সেই ‘শত্রু’ রোনালদিনহোকে প্রশংসায় ভাসালেন গার্দিওলা

হ্যাঁ, অনেকটা দেরি হয়ে গেছে। পেরিয়ে গেছে অনেকটা সময়। তবে দেরিতে হলেও শত্রু-তিক্ততার চাদর খুলে রোনালদিনহোকে প্রশংসায় ভাসালেন পেপ গার্দিওলা। ম্যানচেস্টার সিটির স্প্যানিশ কোচ প্রশংসাই শুধু করলেন না, সংকীর্ণতার ভেড়া ডিঙিয়ে ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তিকে তুলে ধরলেন অন্য উচ্চতায়। বললেন, লিওনেল মেসির আগে পর্যন্ত বার্সেলোনায় রোনালদিনহোই ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। সত্যিকারের মাঠে নেতা। রোনালদিনহোই পুনরুদ্ধার করেছিলেন বার্সেলোনার হারানো আত্মমর্যাদা। রোনালদিনহো জাদুতেই বার্সেলোনা ফিরে পায় বিশ্বসেরা রূপ।

গার্দিওলা সাবেক শিষ্যের স্তুতি গাইলেন বটে; তবে সেটা রোনালদিনহো আনুষ্ঠানিকভাবে ফুটবলকে বিদায় জানানোর পর। সাবেক কোচের মুখে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা শোনার পর রোনালদিনহোর হয়তো আফসোসই হচ্ছে। অবচেতন মনেই হয়তো প্রশ্নের জাল বুনছেন, আর ক’টা দিন আগে যদি এই প্রশংসাটা করতেন!

শুধু রোনালদিনহোর নয়, আফসোসটা হয়তো অনেক ফুটবলপ্রেমীরও। গার্দিওলা যদি এই প্রশংসাটা তিনি অবসর নেওয়ার আগে করতেন, কে জানে, রোনালদিনহো হয়তো নতুন করে ক্যারিয়ার শুরু করার অনুপ্রেরণাও পেয়ে যেতে পারতেন! বিশ্বসেরা রোনালদিনহোর ‘অন্ধকারে’ হারিয়ে যাওয়ার শুরুটা যে হয়েছিল এই গার্দিওলার সঙ্গে তিক্ততার মধ্য দিয়েই!

২০০৩ সালে পিএসজি ছেড়ে বার্সেলোনায় যোগ দেন রোনালদিনহো। দলে যোগ দিয়েই পায়ের মোহনীয় জাদুতে বার্সেলোনাকে নতুন করে জাগিয়ে তুলেন রোনালদিনহো। ক্লাবকে দুইবার লিগ, একবার চ্যাম্পিয়ন্স, দুইবার সুপার কোপা ডি এস্পানার শিরোপা জেতানো রোনালদিনহো হয়ে উঠেন বার্সেলোনার প্রতীক। পুরো ফুটবল দুনিয়া শিল্পী রোনালদিনহোর শৈল্পিক নৈপূণ্যে মোহিত। ঠিক তখনোই ছিঁড়ে যায় ক্লাব বার্সেলোনার সঙ্গে দুই বারের ফিফা বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার জেতা রোনালদিনহোর নিবিঢ় সম্পর্কের বন্ধন। বার্সার-রোনালদিনহোর সম্পর্কের সুতোটা ছিঁড়ে দেন আসলে পেপ গার্দিওলা!
২০০৮ সালে বার্সেলোনার মূল দলের কোচের দায়িত্ব নিয়েই নিজের বিস্ময়কর এক পরিকল্পনার কথা জানান গার্দিওলা। দায়িত্ব নিয়েই তিনি ঘোষণা করেন, তার পরিকল্পনায় রোনালদিনহো নেই! রোনালদিনহো তার পরিকল্পনার সঙ্গে যায় না!

শুধু তাই নয়, বিশ্বসেরা রোনালদিনহোকে এসি মিলানের কাছে বিক্রিও করে দেন গার্দিওলা! সম্পর্কের তিক্ততায় জড়িয়ে এই ক্লাব বদলই ঘুরিয়ে দেয় রোনালদিনহোর ক্যারিয়ারের বাক। হতাশা থেকেই কিনা বিশ্বসেরা রোনালদিনহোর মননে এক নম্বর পছন্দের বিষয় হয়ে উঠে মদ, নারী ও নৈশক্লাব। যার সঙ্গে সম্পর্কটা তার আত্মার, সেই ফুটবল হয়ে যায় দুই নম্বর অগ্রাধিকার।

সেই যে অন্ধকারে পা ফেলা। সেই কানা গলি থেকে আর বেরোতে পারেননি। দিনে দিনে বরং ডুবে যান গহীন থেকে গহীনে। ফুটবল থেকে হারিয়ে গিয়ে ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি ফুটবল ইতিহাসে ‘প্রতিভা অপচয়ে’র করুন গল্প।

অনেকেই রোনালদিনহোর ‘প্রতিভা অপচয়ে’র গল্পের পেছনে গার্দিওলা ছায়া দেখেন! তিনি ওভাবে তাকে বার্সা ছাড়া না করলে হয়তো রোনালদিনহোর এমন করুণ পরিণত হতো না!

২০০৮ সালে রোনালদিনহোর সেই ক্লাব ছাড়ার ঘটনা নিয়ে গণমাধ্যমে অনেক লেখালেখি হয়েছে। তবে রোনালদিনহো বা গার্দিওলা কখনোই কিছু বলেননি। তবে কয়েক মাস আগে সে ঘটনা নিয়ে প্রথম বারের মতো মুখ খুলে রোনালদিনহো কোচ গার্দিওলাকে আড়াল করার চেষ্টাই করেন। দাবি করেন, নিজের ইচ্ছাতেই বার্সা ছেড়েছিলেন তিনি।

অবশেষে রোনালদিনহো বিষয়ে কথা বললেন গার্দিওলাও। তবে সেই ঘটনা নিয়ে নয়। আনুষ্ঠানিভাবে পেশাদার ক্যারিয়ারকে বিদায় জানানো সাবেক শিষ্যকে ভাসালেন প্রশংসায়। ২০১৫ সালের পর থেকেই পেশাদার ফুটবলের বাইরে থাকা রোনালদিনহো সম্প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে ফুটবল ক্যারিয়ারের ইতি টেনেছেন। তার পর থেকেই বিশ্ব ফুটবলপ্রেমী-বোদ্ধারা ৩৭ বছর বয়সী ব্রাজিল কিংবদন্তিকে ভাসাচ্ছেন প্রশংসায়। তাতে শরীক হলেন গার্দিওলাও।

আজ শনিবার রাতেই নিউক্যাসলের বিপক্ষে লিগ ম্যাচ ম্যানচেস্টার সিটির। এই ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে সাবেক শিষ্যের প্রশংসা করে গার্দিওলা বলেছেন, ‘বার্সেলোনার তৎকালীন সভাপতি হুয়ান লাপোর্তা যখন তার সঙ্গে চুক্তি করেন, সেই ছিল মাঠে বার্সেলোনার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। তার প্রভাবই ছিল সবচেয়ে বেশি। সত্যিই ওই সময়ে বার্সেলোনার দুরাবস্থা যাচ্ছিল। সে এসেই ক্লাবের আত্মমর্যাদা পুনরুদ্ধার করে। বার্সাকে নতুন করে জাগিয়ে তুলে।’

বার্সেলোনার সাবেক কোচ সঙ্গে যোগ করেছেন, ‘বার্সেলোনায় অবিশ্বাস্য সময়ই কাটিয়েছে সে। সে লিগ এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছে। সে ছিল অন্যে মানের খেলোয়াড়। সত্যি বলতে, মেসি আসার আগ পর্যন্ত বার্সেলোনায় তার মতো প্রভাব বিস্তারকারী আর কাউকে দেখিনি আমি। আমি তার সুন্দর ভবিষ্যত কামনা করছি। তার প্রভাব ছিল অবিশ্বাস্য। শুধু বার্সেলোনায় নয়, পুরো ফুটবল বিশ্বেই।’
আজকের বাজার: সালি / ২০ জানুয়ারি ২০১৮