সীমিত আকারে ইভিএম ব্যবহারের প্রস্তুতি ইসি’র

আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সাধারণ নির্বাচনে প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় ৩০০ আসনের অন্তত এক ভোটকেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করার প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, যদিও একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য কমিশন আরো সময় নেবে, তবে ইতিমধ্যে এ ব্যাপারে প্রস্তুতি নেয়া শুরু হয়েছে।

এরই অংশ হিসেবে, ১৫ অক্টোবরের মধ্যে রাজধানীতে দুই দিনব্যাপী ইভিএম মেলার আয়োজন করতে যাচ্ছে ইসি, যাতে মানুষ মেশিনটির ব্যবহার সম্পর্কে জানতে পারে।

ইভিএম মেলাটি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) অনুষ্ঠিত হতে পারে। মেলায় আসার জন্য কমিশনের প্রধান স্টেকহোল্ডার- রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানোর কোনো পরিকল্পনা ইসির নেই।

গত ২৮ আগস্ট ইসি সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত একটি বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন বয়সের ১০-১৫ জন শিক্ষার্থীকে মেলায় আসতে আমন্ত্রণ জানানো হবে।

ইসি সচিব হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এখন থেকেই সকল উপজেলা ও সিটি করপোরেশনে এবং সারাদেশে ৩০০ সংসদীয় আসনের অন্তত এক ভোটকেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করার প্রস্তুতি আমাদের নিতে হবে।’

ইভিএম মেলায় আসা সম্ভাব্য দর্শণার্থীদের জন্য ইসি ওয়েবসাইটে একটি রেজিস্ট্রেশন পেজ খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মেলাটি প্রথম দিনে দুপুর ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় দিনে সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। প্রথম দিনে সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত উদ্বোধনী অধিবেশন অনুষ্ঠান হবে।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, ইভিএম মেলায় রাজনৈতিক দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়ে বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। তবে এটি সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকায় তারাও মেলায় আসতে পারবেন।

ইসি থেকে আরো জানানো হয়, মেলায় নিবন্ধিত দর্শকরা ইলেকট্রনিক মেশিনের মাধ্যমে ভোট দিতে পারবেন।

গত ৩০ আগস্ট ইসি স্থানীয় নির্বাচনের মতো জাতীয় নির্বাচনে ইভিএমে ভোট গ্রহণের বিধান রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের প্রস্তাব করে।

পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিশনের ওই বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তবে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার আরপিওতে ইভিএম অন্তর্ভুক্তির ওপর আপত্তি (নোট অব ডিসেন্ট) জানিয়ে ওই বৈঠক বয়কট করেন।

তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনে দ্রুত ইভিএম ব্যবহার করা হলে সেটি বিতর্ক সৃষ্টি করবে। কারণ এর বিষয়ে জনসাধারণের এখনো আস্থা তৈরি হয়নি।

বৈঠক শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তারা ইভিএম ইস্যুটি অন্তর্ভুক্ত করে আরপিও সংশোধন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে আগামী সাধারণ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে কিনা সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।

এদিকে প্রায় ১.৫ লাখ ইভিএম কেনার জন্য সরকারের কাছে ৩,৮২৫ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব করেছে ইসি।

গতকাল মঙ্গলবার ১.৫ লাখ ইভিএম কেনার জন্য ৩,৮২৫.৩৪ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন করেছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।

সারা দেশে ইভিএম ভিত্তিক জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের জন্য ইসির প্রায় ৪ লাখ মেশিনের প্রয়োজন।

গত ৩ সেপ্টেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার জানান, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়টি আইন প্রণয়ন, স্টেকহোল্ডারদের কাছে এর গ্রহণযোগ্যতা, সক্ষমতা অর্জন এবং সামগ্রিক পরিবেশের ওপর নির্ভর করবে।

ব্যালট পেপারের পরিবর্তে র‌্যানডম ভিত্তিতে ইভিএম মেশিন ব্যবহারের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিবেশ অনূকুলে থাকলে জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে।

সাধারণ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারে আওয়ামী লীগ সমর্থন জানালেও বিএনপি ও এর সমমনা দলগুলো এর বিরোধিতা করেছে।

২০১০ সাল থেকে স্থানীয় নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ইভিএম ব্যবহার শুরু হয়। এটিএম শামসুল হুদা নেতৃত্বাধীন ইসি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পাইলট ভিত্তিতে কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে প্রথম ইভিএম ব্যবহার করেছিল। তবে সেগুলো বিদ্যমান ইভিএম থেকে ভিন্ন ছিল। তথ্য সূত্র- ইউএনবি।

আজকের বাজার/এমএইচ