সংঘাতে এক বছরে রেকর্ড সংখ্যক ১২ হাজার শিশু হতাহত

সশস্ত্র সংঘাতে গত বছর রেকর্ড সংখ্যক ১২ হাজারের অধিক শিশু নিহত ও আহত হয়েছে বলে জাতিসংঘের এক নতুন প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। এ হতাহতের তালিকায় শুরুতেই রয়েছে আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন, সিরিয়া ও ইয়েমেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব নিহত ও আহত হওয়া শিশুদের যোদ্ধা হিসেবে নিয়োগ ও ব্যবহার, যৌন নির্যাতন, অপহরণ এবং স্কুল ও হাসপাতালে হামলাসহ তাদের ওপর জাতিসংঘের নিশ্চিত করা ২৪ হাজারের অধিক ‘গুরুতর আইন লঙ্ঘনের’ ঘটনার মাঝে অন্তর্ভুক্ত।

নিরাপত্তা পরিষদে শিশু ও সশস্ত্র সংঘাত বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের জমা দেয়া বার্ষিক এ প্রতিবেদনের কপি সোমবার হাতে পেয়েছে বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)। এতে বলা হয়, শিশুদের বিষয়ে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর আইন লঙ্ঘন অবিচল রয়েছে। কিন্তু ২০১৭ সালের তুলনায় সরকার ও আন্তর্জাতিক বাহিনীগুলোর আইন লঙ্ঘন ‘উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে’।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিরাপত্তা পরিষদ ২০০৫ সালে শিশুদের নিহত ও আহত হওয়ার বিষয়ে নজরদারি ও প্রতিবেদন তৈরির অনুমোদন দেয়ার পর ২০১৮ সালেই এ সংখ্যা ছিল সর্বোচ্চ।

তালিকার প্রথমে থাকা আফগানিস্তানে ২০১৮ সালে ৩,০৬২ শিশু হতাহত হয়েছে, যা সব বেসামরিক হতাহতের ২৮ শতাংশ। সিরিয়ায় বিমান হামলা, ব্যারেল বোমা ও গুচ্ছ বোমায় নিহত ও আহত হয়েছে ১,৮৫৪ শিশু। ইয়েমেনে ময়দানের লড়াই ও অন্যান্য আক্রমণের শিকার হয়েছে ১,৬৮৯ শিশু।

ইসরায়েলি-ফিলিস্তিনি সংঘাতে ২০১৪ সালের পর থেকে ২০১৮ সালে সর্বোচ্চ ৫৯ ফিলিস্তিনি শিশু নিহত এবং ২,৭৫৬ জন আহত হয়েছে। এ সময়ে ইসরায়েলি শিশু আহত হয়েছে ছয়জন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সোমালিয়ায় সংঘাতে জড়িত পক্ষগুলো ২,৩০০ শিশুকে নিয়োগ ও ব্যবহার করেছে। যাদের মধ্যে ৮ বছরের ছোট শিশুও ছিল। আল-শাবাব চরমপন্থীরা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে তাদের নিয়োগ বাড়িয়ে ১,৮৬৫ শিশুকে দলে ভিড়িয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা নাইজেরিয়ায় ১,৯৪৭ শিশুকে নিয়োগ করা হয়। কয়েকজনকে আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী হিসেবে কাজে লাগানো হয়েছে।

২০১৮ সালে শিশুদের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের সর্বোচ্চ ৩৩১টি নিশ্চিত হওয়া ঘটনাও ঘটেছে সোমালিয়াতে। পরের অবস্থানে থাকা কঙ্গোতে এমন ঘটনা ছিল ২৭৭টি। তবে জাতিসংঘ মহাসচিব বলছেন, এ ধরনের ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে অজানা থেকে যায়। বিশেষ করে ছেলে শিশুদের যৌন নির্যাতনের ঘটনা লজ্জার কারণে প্রকাশ পায় না। আর গত বছর শিশু অপহরণের সবচেয়ে বেশি ১,৬০৯টি ঘটনা ঘটেছে সোমালিয়াতে।

আন্তোনিও গুতেরেস জানান, গত বছর স্কুল ও হাসপাতালে যাচাইকৃত ১,০২৩টি হামলাতেও কয়েক হাজার শিশু আক্রান্ত হয়েছে। সিরিয়ায় ২০১৮ সালে স্কুল ও চিকিৎসা কেন্দ্রে ২২৫টি হামলা হয়েছে, যা ২০১১ সালে সংঘাত শুরু হওয়ার পর ছিল সর্বোচ্চ। আফগানিস্তানেও এমন হামলা বেড়েছে, লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে ২৫৪ স্কুল ও হাসপাতাল।

‘মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্র, কলম্বিয়া, লিবিয়া, মালি, নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, সুদান ও ইয়েমেনেও বর্ধিত সংখ্যক হামলা নিশ্চিত হওয়া গেছে,’ বলেন গুতেরেস।

শিশুদের বন্দী রাখার বিষয়েও ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। তিনি ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের হিসাব অনুযায়ী জানান, ইসলামিক স্টেটের সাবেক নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোর ১,২৪৮ শিশুকে (যাদের বেশির ভাগের বয়স ৫ বছরের নিচে ও তারা ৪৬ দেশের নাগরিক) সিরিয়ার উত্তরপূর্বাঞ্চলের শিবিরগুলোতে ‘স্বাধীনতা বঞ্চিত’ রাখা হয়েছে।

ইরাকে আইএসের সাথে সম্পর্কসহ জাতীয় নিরাপত্তার নানা অভিযোগে ৯০২ শিশুকে আটক রাখা হয়েছে। নিরাপত্তা বিষয়ক অপরাধে ডিসেম্বরে ইসরায়েল ২০৩ ফিলিস্তিনি শিশুকে আটক রেখেছিল। তাদের মধ্যে ১১৪ শিশু বিচারের অপেক্ষায় ছিল বা বিচার হচ্ছিল এবং ৮৭ শিশু দণ্ড ভোগ করছিল। তথ্য-ইউএনবি।

আজকের বাজার/এমএইচ