রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন: প্রথম ধাপে ৪৫০ হিন্দু নেবে মায়ানমার

২০১৮ সালের ২২ জানুয়ারি বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়া শুরু করবে মায়ানমার। শুরুতে রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা ৪৫০ হিন্দু ধর্মালম্বীদের ফেরত নেবে দেশটি।

বুধবার মায়ানমারের সমাজকল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী ড. উইন মিয়াত আইয়ি এই তথ্য জানিয়েছেন। মায়ানমাররের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল নিউ লাইটস অব মিয়ানমার এ খবর জানিয়েছে।

রাজধানী নেপিদোতে মায়ানমারের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠকে পুনর্বাসনমন্ত্রী জানান, প্রত্যাবাসনের প্রথম ধাপে ২২ জানুয়ারি সীমান্তে ৪৫০ হিন্দু শরণার্থীকে ফেরত নেয়া হবে।

মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান পুরো প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ রাখার আহ্বান জানান।

মায়ানমারের সেনাবাহিনী এবং উগ্র বৌদ্ধদের আক্রমণের মুখে প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে গত আগস্ট মাস রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে শুরু করে রোহিঙ্গা মুসলমানরা।এটিকে রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নিধন করার প্রয়াস হিসাবে বর্ণনা করে আসছে বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠনসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। তবে দেশটির সেনাবাহিনী এটি অস্বীকার করে আসছে। দেশটির ডি ফ্যাক্টো নেতা ও নোবেল বিজয়ী অং সান সুচি এক্ষেত্রে নীরব সমর্থন জুগিয়ে আসছেন। এ নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি।তবে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি সমঝোতা চুক্তিতে উপনীত হতে বাধ্য হয় মিয়ানমার। তবে চুক্তি হলেও বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া সব রোহিঙ্গাদের ফেরত নেয়ার বিষয়ে সংশয় রয়েছে।

গত ২৩ নভেম্বর রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমার দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তি অনুযায়ী, ২০১৬ সালের পরে যেসব রোহিঙ্গা এসেছে, শুধু তাদের ফেরত পাঠানোর জন্য বিবেচনা করা হবে। এ প্রত্যাবাসন হবে ধাপে ধাপে।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করার প্রস্তাব দিয়েছে। সম্প্রতি এই সংস্থার ডেপুটি হাইকিমশনার কেলি ক্লেমেন্টস বলেছেন, মায়ানমারের রাখাইনের পরিস্থিতি এখনও নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য উপযুক্ত নয়। এখনও শরণার্থীরা পালাচ্ছেন।

গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে সহিংসতা জোরালো হওয়ার পর হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ছয় লাখেরও বেশি মানুষ। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এ ঘটনায় খুঁজে পেয়েছে মানবতাবিরোধী অপরাধের আলামত। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন এই ঘটনাকে জাতিগত নিধনযজ্ঞের ‘পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ’ আখ্যা দিয়েছে। রাখাইন সহিংসতাকে জাতিগত নিধন আখ্যা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রও।