ভয়ে চুপ করে থাকেন।

ভারত-বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী আটটি গ্রামের প্রায় ৩০০ কিশোরী এবং প্রায় দেড় শ মায়ের সঙ্গে কথা বলে সমীক্ষকরা জানিয়েছেন, মূলত প্রলোভন দেখিয়ে ভারতের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলো থেকে এবং বাংলাদেশ থেকে ভারতে, শিশু-কিশোরী পাচার হচ্ছে।

‘জাস্টিস অ্যান্ড কেয়ার’ সংস্থাটির গবেষণা পরিচালক সায়ন্তনী দত্ত বলছিলেন, ‘আমাদের সমীক্ষার একটা উদ্দেশ্য ছিল এটা জানার যে সীমান্ত অঞ্চলের মানুষ পাচারের ব্যাপারে কতটা জানেন। আমরা দেখেছি তারা সবকিছুই জানেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও চুপ করে থাকতে বাধ্য হন। পুলিশ বা সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে পাচারের ব্যাপারে জানাতে চান না ভয়ে। পাচারকারী বা তাদের দালালরা ওই এলাকাতেই ঘোরে আর তারা ভীষণ ক্ষমতাবান। তাদের যদি শাস্তি না হয়, তখন যিনি খবর দিয়েছেন তাকেও বিপদের মুখে পড়তে হবে। এই আশঙ্কাতেই চুপ করে থাকেন সবাই।’

এ ছাড়াও সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, সীমান্ত অঞ্চলটি মেয়েদের কাছে, বিশেষত কিশোরীদের কাছে আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠেছে। কারণ প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করা ছাড়াও অপহরণ করে বা মাদক খাইয়েও মেয়েদের নিয়ে যাচ্ছে পাচারকারীরা। অনেক মেয়েই সমীক্ষকদের জানিয়েছে যে, তারা স্কুলে বা প্রাইভেট টিউশনি পড়তে যেতেও ভয় পায়। আবার বাংলাদেশ থেকে যাদের পাচার করে ভারতে নিয়ে আসা হয়েছে, তাদের অনেকের সঙ্গে কথা বলে সমীক্ষকরা দেখেছেন, পাচার হওয়ার বিষয়টি তারা বুঝতেই পারেনি। কিশোরীরা অনুমান করতে পারেনি যে তাদের অন্য দেশে আনা হয়েছে।
সমীক্ষক দল ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিণী বা বিএসএফের কাছে সুপারিশ করেছে যে, সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে আরও সংবেদনশীল হতে হবে শিশু পাচারের বিষয়ে। যেভাবে সীমান্ত এত দিন পাহারা দিয়ে এসেছে, সে পদ্ধতি বদল করতে হবে। সীমান্ত চৌকিগুলোকে পাচারের শিকার হওয়া শিশু-কিশোরীদের কাছে আরও মিত্রভাবাপন্ন করে তুলতে হবে। বর্ডার গার্ডস বাংলাদেশের সঙ্গেও যৌথভাবে পাচার রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জাস্টিস অ্যান্ড কেয়ারকে দিয়ে এই সমীক্ষাটি বিএসএফই করিয়েছে।

আজকের বাজার:এলকে/এলকে/১৭ মে ২০১৭