ঈদের আগে ত্বকের যত্ন

ঈদুল আযহায় আর বাকি ৩ দিন। কোরবানির মাংস, পরিবার পরিজনদের আপ্যায়নের পরিকল্পনা, বাজার সদাই নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটছে নিশ্চয়ই। এর মধ্যে নিজের যত্নও তো নেওয়া চাই। নইলে কাজের ক্লান্তিতে ঈদের দিনও মলিন দেখাবে।

যত্ন নেওয়ার পর্বগুলো সেরে ফেলতে হবে দুই ভাগে। বাড়ি ও পার্লার। দুই-তিন দিন আগে থেকে প্রস্তুতি শুরু করা উচিত। জেনে নিন, কীভাবে ঈদের আগে যত্ন নেবেন নিজের।

পার্লারে

ঈদের আগেই নিজের ছোট-বড় পরিচর্যা করে ফেলতে হবে। কারণ ঈদের দিন ব্যস্ততা থাকবে। ত্বকের ধরন বুঝে ফেসিয়াল করতে হবে। আর তা তিন-চার দিন আগে করতে পারলে ভালো। ভ্রু প্লাকও করিয়ে নিন তিন-চার দিন আগেই। ভ্রুতে নতুন শেপ দিতে চাইলে এখনই নয়। কারণ উৎসবের ঠিক আগেই নতুন শেপ মুখের গড়নের সঙ্গে মানানসই না-ও হতে পারে। চুলে রং চাইলে রুট কালার করুন। অবশ্যই ঈদের দু-তিন দিন আগেই। ম্যানিকিওর ও পেডিকিওর করতে চাইলে ঈদের দুই দিন আগে করুন।

বাড়িতে

কোরবানির ঈদে ঘরে মাংস কাটা, প্যাকেট করার প্রক্রিয়াসহ আরো অনেক কাজ করতে হয়। কাজের চাপে অনেকেই এক কাজ শেষ করে হাত কোনোমতে পানিতে ধুয়ে হয়তো অন্য কাজে ঢুকে যাচ্ছেন। অথচ ক্ষতি হাতের ত্বকেরই হচ্ছে। তাই জেনে নিন কিভাবে হাত ধোবেন।

এ ক্ষেত্রে ২০ সেকেন্ড সময় নেবেন হাত ধোয়ার জন্য। প্রথমে হাত ভেজান, এরপর হাতে লিকুইড সাবান লাগান। হাতের আঙুলের ভেতরের অংশ ও নখ পরিষ্কার করুন। এর পর পানি দিয়ে হাত ধুয়ে তোয়ালে দিয়ে হাত মুছে নিন।

সারা দিনের মাংস কাটা-ধোয়া, প্যাকেটজাত ও রান্না করতে গিয়ে অনেকের নখ ভেঙে যায়। যাঁদের অনেক কাজ করতে হবে, তাঁরা ঈদের আগে ম্যানিকিওর করে নখ ছোট করে ফেলাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। মাংস কাটা ও বাছার কারণে অনেকের হাত ধোয়ার পরও আঁশটে গন্ধ থেকে যায়। তারা হাতে সামান্য হলুদের গুঁড়া মেখে নিন। এরপর সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করুন। গন্ধ চলে যাবে। এ ছাড়া ঈদের কয়েক দিন আগ থেকেই রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে হাতে লোশন লাগান। মনে রাখবেন, হাতের ত্বক যতটা সুরক্ষিত রাখবেন, ঈদের কয়েক দিনের ধকলে ঠিক ততটাই ত্বক ও নখের কম ক্ষতি হবে।

পায়ের যত্ন চাইলে বাড়িতেও সেরে নিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে যা করবেন তা হলো, গোসলের আগে কুসুম গরম পানিতে এক টেবিল চামচ লবণ, কয়েক ফোঁটা শ্যাম্পু দিয়ে পা ভিজিয়ে রাখুন। পামস্টোন দিয়ে ঘষে পায়ের ময়লা ও মরা কোষ তুলে ফেলুন। কিউটিক্যাল কাটার দিয়ে নখের পাশের কিউটিক্যাল ফেলে দিন। ব্রাশে অল্প শ্যাম্পু লাগিয়ে হাত-পায়ের নখ পরিষ্কার করুন। তারপর পরিষ্কার পানি দিয়ে হাত-পা ধুয়ে যেকোনো প্যাক লাগান। গোসল শেষে হাত-পায়ে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন।

অনেকটা সময় রান্নাঘরে চুলার কাছে থাকার কারণে মুখের ত্বকেও প্রভাব পড়ে। তাই ঘুমানোর আগে চাইলে ঘরোয়া প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। বাড়িতে বিভিন্ন ধরনের ফল ও সবজি থাকেই। আপেল, কলা, বেদানা, পাকা পেঁপে একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। তৈলাক্ত ত্বক হলে এগুলোর সঙ্গে শসা মিশিয়ে ব্লেন্ড করে নিন। কাচের বয়ামে করে ফ্রিজে রাখুন। মুখে লাগানোর আগে মিশিয়ে নিন বেসন অথবা চালের গুঁড়া। শুষ্ক ত্বকের জন্য শসার পরিবর্তে গাজর দিন। এই ফেসপ্যাক ত্বকে ব্যবহারে লোমকূপ পরিষ্কার হবে। ত্বক ভালো ও উজ্জ্বল হবে। ক্লান্তিতেও অনেক সময় চোখের নিচেও কালচে দাগ পড়ে। তাই মাঝেমধ্যেই আলু, টমেটো ও শসার রস লাগিয়ে রাখুন। ক্লান্তিভাব কমবে।

কাজের চাপ ও যত্নের অভাব এবং পানি কম পানের কারণে অনেকের ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। আবার অনেকের ত্বক অতিরিক্ত তৈলাক্ত হয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে শুষ্ক ত্বকের যত্নে টক দই, চন্দন, অ্যালোভেরা একসঙ্গে ভালো করে মিশিয়ে ত্বকে লাগান। ত্বক মসৃণ ও নরম থাকবে। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য টমেটো, মধু, নিমপাতা, মসুর ডাল একসঙ্গে মিশিয়ে ব্লেন্ড করে লাগান। এতে ত্বকের অতিরিক্ত তেল কমে যাবে এবং ব্রণ দূর হবে। অনেকের মিশ্র ত্বক চুলার আঁচের সংস্পর্শে তৈলাক্ত হয়ে ওঠে এবং মুখের চামড়া উঠতে থাকে। এ ক্ষেত্রে কচি ডাবের শাঁস, কমলার রস, বেসন ও কালো জিরার তেল একত্রে মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে ত্বকে ব্যবহার করুন। এতে ত্বক নরম ও উজ্জ্বল হবে।