সংসদে শোক প্রস্তাব গৃহীত

একাদশ জাতীয় সংসদের ২৫৫ কুমিল্লা-৭ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক মোঃ আলী আশরাফ, একজন সাবেক প্রতিমন্ত্রী এবং ৬ জন সাবেক সংসদ সদস্যের মৃত্যুতে জাতীয় সংসদে আজ সর্বসম্মতিক্রমে একটি শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী আজ একাদশ জাতীয় সংসদের ১৪তম অধিবেশনের প্রথম কার্য দিবসে এ শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন।

অধ্যাপক মোঃ আলী আশরাফ ১৯৪৭ সালের ১৭ নভেম্বর কুমিল্লা জেলার চান্দিনা উপজেলার গল্লাই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং ৩০ জুলাই ২০২১ বিকেল ৩টা ৩০ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর ৮ মাস ১৩ দিন।

অধ্যাপক মোঃ আলী আশরাফ ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি এবং ১৯৬৮ সালে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি একজন সফল ব্যবসায়ী, শিল্পপতি এবং কৃষি খামারী ছিলেন। তিনি বিভিন্ন কলেজে অধ্যাপনাসহ ১৯৭১ সালে মুজিবনগর সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মোঃ আলী আশরাফ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সহ-সভাপতি, ওআইসি পার্লামেন্টারি কমিটির কার্যকরী কমিটির সদস্য এবং এফবিসিসিআই এর নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর সপ্তম, নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি প্রথম জাতীয় সংসদে সরকারি হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি এবং কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য, সপ্তম জাতীয় সংসদে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি, সরকারি হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি, সংসদের লাইব্রেরি কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও তিনি সপ্তম জাতীয় সংসদে ডেপুটি স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। নবম জাতীয় সংসদে তিনি কার্যপ্রণালী বিধি সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি, সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এবং অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দশম জাতীয় সংসদে তিনি কিছুদিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং পরবর্তীতে তিনি বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি ও কার্যপ্রনালী বিধি সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একাদশ জাতীয় সংসদে তিনি সরকারী প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

অধ্যাপক মোঃ আলী আশরাফ জাতীয় সংসদের একজন অভিজ্ঞ সদস্য হিসেবে নবীন সংসদ সদস্যদের প্রশিক্ষণ প্রদানের দায়িত্ব পালন করেছেন। দেশের বাইরেও তিনি এই দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর মৃত্যুতে সংসদ থেকে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করা হয়। পরে অধ্যাপক মোঃ আলী আশরাফের জীবন ও কর্মের ওপর আলোচনা করা হয়। সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নেন।

এছাড়া অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন, কৃষি মন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের, সরকারি দলের শেখ ফজলুল করিম সেলিম, বেগম মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ ফারুক খান, মুজিবুল হক, জাতীয় পার্টির আনিসুল ইসলাম মাহমুূদ, কাজী ফিরোজ রশীদ, বিরোধী দলের চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা, গণফোরামের সুলতান মোহাম্মদ মুনসুর আহমেদ, তরিকত ফেডারেশনের সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি এবং বিকল্প ধারার আবদুল মান্নান।

শোক প্রস্তাবে সাবেক একজন প্রতিমন্ত্রী এবং সাবেক ছয়জন সংসদ-সদস্যের মৃত্যুতে সংসদ থেকে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়। মৃত্যুবরণকারীরা হলেন, সাবেক সংসদ-সদস্য আফাজ উদ্দিন আহমেদ, তোফাজ্জল হোসেন সরকার, সাবেক পূর্বপাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য (এমএনএ,আলহাজ্ব জামাল উদ্দিন আহম্মদ, সাবেক সংসদ সদস্য খুররম খান চৌধুরী, মো. রেজা খান, সাবেক সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপিকা জাহানারা বেগম এবং সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন।

এছাড়া স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দ সৈনিক দেশবরেণ্য গণসঙ্গীতশিল্পী ফকির আলমগীর, ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’-গানের গীতিকার ফজল-এ-খোদা, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা বিচারপতি আমির হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এ সামাদ, বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ও ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাত্রিতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর ভয়াবহ গণহত্যার তথ্য ও প্রতিবেদন বিশ্ববাসীর নিকট প্রচারকারী ব্রিটিশ সাংবাদিক সায়মন ড্রিং, জার্মানির কিংবদন্তী ফুটবলার গার্ড মুলার, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের মাতা শামসুন্নাহার বেগম, মমতা হেনা লাভলী এমপির মাতা আনোয়ারা খানম, নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন এমপির মাতা মনোয়ারা বেগম, সাবেক তথ্য কমিশনার ও সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আবু তাহের, কুলিয়ারচর গ্রুপের চেয়ারম্যান বিশিষ্ট শিল্পপতি মো. মুছা মিয়া সিআইপি, সংসদ সচিবালয়ের সাবেক সচিব আবুল হাশেম এবং সংসদ সচিবালয়ের পরিচ্ছন্নতা কর্মী শ্রী শংকরের মৃত্যুতে সংসদ গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছে।

শোক প্রস্তাবে প্রাণঘাতী করোনায় আক্রান্ত হয়ে দেশ-বিদেশে যে সব ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, প্রশাসন-পুলিশের সদস্য, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, গণমাধ্যমকর্মী, ব্যবসায়ী ও সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি কর্মচারী মৃত্যুবরণ করেছেন। সংসদে তাদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়।

এছাড়া নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে কারখানায় অগ্নিকান্ডে হতাহত, চাঁপাইনবাবগঞ্জে বজ্রপাতে হতাহত, ক্যারিবিয় দ্বীপরাষ্ট্র হাইতিতে সাম্প্রতিক শক্তিশালী ভূমিকম্পে হতাহত এবং দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে দুর্ঘটনায় হতাহতদের স্মরণে জাতীয় সংসদ থেকে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়। সকল বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করা হয়।

শেষে মৃত্যবরণকারীদের সম্মানে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন ও তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন সরকারি দলের হাফেজ রুহুল আমিন মাদানি। এরপর সংসদের রেওয়াজ অনুযায়ী চলমান সংসদের সদস্য মরহুম অধ্যাপক আলীর প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে দিনের অন্যান্য কার্যসূচি স্থগিত করে সংসদের অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করা হয়। তথ‌্য-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান