শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে আরো অনুসন্ধান ও গবেষণার উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান শহীদ সন্তানদের

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের জীবন, কর্ম ও মুক্তিযুদ্ধে অবদান সম্পর্কে গভীর অনুসন্ধান ও গবেষণার  উদ্যোগ গ্রহনের আহবান জানিয়েছেন একাত্তরের শহীদ সন্তানেরা। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের প্রাক্কালে বাসস’কে দেয়া সাক্ষাতকারে তারা এই আহবান জানান। শহীদ সন্তানেরা এসব গবেষণা কর্মে তরুণ প্রজন্মকে যুক্ত করার মাধ্যমে আগামী প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস পৌঁছে দেয়ার প্রয়োজনীয়তা ব্যক্ত করে বলেন, সরকার ও সরকারের বাইরে ব্যাক্তি বা বেসরকারী পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি সুপারিশ আকারে তারা এই আহবান জানাচ্ছেন।
শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনের পুত্র ও জেনোসাইড স্কলার ড: তৌহীদ রেজা নূর বলেন, একাত্তরের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের যথাযথ সম্মান জানাতে রাষ্ট্র, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে বছরব্যাপী গবেষণামূলক ও প্রচারণামুলক কর্মকান্ড রাখা দরকার। মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক গবেষণা কাজে  আগ্রহী তরুণদের ব্যাপকহারে যুক্ত করা দরকার, যেখানে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের অবদান ও আতœদানের প্রসংগটিও গুরুত্বের সাথে উপস্থাপন করা হবে। তিনি বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের  যথাযথ অবদান সম্পর্কে  জানাতে এবং কি কারণে, কাদের দ্বারা, কিভাবে তাঁরা সুপরিকল্পিতভাবে বুদ্ধিজীবী হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়েছিলেন – সে সম্পর্কে তরুণ প্রজন্মকে সুস্পষ্টভাবে অবহিত করতে হবে। নানা ধরণের সহজগম্য ও সহজবোধ্য উপায় সুনিশ্চিত করার মাধ্যমে আগামী প্রজন্মকে এ ব্যাপারে সজাগ করতে  হবে, যাতে তারা শহীদ বুদ্ধিজীবীদের অবদান সম্পর্কে জানতে ও তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ও মর্যাদা দিতে শেখে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর পুত্র ‘প্রজন্ম ৭১’ এর সভাপতি আসিফ মুনীর , শহীদ বুদ্ধিজীবীদের মরণোত্তর রাষ্ট্রীয় সম্মাননা প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন,  শহীদ বুদ্ধিজীবীদের রচনা ও অন্যান্য কীর্তি স্কুল, কলেজ ও প্রশাসনিক প্রশিক্ষণের অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে সারা দেশের এবং পুরো ৯ মাসের বুদ্ধিজীবী হত্যার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনা, বুদ্ধিজীবী হত্যা মামলার দন্ডপ্রাপ্ত আসামী চৌধুরী মুইনউদ্দিন ও আশারফুজ্জামান খানের রায় কার্যকর করার জন্য আনুষ্ঠানিক ভাবে কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে হবে।

শহীদ হিরণ্য কুমার দত্তের পুত্র প্রকৌশলী জেনোসাইড গবেষক  প্রদীপ কুমার দত্ত বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবীসহ সকল শহীদের সঠিক তালিকা তৈরির পাশাপাশি,  তাঁদের সম্পর্কে তাঁদের এলাকা এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান সমূহে তাঁদের পরিচিতি  ও কীর্তি  সম্পর্কে  তরুণ প্রজন্মকে জানাতে হবে এবং তাঁদের প্রতি  নিয়মিত শ্রদ্ধা প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি  নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে  শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যমে এ বিষয়ে নিয়মিত চর্চা ও সঠিক প্রচারণার জন্য সংশ্লিষ্ট মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। জেনোসাইড স্কলার তৌহীদ বলেন, এই কাজটি এককভাবে সরকারের যেমন নয়, তেমনি শুধু বেসরকারী প্রতিষ্ঠানেরও নয়। এই কাজ করতে রাষ্ট্রের সকলকেই একক ছায়াতলে এসে নানা ধরণের পরিকল্পনা ও উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে হবে। রাষ্ট্রীয়, সরকারী, বেসরকারী, পারিবারিক, সামাজিক, ব্যক্তিগত সকলের সমন্বিতভাবে এবং কখনো কখনো এককভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরী।

আসিফ মুনীর অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এবং সঠিক যাচাইয়ের মাধ্যমে বর্তমান সংজ্ঞা অনুযায়ী শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা চূড়ান্ত করা ও গেজেটভুক্ত করার ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন।
‘শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা প্রণয়ন কমিটি’র আহ্বাহক পদ্মশ্রী-প্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীর প্রতিক বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা তৈরির কাজটি খুব সহজ নয়। আমরা চিনিনা, সেরকম অনেক শহীদ বুদ্ধিজীবী গ্রামে গঞ্জে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন-  যাঁদের নামও হয়তো অনেকে ভুলে গেছে, তাঁদের খুঁজে বের করা, যাচাই-বাছাই করে কারণ ও সত্যতা যাচাই করার পর, তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হচ্ছে। তিনি জানান, ইতিমধ্যে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের ২টি তালিকা তৈরি ও গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। শিগগিরই আরো একটি গেজেট প্রকাশ করা হবে। (বাসস)