রমজান শুরুর আগেই সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে স্থাপিত গ্রিক দেবী থেমিসের ‘মূর্তি’ অপসারণের আহবান জানিয়েছে কওমী মাদরাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। এ সময়ের মধ্যে মুর্তি না সরালে আবারও রাস্তায় নামার হুমকি দিয়েছে সংগঠনটি।
আজ ১৮ মে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো হেফাজতে ইসলামের মহাসচিব জুনাইদ বাবুনগরী ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী স্বাক্ষরিত এক যুক্ত বিবৃতিতে এ হুশিয়ারি দেওয়া হয়।
বিবৃতিতে তারা বলেন, ‘দেশের ওলামায়ে কেরামের কাছে হাইকোর্টের প্রাঙ্গণ থেকে গ্রিক দেবি থেমিসের মূর্তি সরানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই আমরা আসন্ন পবিত্র মাহে রমজানের আগেই সেটি অপসারণের জোর দাবি জানাই। প্রধান বিচারপতির কাছেও আমাদের দাবি- বৃহত্তর তৌহিদী জনতার চাওয়াকে গুরুত্ব দিন এবং দেশে এই ইস্যুতে যেন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়, সেজন্য মূর্তি অপসারণে দ্রুত পদক্ষেপ নিন। অন্যথায় যথাসময়ে মূর্তি না সরালে আমরা আবারও রাস্তায় নামতে বাধ্য হবো।’
এতে হেফাজতের মহাসচিব ও সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, ‘গোঁড়া সেক্যুলার মৌলবাদী প্রগতিশীলরা অজ্ঞতাপ্রসূত বলছেন যে, মূর্তি আর ভাস্কর্য নাকি এক নয়! অথচ বাংলা একাডেমির ব্যবহারিক বাংলা অভিধানের ৯২৯ নং পৃষ্ঠায় ‘প্রস্তরাদি খোদাই করে বা তা দিয়ে মূর্তি বানানোর কাজকে ভাস্কর্য বলে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ‘ভাস্কর’ থেকে ‘ভাস্কর্য’ শব্দটি এসেছে। ভাস্কর-এর অর্থ: সূর্য বা অগ্নি। অন্যদিকে, ‘প্রস্তরাদি থেকে যিনি মূর্তি নির্মাণ করেন’ তাকেও ভাস্কর বলা হয়েছে উক্ত অভিধানে। এছাড়া বাংলা একাডেমীর ইংরেজি-টু-বাংলা অভিধানে ভাস্কর্যের ইংরেজি শব্দ ‘স্কাপচার’-এর বাংলা অর্থ করা হয়েছে এভাবে: ‘মূর্তি/প্রতিমা গড়া বা খোদাই করা’। সুতরাং যারা এতদিন ধরে বলছেন যে, মূর্তি আর ভাস্কর্য এক জিনিস নয়, তারা প্রকৃতপক্ষে স্যুডো-ইন্টেলেক্ট তথা মিথ্যা বুদ্ধিবৃত্তির বেসাতি করেছেন মাত্র!’
তারা বলেন, ‘আমরা আগেও বলেছি, শিল্পকর্ম ও স্থাপত্যকলার বিরুদ্ধে আমরা নই; বরং মানুষের শিল্পবোধ ও মননশীলতার উন্নয়নে এগুলোর গুরুত্ব রয়েছে বলে আমরা মনে করি। আপনারা ইসলামী শিল্পকর্মের ইতিহাসের দিকে তাকান: আগ্রার তাজমহল, জেরুজালেমের ডোম অফ দ্য রক, স্পেনের কর্ডোভায় খোদাইকৃত মুঘীরা কৌটা, কায়রোতে সেন্ট লুইয়ের ব্যাপ্টিস্টেয়ার ইত্যাদি-এগুলো মুসলমানদের কর্তৃক বিশ্বনন্দিত ইসলামী শিল্পকর্মের শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। এছাড়া বিগত ২০১৫ সালে ব্রিটিশ মিউজিয়ামে মুসলিমদের শিল্পকর্ম ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেজন্য দুটো গ্যালারির ব্যবস্থাও করা হয়েছে সেখানে।’
জুনাইদ বাবুনগরী ও আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, গ্রিক দেবির মূর্তির পক্ষে যারা আজ ওকালতি করছেন, হাদিস অনুযায়ী পরকালে তাদের হাশর হবে মূর্তি প্রস্তুতকারীদের সাথে। তাছাড়া এই মূর্তির সাথে বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ন্যূনতম সম্পর্কও নেই। তাই এটির অপসারণ শতভাগ যৌক্তিক এবং এটি ধর্মপ্রাণ গণমানুষের ঈমানের দাবিও বটে।’
আজকের বাজার:এলকে/এলকে/ ১৮ মে ২০১৭