মানুষের জীবন ও জীবিকা দুটোই রক্ষা করতে হবে : তথ্যমন্ত্রী

তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে মানুষের জীবন ও জীবিকা দুটোই রক্ষা করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘সরকারকে একই সাথে দুটি বিষয়ে ভাবতে হয়। মানুষের জীবন যেমন রক্ষা করতে হবে, তেমনি মানুষের জীবিকাও রক্ষা করতে হবে। আর মানুষের জীবন এবং জীবিকা দুটোই রক্ষাকল্পেই আমরা কাজ করছি।’

ড. হাছান বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে দেশে ১৭ লক্ষ টন খাদ্য মজুদ আছে। ইতোমধ্যে ১ লক্ষ টন খাদ্য বিতরণ করা হয়েছে এবং আরো ৬ লক্ষ টন খাদ্য শস্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

তিনি আজ বিকেলে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে কোভিট-১৯ সংক্রমণে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় ত্রাণ ও অন্যান্য বিষয়ের সমন্বয়ের লক্ষ্যে আয়োজিত সভাশেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে একথা বলেন।
এর আগে, করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় প্রশাসনের সাথে চট্টগ্রামের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, স্বাস্থ্য বিভাগসহ বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারদের নিয়ে তথ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে এক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভা পরিচালনা করেন কোভিট-১৯ মোকাবেলায় চট্টগ্রাম জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দিন। এতে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি, ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সরকার গত কয়েক বছর ধরে ৫০ লাখ পরিবারকে ১০ টাকা দরে মাসে ৩০ কেজি করে চাল বছরের সাত মাস বিতরণ করে আসছে। এ ধরণের আরো পঞ্চাশ লাখ কার্ড করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, এক কোটি কার্ডধারী মানে পাঁচ কোটি মানুষ। সমগ্র বাংলাদেশে সরকারিভাবে দেশের এক-তৃতীয়াংশ মানুষকে সামাজিক সুরক্ষা বলয়ের আওতায় আনা হয়েছে। এর বাইরে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, স্বামী পরিত্যক্তা ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, পঙ্গু ভাতাসহ নানা ধরণের ভাতা এবং সরকারের ১৪৪টি কর্মসূচির মাধ্যমে আরো এক কোটি মানুষ সামাজিক সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে আছে।

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার সাথে সাথেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করে। যে কারণে আমাদের দেশে করোনা ভাইরাসের পরিস্থিতি আল্লাহর রহমতে এখনো অনেক উন্নত দেশের তুলনায় কিছুটা ভালো অবস্থায় আছে।’
তাই বলে সরকার বসে নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে যেকোন পরিস্থিতি হতে পারে সেজন্য সরকার ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। যে সমস্ত দেশে নাজুক পরিস্থিতি হয়েছে, সেরকম হলে আমাদের কি করতে হবে সেটি নিয়েও আমরা নানা প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। তারই অংশ হিসেবে আজকের এই সমন্বয় সভা করা হয়েছে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, কোভিট-১৯ মোকাবেলায় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে আজকের সমন্বয় সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার বৈঠকে অনেক কিছু উঠে এসেছে। চট্টগ্রাম জেলায় এখনো পর্যন্ত করোনা পরিস্থিতি ঢাকা অঞ্চলের চেয়ে অনেক ভালো আছে। আমরা যাতে এই পরিস্থিতি রক্ষা করে যারা ইতিমধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন তাদেরকে সুস্থ করে তুলতে পারি, সেই জন্য কিভাবে করোনা রোগীদের আলাদা

করে চিকিৎসা দেয়া যায়, ভবিষ্যতে আরো রোগী বাড়লে কিভাবে তাদের চিকিৎসা দেয়া হবে এবং যারা ভালো আছেন তাদের কিভাবে স্বাস্থ্য সুরক্ষা দেয়া যায় সেসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
চট্টগ্রামেই প্রথম সব জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে সমন্বয় সভা হয়েছে যেখানে সবাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রেখেছেন বলে জানান তিনি।
‘অসহায় মানুষের মাঝে সরকারের ত্রাণ বণ্টনে চট্টগ্রামের বিভিন্ন সংসদ সদস্যদের সম্পৃক্ত করা হচ্ছে না, তাদের এড়িয়ে চলা হচ্ছে এমন ধরণের অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে এবং এই দূরত্ব ঘুচিয়ে সমন্বয় নিশ্চিত হয়েছে কি না’ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আজকে একটি মাস দেশের সমস্ত কর্মকান্ড বন্ধ। বাংলাদেশে একটি মানুষও না খেয়ে মৃত্যুবরণ করেনি। এটিই হচ্ছে সরকারের সফলতা। সরকারি সাহায্যের বাইরে আমাদের সংসদ সদস্য, অন্যান্য জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ এবং অবস্থা-সম্পন্ন বিত্তশালীরা সহায়তা দিচ্ছেন। সুতরাং সমস্ত কিছু সমন্বয় করার জন্যই আজকের এই বৈঠক।

ভিআইপিদের চিকিৎসার জন্য সরকার আলাদা ব্যবস্থা করেছে এ ধরণের একটি সংবাদ প্রকাশ হয়েছে বিভিন্ন অনলাইনে, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, সরকারের এ ধরণের কোন সিদ্ধান্ত নাই এবং ছিল না।
এ নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আজকে পরিস্কার করেছেন জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি জানি, দুএকটি অনলাইনে এই ধরণের সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে। এটিকে ভালোমত যাচাই-বাছাই না করে যারা এই ধরণের সংবাদ পরিবেশন করেছেন তারা সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। এই ধরণের দায়িত্বহীনতার পরিচয় দেওয়া দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা নয়।

তিনি বলেন, ‘আমি আশা করবো দেশের এই দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে আমরা সবাই নিজে নিজে দায়িত্বশীল আচরণ করবো এবং সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে আমরা যতœশীল হবো।

‘নিম্ন আয়ের মানুষদের ত্রাণ দেয়া হলেও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ব্যাপারে কি ভাবা হচ্ছে এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নে’ পাশে উপস্থিত ভূমি মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাতের আঁধারে তাদের ঘরে ত্রাণ পৌঁছানো হচ্ছে। হয়তো সবার কাছে পৌঁছাচ্ছে না। তবে, বাংলাদেশের মানুষের সামাজিক বন্ধনটা অনেক বেশি। এই সময়ে বুঝা যাচ্ছে মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য। এটা এই সংকটের মধ্যে প্রমাণ হয়েছে।
‘আমরা সবাই ইউনাইটেড হয়েছি। মানুষকে কত দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফেরত নেয়া যায় সেজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দিনরাত পরিশ্রম করছেন’ বলেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী।

সমন্বয় সভায় আনিসুল ইসলাম মাহমুদ চৌধুরী এমপি, এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী এমপি, মোসলেম উদ্দিন আহমেদ এমপি, নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী এমপি, মোস্তাফিজুর রহমান এমপি, আবু রেজা নদভী এমপি, ওয়াসিকা আয়েশা খানম এমপি, খাদিজাতুল আনোয়ার সনি এমপি, বিভাগীয় কমিশনার এবিএম আজাদ, জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবির, সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।