লাদেনকে খুঁজে আনা ডাক্তার আফ্রিদি আজও কারাগারে

২০১১ সাল থেকে পাকিস্তানের জেলে বন্দি আছেন ডাক্তার শাকিল আফ্রিদি। ওসামা বিন লাদেন কোথায় লুকিয়ে আছেন তা বের করতে ভুয়া একটি টিকা কর্মসূচি গ্রহণ করেন তিনি।

তার সহায়তাতেই ওসামা বিন লাদেনের বাড়ি চিহ্নিত করে তাকে হত্যা করতে সক্ষম হয় যুক্তরাষ্ট্রের নেভি সিল বাহিনীর সদস্যরা।

সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, ৯/১১ হামলার মূল পরিকল্পনাকারী লাদেনকে ধরিয়ে দিতে সাহায্য করা ডাক্তার জেলে কেন?

কিন্তু পাকিস্তানের প্রশাসন ভিন্ন একটি প্রশ্ন করে, যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে তাদের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করে গোপনে লাদেনের বাড়িতে অভিযান চালায় এবং বিশ্বের কাছে তাদের ও ইন্টেলিজেন্সকে লজ্জার মধ্যে ফেলে দেয়?

‘শাকিল আফ্রিদির গল্পটা যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের সম্পর্কের একটি আদর্শ রূপক’, বলে মন্তব্য করেন ওয়াশিংটনের উড্রো উইলসন সেন্টারের এশিয়া প্রোগ্রামের ডেপুটি ডিরেক্টর মাইকেল কুগেলমাল।

যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, তাদের দেয়া আর্থিক সহায়তার কারনে তালিবানদের পরাজিত করতে পাকিস্তান তাদের সব ধরনের কার্যক্রমকে সমর্থন করবে।

নির্বাচনী প্রচারণার সময় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে তিনি নির্বাচিত হলে শাকিল আফ্রিদিকে জেল থেকে বের করতে সময় লাগবে মাত্র ‘দুই মিনিট’। কারণ পাকিস্তানকে তারা ‘প্রচুর সহায়তা দিয়ে থাকেন’।

কিন্তু পাকিস্তান এসবকে তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বলে মনে করে। পাকিস্তান ইন্সটিটিউট অফ পিস স্টাডিজের পরিচালক মোহাম্মাদ আমির রানা মনে করেন, ‘পাকিস্তান ও আমেরিকা পরস্পরের কাছে তাদের চাহিদা পুণর্মূল্যায়ন করা উচিত। এছাড়া বিভিন্নমুখী নিরাপত্তা হুমকি চিহ্নিত করা এবং আফগান যুদ্ধের নতুন কৌশল ঠিক করার ওপর জোরও দেন তিনি। তা না হলে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি হবে না। শাকিল আফ্রিদি এই বিশাল ধাঁধারই একটা অংশ।’

আফ্রিদি ২০১২ সালের পর কোনও আইনজীবীর সাথে দেখা করতে পারেন নি। কেবলমাত্র তার স্ত্রী ও সন্তানেরা জেলে তার সাথে দেখা করতে পারেন।

দুই বছরের জন্য তিনি একেবারে ‘উধাও’ হয়ে গিয়েছিলেন। এ কারনে কোর্টে আবেদন জানাতে দেরি হয় তার, কিন্তু ওই আবেদনের কোনও অগ্রগতি হয়নি এখনও।

শাকিল আফ্রিদির আইনজীবী কামার নাদিম আফ্রিদি মার্কিন দ্য এসোসিয়েট প্রেসকে জানান, আদালত বলেছে আফ্রিদির মামলার জন্য কোনও প্রসিকিউটর পাওয়া যাচ্ছে না।

নাদিম, যিনি শাকিলের চাচাত ভাই, বলেন, ‘তাকে নিয়ে আলোচনা করতে, তার নাম বলতে সবাই ভয় পায়, এবং তার কারণও আছে।’

শাকিলের আইনজীবী হওয়ার কারণে কয়েক বছর আগে নাদিমের অফিসে গুলিবর্ষণ করে অজ্ঞাতনামা কয়েকজন ব্যক্তি। শাকিল আফ্রিদির আরেকজন উকিলকে পেশোয়ারে তার নিজের বাড়ির সামনে গুলি করে হত্যা করা হয়।

শাকিল আফ্রিদির হয়ে আবেদন করার কারণে পেশোয়ার জেলের ডেপুটি সুপারিন্টেনডেন্টকেও গুলি করে হত্যা করা হয়।

আফ্রিদি লাদেনের পরিবারের সদস্যদের ডিএনএ-এর নমুনা জোগাড় করার জন্য হেপাটাইটিসের টিকা দেয়ার ভুয়া একটি প্রকল্প চালু করেছিলেন।

এভাবেই লাদেন কোথায় আছেন তা নিশ্চিতভাবে সনাক্ত করা সম্ভব হয়। তবে লাদেনকে হত্যার মূল অভিযানের সাথে তার সম্পর্ক আছে এমন অভিযোগ তার বিরুদ্ধে আনা হয়নি।

নাদিম বলেন, শাকিলের বিরুদ্ধে উপজাতি আইনের আওতায় খাইবার অঞ্চলের জঙ্গিদেরকে সহায়তা করার অভিযোগ আনা হয়েছে। এই আইনের আওতায় অভিযোগ করার কারণে বদ্ধ আদালতে, অভিযুক্ত ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে তার বিচার করা যায় এবং তার আবেদনের সংখ্যা সীমিত থাকে।

‘দেশদ্রোহিতার অভিযোগে শাকিল আফ্রিদিকে আটক করা হলে তার বিচার জনসমক্ষে করতে হতো এবং নিম্ন আদালত থেকে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত তিনি অসংখ্য আবেদন জানাতে পারতেন। এর ফলে লাদেনের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানের বহু খুঁটিনাটি তথ্য সবাই জানতে পারতেন। কিন্তু বেসামরিক বা সামরিক কোনও মহলই এসব তথ্য সবাই জানুক তা চায় না,’ বলেন নাদিম।

আজকের বাজার: সালি / ২২ জানুয়ারি ২০১৮