সেনা মোতায়েনের পরও নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যর্থ হওয়ায় ঐক্যফ্রন্টের নেতকর্মীরা হতাশ

সেনাবাহিনী মাঠে নামলে নির্বাচনীয় প্রচারণায় গতি ফিরবে বলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আত্মবিশ্বাস থাকলেও শেষ মুহূর্তে এসেও বিশেষ করে রাজধানীতে প্রচারণায় ব্যর্থ হওয়ায় জোটটির নেতকর্মীদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে।

নির্বাচনের দুদিন আগে ২৭ ডিসেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করার পরিকল্পনা থাকলেও ঢাকা মহানগর পুলিশ এখনো অনুমতি না দেয়ায় ঐক্যফ্রন্টের এ পরিকল্পনাও ভেস্তে যাওয়ার পথে।

ঐক্যফ্রন্টের মধ্যম সারির নেতারা মনে করেন, কার্যকর কৌশল ও শক্তিশালী নেতৃত্বের অভাবে ঐক্যফ্রন্ট নেতারা তৃণমূলে তাদের শক্তি ও নির্বাচনী উত্তেজনা সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়েছেন।

ঢাকার অধিকাংশ আসনের নির্বাচনের সম্ভাব্য ফলাফল সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করে তারা বলছেন, জোটের প্রার্থীরা অধিকাংশ এলাকায় ভোটারদের কাছে পৌঁছাতে এবং কর্মীদের মধ্যে নির্বাচনী মনোভাব সৃষ্টি করতে পারেননি।

তবে জোটের সিনিয়র নেতারা বলছেন, তারা ৩০ ডিসেম্বরের আগে শক্তি হারাতে চান না। কারণ সহিংসতা ও গ্রেপ্তার এড়াতে তারা সীমিত আকারে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

শীর্ষস্থানীয় ঐক্যফন্ট নেতারা বলেন, তারা এখন নির্বাচনী প্রচারণাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না, কারণ তারা প্রায় নিশ্চিত যে ৩০ ডিসেম্বর ভোটারদের নির্বাচনী কেন্দ্রে নিতে পারলে ও ওইদিন প্রকৃত শক্তি প্রদর্শন করতে পারলে তার সফলতা পাবেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘ক্ষমতাসীন দল আমাদের নির্বাচনী প্রচারে হামলা ও বাধা দেয়ার মাধ্যমে সহিংসতায় লিপ্ত হওয়ার জন্য উসকানি দেয়ার চেষ্টা করছে।’

‘তাই আমরা নেতা-কর্মীদের সহিংসতায় না জড়ানো এবং ভোটের দিনের জন্য শক্তি সঞ্চয় করে রাখতে বার্তা দিয়েছি। এ মুহূর্তে আমরা প্রতিরোধের চেষ্টা করলে কেবল বিপদকেই টেনে আনা হবে’, যোগ করেন তিনি।

তবে ঢাকা মহানগর বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক ওসমান গণি টুটুল বলেন, তৃণমূলে কর্মীদের মনোবল বৃদ্ধির জন্য জোট নেতাদের দ্রুত নির্বাচনী প্রচারণা ত্বরান্বিত করা উচিত।

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের নেতারা বলেছিলেন সেনাবাহিনী নামলে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে, কিন্তু তার উল্টোটা ঘটেছে, পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। প্রতিদিন আমাদের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তাই আমাদের বাধা ও গ্রেপ্তারের ভয় পাওয়া উচিত নয়।’

ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নেতা শামসুল আলম বলেন, ‘এটাই বাস্তব যে পরিস্থিতি এখন দাঁড়িয়েছে দল এবং জোটের নেতারা ক্রমেই নির্বাচনের মাঠ থেকে ছিটকে পড়ছেন। কিন্তু খালেদা জিয়া জেলের বাইরে থাকলে পরিস্থিতি অন্যরকম হতে পারত।’

তিনি আরও বলেন, ‘ড. কামাল হোসেন অসাধারণ ভূমিকা পালন করছেন, কিন্তু ভঙ্গুর স্বাস্থ্যের কারণে তিনি নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারছেন না। এখন আমাদের দলের পরিকল্পনা নেয়া উচিত যাতে অন্তত এক দিনের জন্য হলেও আমরা আমাদের শক্তি দেখাতে পারি।’

গণফোরামের প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পথিক বলেন, তাদের জোটের প্রার্থীরা বিশেষ করে ঢাকার প্রার্থীরা পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক বাধার কারণে নির্বাচনী প্রচারণা ত্বরান্বিত করতে পারেননি।

সারা দেশের মানুষ ধানের শীষে ভোট দেয়ার জন্য প্রস্তুত জানিয়ে এ নেতা বলেন, এখন আমাদের একটাই লক্ষ্য, আগামী ৩০ ডিসেম্বর সারাদেশের মানুষকে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসা।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আমাদের আশা ছিল সেনাবাহিনী মাঠে নামার পরে নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে ভালোভাবে প্রচারণা চালনো। কিন্তু পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।’

তিনি অভিযোগ করেন, সোমবার সেনাবাহিনী নামার প্রথম দিনে ২৮টি নির্বাচনী আসনে ১৯ জন প্রার্থীসহ কয়েকশ নেতা-কর্মী পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের হামলায় আহত হয়েছেন।

পুলিশ ‘মিথ্যা’ মামলায় এখনো নেতা-কর্মীদের গণগ্রেপ্তার অব্যাহত রেখেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সোমবার পর্যন্ত আমাদের সাত হাজার ২১ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

নাগরিক ঐক্যর আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নেতাকর্মীদের মধ্যে কিছুটা হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। ‘কিন্তু নিয়মিত যোগাযোগ ও উৎসাহ উদ্দীপনার মাধ্যমে তাদের মনোবল ঠিক রাখার চেষ্টা করছি।’

‘যতটা সম্ভব শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনী প্রচারণা চালনোর চেষ্টা করছি’ জানিয়ে গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি আগামী ৩০ ডিসেম্বর ব্যালটের মাধ্যমে জনগণ উপযুক্ত জবাব দেবে। তাই আমরা নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ এড়িয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছি।’

তথ্যসূত্র-ইউএনবি

আজকের বাজার/এমএইচ