সংসদে কোরাম সংকটে সাড়ে ৩৭ কোটি টাকা অপচয়: দাবি টিআইবি’র

দশম জতীয় সংসদের চতুর্দশ থেকে অষ্টাদশ অধিবেশন (জানুয়ারি-ডিসেম্বর ২০১৭) কোরাম সংকটের কারণে প্রায় সাড়ে ৩৭ কোটি টাকা অপচয় হয়েছে বলে দাবি করেছে ট্রন্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

বৃহস্পতিবার (১৭ মে) দুপুরে ধানমন্ডিতে টিআইবির মেঘমালা কনফারেন্স রুমে ‘পার্লামেন্টওয়াচ দশম জাতীয় সংসদ চতুর্দশ থেকে অষ্টাদশ অধিবেশন (জানুয়ারি – ডিসেম্বর ২০১৭)’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন এ তথ্য জনানো হয়।

সংসদে ৩৫০ জন সংসদ সদস্য রয়েছেন। কোরাম হলো সংসদ অধিবেশন বসার ন্যূনতম যোগ্যতা। সংসদে ন্যূনতম ৬০ জন সদস্য উপস্থিত থাকলে কোরাম গঠিত হয়। সংসদে ৬০ জন সদস্য উপস্থিত না থাকলে কোরাম সংকট হয়।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, চতুর্দশ থেকে অষ্টাদশ অধিবেশন তথা পাঁচটি অধিবেশনে প্রতিটি কার্যদিবসে কোরাম সংকট লক্ষণীয় ছিল। ৭৬টি কার্যদিবসের ১৩ শতাংশ কোরাম সংকট ছিল। প্রতি কার্যদিবসে গড় কোরাম সংকট ছিল ৩০ মিনিট করে অপচয় হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংসদের বাজেটের ভিত্তিতে সংসদ পরিচালনার ব্যয়ের প্রক্কালিত হিসাব অনুযায়ী সংসদ পরিচালনার করতে প্রতি মিনিটে গড়ে ১ লাখ ৬৩ হাজার ৬৮৬ টাকা খরচ হয়। এ হিসাবে প্রতি কার্যদিবসে গড় কোরাম সংকটের অর্থমূল্য ৪৯ লাখ ১০ হাজার ৫৮০ টাকা এবং চতুর্দশ থেকে অষ্টাদশ পর্যন্ত ৫টি অধিবেশনে মোট কোরাম সংকট ছিল ৩৮ ঘন্টা ৩ মিনিট। যে কারণে সরকারের ৩৭ কোটি ৩৬ লাখ ৯৫ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা অপচয় হয়েছে।’

আর দশম জাতীয় সংসদের এখন পর্যন্ত মোট সময় অপচয় হয়েছে ১৫২ ঘন্টা ১৭ মিনিট, যা প্রকৃত সময়ের ১২ শতাংশ। ফলে সরকারের কোরাম সংকটের কারণে ১২৫ কোটি ২০ লাখ ৬৯ হাজার ৪৪৫ টাকা অপচয় হয়েছে।

গবেষণায় দেখা যায়, বিভিন্ন আলোচনা পর্বে সংসদ সদস্যরা অসংসদীয় ভাষা ব্যবহার করেছেন মোট সময়ের ৫ শতাংশে। সদস্যদের ভেতরের প্রতিপক্ষ দল সংসদের বাইরের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নিয়ে ১৯৫ বার অসংসদীয় ভাষা ব্যবহার করেছে। বিশ্বব্যাংক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে অসংসদীয় ভাষা ব্যবহার হয়েছে ২৩ বার। সরকার ও বিরোধী দলের নেতা ও সংসদের বাইরের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নিয়ে বিভিন্নভাবে কটাক্ষ করা হলেও এ ধরনের আলোচনা বন্ধে স্পিকারের কার্যকর ভূমিকার ঘাটতি দেখা যায়।

সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কোরাম সংকট সব সময়ই ছিল। এখন সেটি গড়ে ৩০ মিনিট, যা উদ্বেগের বিষয়। তিনি বলেন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে জাতীয় সংসদের ভূমিকা পালনে ব্যাপক ঘাটতি দেখা যায়। বিরোধী দল হিসেবে যাদের উপস্থাপন করা হয়েছে, সংসদের শেষ দিকে এসে তাদের নিজেদের আত্মপরিচয়ের সংকট একাধিকবার তাদের নিজেদের মুখেই শোনা গেছে। সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে প্রত্যাশিত ভূমিকা পালনে তারা ব্যর্থ হয়েছে।

কোরাম সংকটের অর্থমূল্যের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এটা প্রাক্কলিত আনুমানিক অর্থমূল্য। এটাকে টিআইবি দুর্নীতি বলছে না। একটি ধারণা দেওয়ার জন্য এই অর্থমূল্যের প্রাক্কলন করা হয়েছে।

আজকের বাজার/ এমএইচ