রাশিয়ান সামরিক নেতৃত্বের পতন ঘটানোর প্রতিশ্রুতি ওয়াগনার প্রধানের

ওয়াগনার ভাড়াটে গোষ্ঠীর প্রধান শনিবার রুশ সামরিক নেতৃত্বের পতন ঘটাতে ‘চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার’ প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন।
ওয়াগনার প্রধান তার লোকদের উপর হামলা চালানোর জন্য রুশ বাহিনীকে অভিযুক্ত করেছেন। তবে রাশিয়ার প্রসিকিউটর জেনারেল বলেছেন, ‘সশস্ত্র বিদ্রোহের’ অভিযোগে ওয়াগনার প্রধানের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।
ওয়াগনার প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোঝিন (৬২) এক অডিও বার্তায় বলেছেন, ‘আমরা এগিয়ে যাচ্ছি এবং আমরা শেষ পর্যন্ত যাব।’
গত বছর ইউক্রেনে আক্রমণ শুরু হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সামনে সবচেয়ে সাহসী চ্যালেঞ্জ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের পথে যা কিছু দাঁড়াবে আমরা তা ধ্বংস করব।’
পরে তিনি দাবি করেন, তার বাহিনী রাশিয়ার একটি সামরিক হেলিকপ্টার গুলি করে ভূপাতিত করেছে।
তিনি বলেন, ‘একটি হেলিকপ্টার এইমাত্র একটি বেসামরিক এলাকায় গুলি চালিয়েছে। পিএমসি ওয়াগনারের ইউনিটগুলো এটিকে গুলি করে ভূপাতিত করেছে।’
প্রিগোঝিন এর আগে বলেছেন, তার বাহিনী রাশিয়ার ব্যাপক আক্রমণের নেতৃত্ব দিয়েছে। তারা দক্ষিণ রাশিয়ার রোস্তভ অঞ্চলে প্রবেশ করেছে, কিন্তু এই ব্যাপারে তারা কোনো প্রমাণ হাজির করেনি এবং এএফপি স্বাধীনভাবে তার দাবিগুলো যাচাই করতে পারেনি।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন নিউজ এজেন্সি ‘তাস’ আইন শৃংঙ্খলা বাহিনীর উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, মস্কোতে কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর করেছে। জরুরি অবকাঠামোগুলো ‘কড়া সুরক্ষার অধীনে রাখা হয়েছে।’
ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিস (এফএসবি) ওয়াগনার যোদ্ধাদের প্রিগোঝিনকে ‘আটক করার ব্যবস্থা নিতে’ আহ্বান জানিয়েছে।
ক্রেমলিন জানিয়েছে, ওয়াগনার গ্রুপ এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে উদ্ভূত উত্তেজনা সম্পর্কে পুতিনকে নিয়মিত আপডেট দেওয়া হচ্ছে।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, প্রসিকিউটর জেনারেল ইগর ক্রাসনভ পুতিনকে প্রিগোঝিনের বিরুদ্ধে ‘সশস্ত্র বিদ্রোহ সংগঠিত করার প্রচেষ্টার জন্য একটি ফৌজদারি মামলার সূচনা’ সম্পর্কে জানিয়েছেন।
প্রিগোঝিন তার বাহিনীকে লক্ষ্য করে মারাত্মক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জন্য মস্কোকে অভিযুক্ত করার পরে এই বিরোধ ও সংঘাতের সূচনা ঘটে।
প্রিগোঝিন তার মুখপাত্রের প্রকাশিত বেশ কয়েকটি ক্ষুদ্ধ অডিও বার্তায় বলেছেন,
‘তারা (রাশিয়ার সামরিক বাহিনী) আমাদের পিছনের শিবির গুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। আমাদের বিপুল সংখ্যক যোদ্ধা, কমরেড মারা গেছে।’
‘পিএমসি ওয়াগনারের কমান্ডার কাউন্সিল একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশের অশুভ সামরিক নেতৃত্বের কার্যক্রম অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।’
তিনি তার বাহিনীকে প্রতিরোধ করার বিরুদ্ধে রাশিয়ানদের সতর্ক করে দিয়েছেন এবং তাদের সাথে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বলেছেন, ‘তার নেতৃত্বে ২৫ হাজার যোদ্ধা রয়েছে।’
‘আমাদের এই জগাখিচুড়ির অবসান ঘটাতে হবে’ এই কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটি একটি সামরিক অভ্যুত্থান নয়, বরং ন্যায় বিচারের জন্য লড়াই।’
এফএসবি এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘প্রিগোঝিনের বিবৃতি এবং কর্মকান্ডগুলো আসলে রাশিয়ান ফেডারেশনের ভূখন্ডে একটি সশস্ত্র গৃহযুদ্ধ শুরু করার আহ্বান এবং ফ্যাসিবাদী ইউক্রেনীয় সমর্থকদের সাথে লড়াই করা রাশিয়ান সেনাদের পিঠে ছুরিকাঘাত করার আহ্বান।’
প্রিগোঝিনের দল ইউক্রেনে রাশিয়ার বেশিরভাগ আক্রমণের নেতৃত্ব দিয়েছে। তিনি সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মস্কোর সামরিক নেতৃত্বের সাথে একটি তিক্ত দ্ব›েদ্ধ জড়িয়ে পড়েছেন এবং বারবার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সের্গেই শোইগু এবং জেনারেল স্টাফের প্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভকে তার যোদ্ধাদের মৃত্যুর জন্য দায়ী করেছেন।
প্রিগোঝিনের বাহিনীর উপর রাশিয়ান হামলার দাবি অস্বীকার করে রাশিয়ান প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয় বলেছে, বিবৃতিগুলো ‘বাস্তবতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়’ এবং সেগুলোকে ‘উস্কানি’ বলে অভিহিত করেছে।
রাশিয়ান প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয় পরে বলেছে, ইউক্রেনীয় সেনারা পূর্ব ইউক্রেনের হটস্পট বাখমুতের কাছে একটি আক্রমণের জন্য প্রস্তুত হওয়ার জন্য অন্তর্দ্ব›েদ্ধর সুযোগ নিয়েছিল।
একজন বিশিষ্ট রাশিয়ান জেনারেল মস্কোর প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্ব অপসারণের প্রচেষ্টা প্রত্যাহার করার জন্য প্রিগোঝিনকে আহ্বান জানিয়েছেন।
একটি অত্যন্ত অস্বাভাবিক ভিডিও ঠিকানা থেকে রাশিয়ার বিমান বাহিনীর কমান্ডার সের্গেই সুরোভিকিন ওয়াগনার প্রধান প্রিগোঝিনকে লক্ষ্য করে বলেছেন, ‘আমি আপনাকে থামতে অনুরোধ করছি।’
‘শত্রুরা আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। কাল বিলম্ব না করে রুশ ফেডারেশনের জনপ্রিয় নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের ইচ্ছা ও আদেশ মেনে চলা প্রয়োজন।’
কিয়েভ বলেছে, তারা মস্কোর অন্তর্দ্ব›দ্ধ পর্যবেক্ষণ করছে।
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক টুইটে বলেছে, ‘পরিস্থিতি আমরা দেখছি’। ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দা প্রধান কিরিলো বুদানভ বলেছেন, প্রতিদ্ব›দ্ধী রাশিয়ান দলগুলো ‘ক্ষমতা এবং অর্থের জন্য একে অপরকে খেতে শুরু করেছে।’