১৫৮ কোটি টাকা লোপাট: ইউএফএস-এর এমডির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট

শেয়ারবাজার থেকে ১৫৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কম্পানি ইউনিভার্সাল ফাইন্যান্সিয়াল সলিউশনের (ইউএফএস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ হামজা আলমগীরের পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।

আগামী ৩০ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) এ বিষয়ে জানাতে বলা হয়েছে।

বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াত সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে আজ এ আদেশ দেন। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন নজরে আসার পর রুলসহ আদেশ দেন আদালত।

শেয়ারবাজারে চার মিউচুয়াল ফান্ডের ১৫৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে ইউনিভার্সাল ফাইন্যান্সিয়াল সলিউশনের (ইউএফএস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ হামজা আলমগীরের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ হবে না-জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। বিএসইসি, দুদক, আইসিবি ও বিএফআইইউকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

‘শেয়ারবাজারে ইউএফএস নজিরবিহীন কেলেঙ্কারি, ১৫৮ কোটি টাকা নিয়ে দুবাই পালিয়েছে এমডি’ শিরোনামে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন দুদকের আইনজীবী মো.খুরশীদ আলম খান। পরে আদালত এ আদেশ দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।

আইনজীবী খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, বছরের প্রথম দিন একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন আদালতকে দেখিয়েছি। আদালত এই প্রতিবেদনের সত্যনিষ্ঠতা জানতে বিএসইসি, আইসিবি ও প্রতিবেদকের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছেন। আগামী ৩০ দিনের মধ্যে এ ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। আর দুদক ও বিএফআইইউকে এ ব্যাপারে অনুসন্ধান চালাতে বলেছেন আদালত।

তিনি বলেন, প্রতিবেদন অনুযায়ী সৈয়দ আলমগীর ২০১৮ সাল থেকে টাকা পাচার করছে। অথচ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো কিছুই জানে না। আমি বলেছিলাম অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইন- ২০১২ অনুযায়ী সিঙ্গাপুরে পাচার করা টাকায় নিষেধাজ্ঞা দিতে। কিন্তু আদালত নিষেধাজ্ঞা না দিয়ে রুলসহ আদেশ দিয়েছেন। তবে বিষয়টি আদালত গুরুত্বসহকারে নিয়েছে। বিএসইসি ব্যাখ্যা পাওয়া গেলে সবকিছু পরিষ্কার হওয়া যাবে বলে বলেন দুদক আইনজীবী।

প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, শেয়ারবাজারে চার মিউচুয়াল ফান্ডের ১৫৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে ইউনিভার্সাল ফাইন্যান্সিয়াল সলিউশন (ইউএফএস) নামের একটি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কম্পানি। এই টাকা নিয়ে গত বছর ১৩ অক্টোবর দুবাই পাড়ি দেন তিনি। বর্তমানে সৈয়দ হামজা আলমগীর সিঙ্গাপুরে আছেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। বিএসইসির তদন্তের বরাত দিয়ে এ প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ২০১৮ সাল থেকে তিনি এ টাকা সরানোর প্রক্রিয়া শুরু করেন। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকের প্রতিবেদন জালিয়াতি এবং ভুয়া এফডিআর (ফিক্সড ডিপোজিট রেট) দেখিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) অন্ধকারে রাখা হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে চার বছর নিষ্ক্রিয় ছিল ফান্ডের ট্রাস্টি ও কাস্টডিয়ান (গ্যারান্টি দেওয়া প্রতিষ্ঠান) আইসিবি। এরই মধ্যে কম্পানিটির সঙ্গে আর্থিক লেনদেন না করতে বিএসইসি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ২০১৮ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি বিদেশে অর্থপাচার করছে। এক্ষেত্রে চারটি মিউচুয়াল ফান্ড থেকে ১৫৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা আত্মসাতের তথ্য মিলেছে। আবার তদন্তকালে পোর্টফোলিওতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে আরও অর্থ হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। শেয়ার বিক্রির এই তথ্য যোগ হলে আত্মসাতের অর্থের অংক আরও বাড়বে। এক্ষেত্রে কমিশন ধারণা করছে, প্রায় ৩০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এ চক্র। খবর-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান