মুদ্রানীতি ঘোষণা আজ দুপুর আড়াইটায়

ঋণ বিতরণের আইনি সীমা থাকলেও কোনো কোনো ব্যাংক সে সীমা লঙ্ঘন করে ঋণ বিতরণ বাড়িয়েছে। তাই দ্বিতীয়ার্ধের নতুন মুদ্রানীতিতে ঋণ প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায় বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে নির্বাচনী বছরে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে সরকারি খাতে ঋণ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা বাড়তে পারে। তাই সীমা কমানো যুক্তিযুক্ত হবে না বলেও মনে করছেন অনেকে।

আজ সোমবার দুপুর আড়াইটায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণা করবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির।

অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণ বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ১৬ দশমিক ২ শতাংশ ধরা হলেও চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের শুরু থেকেই বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়তে থাকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ হিসেবে ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ১৮ দশমিক ১৩ শতাংশ।

ধারণা করা হচ্ছে ঋণ প্রবাহ নিয়ন্ত্রণের কৌশল হিসেবে প্রথাগত ব্যাংকগুলোর ঋণ-আমানত অনুপাত (এডিআর ) ৮৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৮০ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং ইসলামী ব্যাংকের ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৮৮ শতাংশ করতে পারে বাংলাদেশ ব্যাংক।

গত ৩ জানুয়ারির ব্যাংকার্স সভায়ও বলা হয়েছিল এডিআর কমানো হতে পারে। যদিও এখন এডিআরে কোনো পরিবর্তন নাও আসতে পারে বলে ধারনা করছেন অনেকেই।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের ভাষ্য, মুদ্রা সরবরাহ ও বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি এমনভাবে করতে হবে, যাতে মূল্যস্ফীতি না বাড়ে। তিনি ঋণের পোর্টফোলিওতে আরও সতর্ক দৃষ্টি দেওয়ার পারামর্শ দেন।

তিনি বলেন, ঋণের মান নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠছে, খেলাপি ঋণ বাড়ছে। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের ম্যানেজমেন্ট অব ক্রেডিট মার্কেট এবং সুশাসন বাড়াতে হবে।

তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি হিসাবে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি যাতে আরো একটু চাঙ্গা হয় সে বিষয়টা দেখা দরকার। এ খাতে ইতোমধ্যে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ঋণ চলে যাওয়ায় এ বিষয়ে সংকোচন করার কথা আসছে। তবে আমার মনে হয় সংকোচনের পরিবর্তে এসব ঋণ যাতে উৎপাদনমুখী খাতে যায় এবং অন্যদিকে না যায় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এ খাতে ঋণ কমানো মোটেও ঠিক হবে না।

ঋণ বিতরণের সীমা না কমানো জন্য দাবি জানিয়েছে ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশও (এবিবি)। গভর্নরের কাছে পাঠানো চিঠিতে সংগঠনটি বলেছে, নির্বাচনী বছরে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে সরকারি খাতে ঋণ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা বাড়তে পারে। তাই সীমা কমানো যুক্তিযুক্ত হবে না।

এদিকে চাল, পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় বেড়েছে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার। বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, আগামী জুন পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি থাকার কথা পাঁচ দশমিক আট শতাংশের নিচে। কিন্তু এরই মধ্যে তা বেড়ে গেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, ডিসেম্বর মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ; যা নভেম্বরে ছিল ৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ। তবে আলোচ্য মাসে খাদ্যে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ১৩ শতাংশ; যা নভেম্বরেও ছিল ৭ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ।

ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, এবার নির্বাচনী বছর। নির্বাচনী বছরে সাধারণত সব দেশেই মুদ্রা সরবরাহ বেড়ে যায়। এর ফলে মুদ্রাস্ফীতিটাই একটা বড় সমস্যা হয়ে দেখা দেয়।

তিনি বলেন, এবারের মুদ্রানীতির অনেকগুলো দিকের মধ্যে প্রধানতম দিক হওয়া উচিত মুদ্রাস্ফীতি, যাতে একটা নির্দিষ্ট মাত্রা অতিক্রম করে না যায়।

তবে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, অনেকের ধারণা বেশি ঋণ গেলে মূল্যস্ফীতি দেখা দেবে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি শুধু একটি কারণে বাড়ে না। বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহের পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি নির্ভর করে বাজারমূল্য, যোগাযোগ ব্যবস্থা, চাঁদাবাজি, সিন্ডিকেট প্রভৃতির উপর। সেক্ষেত্রে মুদ্রানীতি সংকোচন বা বাড়লে এটাতে কোনো প্রভাব পড়বে না।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র মতে, আগের মুদ্রানীতিতে চলতি ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ১৬ দশমিক দুই শতাংশ। আর আগামী জুন পর্যন্ত এ খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছিল ১৬ দশমিক তিন শতাংশ। ধারনা করা হচ্ছে নতুন মুদ্রানীতে ঋণের প্রবৃদ্ধি অপরিবর্তীত থাকতে পারে।

প্রতিবছর দুইবার মুদ্রানীতি প্রণয়ন ও প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। অর্থবছরের প্রথম প্রথমার্ধে অর্থাৎ জুলাই মাসে এবং অন্যটি জানুয়ারি মাসে। সাধারণত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, ঋণের প্রক্ষেপণের মাধ্যমে সরকারি-বেসরকারি ঋণের যোগান ধার্য করা এবং মুদ্রার প্রচলন নিয়ন্ত্রণ করতেই মুদ্রানীতি প্রণয়ন করে কেন্দ্রীয় সরকার।

জানা গেছে, নতুন মুদ্রানীতি তৈরির প্রাথমিক কাজও শেষে করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ইতোমধ্যে গভর্নর ফজলে কবির বিভিন্ন সংগঠন, অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, কেন্দ্রীয় ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের সাবেক ও বর্তমান ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।