শিগগির সড়ক পরিবহন আইনের বিধিমালা চূড়ান্ত করার আহ্বান

১ নভেম্বর থেকে বাস্তবায়ন হওয়া সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ কে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। তবে এ আইনের বিধিমালা প্রণয়ণ না হওয়ায় এর স্বয়ংসম্পূর্ণতা পাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছে সংগঠনটি। এছাড়া অল্প সময়ের মধ্যে আইনের বিধিমালা চূড়ান্ত করার আহ্বান জানিয়েছে।

শনিবার রাজধানীর কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কার্যালয় এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি ও সংসদ সদস্য মো. মসিউর রহমান রাঙ্গা।

তিনি বলেন, ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ পাস হওয়ার পর আমরা কয়েকটি ধারা সংশোধনের জন্য প্রস্তাব করেছিলাম। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে আহ্বায়ক এবং আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনকে সদস্য করেন একটি কমিটি গঠন করে দেন। ওই কমিটি আমাদের প্রস্তাবের যৌক্তিকতার সাথে একমত পোষণ করেন। তবে একথা সত্য যে, আইনে মালিক শ্রমিকদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অনেকগুলো ধারা রয়েছে।’

মশিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, ‘আইনের বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়নি। বিধিমালা প্রণয়ন ছাড়া আইন স্বয়ংসম্পূর্ণ না। তাই খুব অল্প সময়ের মধ্যে বিধিমালা চূড়ান্ত করতে হবে। তা না হলে আইন প্রয়োগ করা যাবে না।’

‘দুর্ঘটনার জন্য কাউকে দায়ী না করে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের চিহ্নিত করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে কাউকে দায়ী না করে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের চিহ্নিত করা হয়। তবে সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাসের জন্য সকলকে সচেতন হতে হবে। আমরা মনে করি সচেতনতার বিকল্প নেই।’

তিনি আরো বলেন, ‘এই আইন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে মালিক শ্রমিকরা যেন হয়রানির শিকার না হয় এবং আইনের অপপ্রয়োগ না হয় সেদিকে সবার খেয়াল রাখতে হবে। দুর্ঘটনা মামলা যাতে ৩০৪ (খ) ধারায় পরিবর্তে ৩০২ ধারায় দায়ের না হয়। তদন্তে যদি প্রমাণিত হয় ড্রাইভার কাউকে হত্যা করেছে সে ক্ষেত্রে ৩০২ ধারায় স্থানান্তরে আমাদের আপত্তি নেই।’

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব এনায়েতুল্লাহ বলেন, ‘আইন সংসদে পাশ হওয়ার পর সংশোধনের কোনো সুযোগ ছিল না। তারপরেও আমরা প্রস্তাবনা দিয়েছি। উনারা আমাদের প্রস্তাবনায় সম্মত হয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘আইন বাস্তবায়নে যাতে কোন হয়রানি, বিশৃঙ্খলা ও জটিলতা সৃষ্টি না হয়। দেশের ৯৫ শতাংশ যাত্রী ও পরিবহন গাড়ি বেসরকারি খাত থেকে পরিচালনা করা হয়। সরকারি ভাবে মাত্র ৫ শতাংশ রয়েছে। গাড়িতে বড় অংকের জরিমানা এ সেবাকে বাধাগ্রস্ত করবে।’

আইনে অজামিনযোগ্য ধারার বিষয়ে এনায়েতুল্লাহ বলেন, ‘একজন চালক দুর্ঘটনার পর অজামিনযোগ্য আইনে কারাগারে গেলে স্বাভাবিকভাবে ওই জায়গায় চলক সংকট হবে। কারণ আপনারা জানেন আগের সরকারগুলো দেশে চালক তৈরির জন্য কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। ফলে এ খাতে চালকদের সংকট রয়েছে। বর্তমান সরকার চালক সংকট কমাতে কিংবা চালক তৈরীর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কয়েক বছরের মধ্যে দেশে চালকের সঙ্কট থাকবে না। তখন অজামিনযোগ্য অপরাধে কারাগারে গেলে সেবা বিঘ্নিত হবে না।’

রাস্তা পারাপারে পথচারীদেরও সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কেউ যদি জেব্রা ক্রসিং দিয়ে রাস্তা পার না হন তাহলে তার ১০ হাজার টাকা জরিমানা হবে। এটি একটি বিরাট অংক। সবাইকে সচেতন হতে হবে। তবে অনেক জায়গায় জেব্রা ক্রসিং নেই। এ বিষয়টিও কর্তৃপক্ষের দেখা উচিত।’

আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে সংস্থাগুলো এখনো প্রস্তুত নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যম সূত্রে জেনেছি এখনো পুলিশের জরিমানা আদায়ের মেশিন প্রস্তুত না। প্রস্তুত করতে এক মাসের মত সময় লাগবে।’

দুর্ঘটনা তদন্তে পুলিশের পাশাপাশি বিআরটিএ ও মালিক সমিতিকে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান তিনি।

এছাড়া আইনে কনটেইনার পরিবহনে ট্রাকের চেসিস ২০ ফুট থাকার যে বাধ্যবাধকতা দেওয়া হয়েছে তা ২২ ফুটে উন্নীত করার আহ্বান জানান তিনি।

আজকের বাজার/এমএইচ