ভ্রাম্যমাণ আদালতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাখতে আপিল

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে জরুরি বিচারিক বিধানসংক্রান্ত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষে। রোববার (১৪) সকালে রাষ্ট্রপক্ষে এই আবেদন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু। তিনি জানান, আজই (রবিবার) চেম্বার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের আদালতে আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে।

এর আগে গত ১১ মে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা-সংক্রান্ত আইনের কয়েকটি ধারা অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাসের হাইকোর্ট বেঞ্চ। রায়ের পর মামলার আইনজীবীরা জানান, এর ফলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার আর কোনো সুযোগ নেই।

এ-সংক্রান্ত তিনটি পৃথক রিট আবেদনের ভিত্তিতে জারি করা রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে আদালত এ রায় দেন। আদালতের রায়ে ২০০৯ সালের ভ্রামমাণ আদালত আইনের মোট ৯টি ধারা আদালত অবৈধ ঘোষণা করেছেন। এসব ধারাগুলো হলো- ৫, ৬ (১) (২) (৪), ৭, ৮ (১), ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩ ও ১৫। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজিম। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু।

মোবাইল কোর্ট আইনের ৫ ধারায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা-সংক্রান্ত বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। ৬ (১), ৬ (২), ৬ (৪), ৭, ৮ (১), ৯, ১০ ধারায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা পদ্ধতি, ১১ ধারায় জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ক্ষমতা, ১৩ ধারায় আপিলসংক্রান্ত বিধার রয়েছে। আর ১৫ ধারায় তফসিল সংশোধনে সরকারের ক্ষমতার বিধান উল্লেখ করা হয়েছে।

আদালত বলেছেন, মোবাইল কোর্ট আইনের এসব ধারাকে মাসদার হোসেন মামলার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। একই সঙ্গে সংবিধানের মৌলিক দুটি স্তম্ভ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ক্ষমতার স্বতন্ত্রীকরণ নীতির পরিপন্থি। তাই এ ধারাগুলোকে অসাংবিধানিক ও বাতিল ঘোষণা করা হলো। এসব ধারা অবৈধ ঘোষণা করায় কার্যত মোবাইল কোর্ট আইনের প্রয়োগই এখন আর সম্ভব নয় বলে রায়ের পর জানান ব্যারিস্টার হাসান এস এম আজিম। তিনি বলেন, ‘মোবাইল কোর্ট আইনের বিধান সম্পর্কে আজকে হাইকোর্ট বিভাগ বলেছেন এটা অসাংবিধানিক। এসব ধারা অবৈধ ঘোষণার পর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ধারা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা আর সম্ভব হবে না। কারণ মোবাইল কোর্ট পরিচালনার যে আইন ছিল সেটার অপারেটিভ পার্ট বাতিল হয়ে গেছে। এখন আর মোবাইল কোর্টের ওই ধারাগুলো কাজ করবে না।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ভবন নির্মাণ আইনের কয়েকটি ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০১১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর এসথেটিক প্রপার্টিজ ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান খানকে ভ্রাম্যমাণ আদালত ৩০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। সে বছরের ২০ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পান তিনি। এরপর ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের (মোবাইল কোর্ট অ্যাক্ট-২০০৯) কয়েকটি ধারা ও উপধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ১১ অক্টোবর কামারুজ্জামান হাইকোর্টে রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১১ সালের ১৯ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল দেন।

রুলে রিট আবেদনকারীর (কামরুজ্জামান) সাজা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়। পাশাপাশি সাজার আদেশ স্থগিত করা হয়। এ ছাড়া ভবন নির্মাণ আইনের কয়েকটি ধারা লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০১১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর টয়নবি সার্কুলার রোডে অবস্থিত এক বাড়ির মালিক মো. মজিবুর রহমানকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ৩০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
আইনের বিধান চ্যালেঞ্জ ও অর্থ ফেরতের নির্দেশনা চেয়ে ওই বছরের ১১ ডিসেম্বর রিট করেন মজিবুর। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই দিন হাইকোর্ট রুলসহ সাজার আদেশ স্থগিত করেন। রায়ে আদালত তার জমিরানার ১০ লাখ টাকা ৯০ দিনের মধ্যে ফেরতের নির্দেশ দেন।

এ ছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের কয়েকটি বিধানের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১২ সালে ২ মে দিনাজপুরের বেকারি মালিকদের পক্ষে মো. সাইফুল্লাহসহ ১৭ জন আরেকটি রিট করেন। এতে বেকারিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ক্ষেত্রে খাদ্য বিশেষজ্ঞ ও পরীক্ষার জন্য যন্ত্রপাতি সঙ্গে রেখে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা চাওয়া হয়। শুনানি নিয়ে ওই বছরের ৮ মে হাইকোর্ট রুলসহ অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেন। সেই তিনটি রুলের উপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে ১১ এপ্রিল এ রায় দেন।

আজকের বাজার:এলকে/এলকে/ ১৪ মে ২০১৭