মূলা স্বাস্থ্যের জন্য মূল্যবান

শীত প্রায় এসেই গেছে। স্বভাবতই বিভিন্ন ধরনের শীতের সবজিতে ভরে উঠেছে কাঁচা বাজার। এর মধ্যে অন্যতম হলো মূলা। শীতকালে সবজিটি সহজলভ্য হলেও এটি খেতে আবার অনেকে পছন্দ করেন না। কিন্তু আপনি জানেন কী মূলার রয়েছে বহুবিধ পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা? এই মূলজ সবজিটি সাধারণত সালাদ ও সবজি হিসেবে খাওয়া হয়।

চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক মূলার স্বাস্থ্য উপকারিতা-

১. প্রস্রাবের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে

মূলা প্রস্রাবের পরিমাণ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। আসলে মূলা প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীরের বিষাক্ত উপাদান, তরল বর্জ্য হিসাবে বের করে দিতে পারে। এর ফলে কিডনি সুস্থ থাকে এবং মুত্রথলির যে কোনও সমস্যা কমতে শুরু করে। এছাড়াও মুত্রথলিতে প্রদাহ জনিত সমস্যা এবং প্রসাবের সময় জ্বালা অনুভূত হওয়ার সমস্যা থেকে মুক্তি মেলে।

২. ওজন কমাতে সাহায্য করে

মূলা এমন একটি উপাদান, যা অল্প খেলে পেট সম্পূর্ণভাবে ভরে যায়। ফলে আজেবাজে জিনিস খেয়ে পেট ভরানোর আর কোনও উপায় থাকে না। এতে অতিরিক্ত ক্যালরিও শরীরে প্রবেশ করতে পারে না। মূলার মধ্যে জলীয় উপাদানের মাত্রা খুবই বেশি থাকে। একইসঙ্গে থাকে কার্বোহাইড্রেট এবং রাফেজ। যার ফলে, যারা ওজন কমাতে ইচ্ছুক, তাদের জন্য মুলো খুবই কার্যকরি একটি উপাদান। এছাড়াও মূলার মধ্যে আছে ফাইবার, যা শরীর থেকে বর্জ্য বের করে দিতে সাহায্য করে। অন্যদিকে পাচন প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে শরীরে সুস্থ এবং সবল রাখতে পারে।

৩. হার্টকে ভালো রাখে

মূলা ২ রকমের হয় লাল আর সাদা। এই রঙের পেছনে কারণ হল মূলার মধ্যে থাকা অ্যান্থোকায়োনিন। এই অ্যান্থোকায়োনিন আসলে এক ধরণের ফ্ল্যাবোনয়েড। এই উপাদানটির বহু স্বাস্থ্যকর দিকও রয়েছে। যেমন বহু গবেষণায় উঠে এসেছে মূলার মাধ্যমে হার্টের যে কোনও সমস্যা দূর করা যায়। এছাড়াও, এই উপাদানটি ক্যান্সার এবং প্রদাহজনিত সমস্যা দূর করতে পারে।

৪.ক্যান্সার রোধ করে

মূলার মধ্যে নানা উপকারি উপাদান রয়েছে, যেমন- অ্যান্থোকায়োনিন, ভিটামিন সি এবং ফলিক অ্যাসিড। এই উপাদানগুলি নানারকম ক্যান্সার, যেমন, কোলোন, কিডনি, অন্ত্র, পেট এবং মুখের ক্যান্সার রোধ করতে পারে। এছাড়াও, মূলার মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এর ফলে, ক্যান্সারের কোষ গড়ে ওঠা প্রতিহত হয় এবং ভাল কোষ তৈরি হতে সাহায্য করে।

৫.হজম শক্তি বাড়াতে পারে

মুলোর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। যার ফলে পেটের কাজ সুদৃঢ় হয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর হয়। এছাড়াও আমাশয় বা ডায়ারিয়ার সমস্যা দূর করতে পারে। লিভার এবং গলব্ল্যাডারকেও ভালো রাখতে পারে। এর কারণ মূলা খেলে হজম ভালো হয় এবং শরীর সুস্থ থাকে। মুক্তি পাওয়া যায় পেটের নানারকম সমস্যা থেকেও।

৬.শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা দূর করে

নানা কারণে আমাদের শ্বাস প্রশ্বাস পদ্ধতিতে সমস্যা হতে পারে। যেমন ঠাণ্ডা লেগে যাওয়া, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া বা সর্দি লাগা, গলা ব্যাথা বা ফুলে যাওয়া, ফুসফুসে সংক্রমণ, কোনও রকম অ্যালার্জি এবং আরও নানা কারণ থাকে। মূলার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন থাকায়, এই ধরণের সমস্যাগুলি সহজে শরীরকে কাবু করতে পারে না। ফলে শরীর শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যাও দূর হয়।

৭. রক্তচাপ সঠিক রাখতে সাহায্য করে

মূলার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে। এর ফলে মূলার শরীরের জন্য খুবই উপকারি একটি উপাদান। পটাশিয়ামের একটি মূল কাজ হল রক্তচাপকে সঠিক রাখা। এটি রক্তনালীর কাজকে সুচারুভাবে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে এবং রক্তকে স্বাভাবিকভাবে প্রবাহিত হতে সাহায্য করে।

৮.ডায়াবেটিস রোধ করে

মূলা মধ্যে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স খুব কম। এরফলে মূলা খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা কখনোই বৃদ্ধি পায় না। এছাড়া রক্তে শর্করাকে মিশে যেতেও সাহায্য করে মূলা। ফলে রক্তে কখনোই সুগারের মাত্রা বেশি হয় না। উল্টে রক্তে শর্করার মাত্রা বজায় রেখে শরীরকে সুস্থ রাখতে পারে মূলা।

৯.ত্বকের যত্নে সাহায্য করে

ত্বকের যত্নে মূলা দারুণ উপকারি। কারণ মূলার মধ্যে ভিটামিন সি, ফসফরাস, জিঙ্ক এবং ভিটামিন বি কমপ্লেক্স থাকে। অন্যদিকে মুলোর মধ্যেকার জলীয় উপাদান ত্বকের আদ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। ফেসপ্যাক হিসাবেও মুল মুখে ব্যবহার করা যেতে পারে। এরফলে, ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া, ব্রণ, ত্বক ফেটে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

১০. জ্বরের প্রকোপ কমায়

শীতকালে অনেকেরই ঠাণ্ডা লেগে জ্বর আসে। এছাড়াও, জ্বরের সঙ্গে শরীর কাবু করে দেয় প্রদাহজনিত সমস্যা। এই ধরনের সমস্যা মূলত হয় ধুলো, ঠাণ্ডা বা বিভিন্ন সংক্রমণের জন্য। এইসময় মুলোর রস, বিট নুন দিয়ে পান করলে জীবাণু এবং সংক্রমণ দূর হয়। ফলে জ্বর, সর্দি এগুলি দূরে পালায়।

১১. পোকামাকড়ের কামড় সারাতে

মূলার মধ্যে যে যে উপাদানগুলি রয়েছে, তা যে শুধু শরীর এবং ত্বককে ভালো রাখতে সাহায্য করে, তা কিন্তু নয়। মূলার আরও একটি গুণ হল, এটি পোকামাকড় কামড়ানোর যন্ত্রণা দূর করতে পারে। আমাদের সবাইকেই কোনও না কোনও সময় পিঁপড়ে, বোলতা ইত্যাদি কামড়ায়। ফলে শরীরে যন্ত্রণা এবং অস্বস্তি হতে থাকে। এই সময় ব্যাথা জায়গায় মুলোর রস লাগালে আরাম পাওয়া যায় এবং যে জায়গায় কামড়েছে, সেখান থেকে ব্যাথা দূর হয়।

আজকের বাজার:এলকে/এলকে ১৯ নভেম্বর ২০১৭