মাংস আমদানি করবে না সরকার

দেশীয় খামারিদের কথা মাথায় রেখে সরকার মাংস আমদানি করবে না বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ। প্রাণিসেবা সপ্তাহ উপলে বুধবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে নারায়ন বলেন, গতকাল (মঙ্গলবার) বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে, তিনিও না আনার প।ে সরকারিভাবে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ যে আমরা মাংস আমদানি করব না।
তিনি বলেন, আমাদের (বছরে) ৭৯ লাখ টন মাংস প্রয়োজন, আমাদের অলরেডি ৭১ লাখ টন উৎপাদন হয়েছে। মাংস আনলে আমার খামারিরা মারা পড়বে, এই শিল্পটা ধ্বংস হয়ে যাবে।”
ট্যারিফ কমিশনের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশে প্রায় ২০ টন বা ২০ হাজার কেজি গরুর মাংস আমদানি হয়, যা ভারত, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া ও অন্যান্য দেশ থেকে হিমায়িত অবস্থায় আসে।
আমদানি করা এসব হিমায়িত মাংসের দাম স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত মাংসের বাজারমূল্য থেকে অর্ধেক বলে জানানো হয় এসব প্রতিবেদনে।
ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে কম দামে মাংস আমদানি হওয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ বলেন, “মাংস আমদানির বিষয়টি আমরা জানি না, এ বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নেব।

“যেহেতু আমরা (মাংস আমদানি) চাচ্ছি না এবং এতে (মাংস আমদানি) যদি আইনে বাধা না থাকে তবে সেটা প্রতিরোধ করতে হবে, আইন পরিবর্তন করতে হবে। সুযোগ থাকলে সেই সুযোগ রোধ করার ব্যবস্থা নিতে হবে।”

গত বছর কোরবানির ঈদের আগে এক সংবাদ সম্মেলন করে পাশের দেশ ভারত থেকে হিমায়িত গোমাংস আমদানির ‘উদ্যোগের’ বিরোধিতা করে ঢাকা মহানগর মাংস ব্যবসায়ী সমিতি।

দেশীয় গরু ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রার দাবি জানিয়ে সংগঠনটির নেতারা ওই সময় অভিযোগ করে বলেন, ‘কিছু অর্থলোভী ব্যবসায়ী’ ভারতীয় গরুর পাশাপাশি মাংস আমদানির ‘পাঁয়তারা’ করছে।

তাদের ভাষ্য, ভারত থেকে মাংস এলে প্রথমে হয়ত কম দামে পাওয়া যাবে, কিন্তু পরে দামের অবস্থা হবে পেঁয়াজের মত। তখন তাদের হাতে সব চাবিকাঠি থাকবে।

হিন্দুপ্রধান রাষ্ট্র ভারতের অনেক রাজ্যে গরু জবাই ও মাংস বিক্রি নিষিদ্ধ হলেও জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার হিসাব অনুযায়ী গোমাংস রপ্তানিতে ভারত বিশ্বে দ্বিতীয়।

আইন অনুযায়ী ভারত থেকে গরু আমদানির সুযোগ না থাকলেও মাংসের জন্য বাংলাদেশে বিক্রি হওয়া গরুর একটি বড় অংশ ভারত থেকেই আসে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব মাকসুদুল হাসান খান বলেন, আমদানি নীতির বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আমাদের মতামত চেয়েছে, আমরা বলেছি মাংস আমদানি করার দরকার নেই।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আইনুল হক বলেন, বেশি দামে মাংস খাচ্ছি এটা বড় বিষয় নয়। এটা আমাদের সামাজিক দায়িত্ব। এখন সাড়ে পাঁচ লাখ লোক গবাদিপশু পালন করছে। এই বাজারটা নষ্ট করে ফেললে আমাদের সমাজটা কোন অবস্থায় পড়বে এটা একটা চিন্তা।
প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে মাংসের দাম কমানোর বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমরা সচেতন আছি জনগণ যাতে স্বল্প ও ন্যায্য মূল্যে মাংস খেতে পারে এবং খামারিরা টিকে থাকতে পারে।

ব্রাহমা জাতের গরু আমাদের দেশে আনা হয়েছে, আমাদের দেশে বাচ্চা হয়ে দুই বছরে ৮০০ কেজিতে পৌঁছেছে। এই জাতের গরুতে এক টন পর্যন্ত মাংস হয়। মাংসের চাহিদা পূরণের জন্য অধিক ওজনের গরুগুলোর দিকে নজর দিচ্ছি।

চাঁদাবাজিসহ নানা কারণে মাংসের দাম বেড়েছে বলে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, এ বিষয়ে কি পদপে নেবেন- এই প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, এটা শুধু এককভাবে আমাদের মন্ত্রণালয়ের উপর নির্ভর করবে না। এরসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জড়িত। এই ভিত্তিতে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করে আমরা পদপে নেব।

ভ্যাটেরিনারি হাসপাতালে মানুষ গবাদিপশুর চিকিৎসা সঠিকভাবে পায় না বলে অভিযোগের বিষয়ে নারায়ন বলেন, মাঠ পর্যায়ে আমাদের কর্মকর্তারা সেবামুখী। কিন্তু লোকবল সঙ্কট রয়েছে, আমাদের জনবল বাড়ানো দরকার।

জনগণের দোরগোড়ায় দ্রুততম সময়ে সেবা পৌঁছে দেওয়ার ল্যকে সামনে রেখে আগামী ২০ থেকে ২৫ জানুয়ারি দেশব্যাপী দ্বিতীয়বারে মতো প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদযাপন করবে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।

মন্ত্রী জানান, এবারের সেবা সপ্তাহের স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে- বাড়াবো প্রাণিজ আমিষ, গড়বো দেশ স্বাস্থ্য মেধা সমৃদ্ধির বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, আগামী ২০ জানুয়ারি বিকাল ৩টায় রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সেবা সপ্তাহের উদ্বোধন করবেন।

এর আগে ২০ জানুয়ারি সকালে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে মানিক মিয়া এভিনিউ হয়ে সেচ ভবন ও সংসদ ভবনের মেইন গেট হয়ে পুনরায় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর পর্যন্ত র‌্যালি হবে।

প্রাণিসম্পদ বিষয়ক প্রদর্শনী, সভা ও সেমিনার ছাড়াও নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও-এ উন্নত জাতের গবাদি পশু প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে বলে জানান প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী।
আজকের বাজার : ওএফ/ ১৭ জানুয়ারি ২০১৮