পদ্মা সেতু দৃশ্যমান

এগিয়ে চলেছে মেট্রোরেলের কাজ

স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন দৃশ্যমান বাস্তবতা। সব প্রতিকুলতাকে জয় করে এরই মধ্যে দুটি পিলারের ওপর প্রথম স্প্যান (সুপার স্ট্রাকচার) স্থাপন করার পর চোখে দেখা যাচ্ছে পদ্মা সেতু। এই সেতুর সঙ্গেই খানিকটা পাল্লা দিয়ে রাজধানীতে চলছে বহুল প্রত্যাশিত মেট্রোরেলের কাজ। সরকারের এ দুটি বড় প্রকল্প নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ছিল বছরজুড়ে। এর সঙ্গে ঢাকার বাসিন্দাদের কাছে মোবাইল অ্যাপভিত্তিক পরিবহন সেবার কথাও উচ্চারিত হয়েছে বেশ জোরেসোরে।

পদ্মা সেতু: ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতু চালুর ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এখন পর্যন্ত অর্ধেক কাজ শেষ হয়েছে। প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে এই সেতু নির্মাণে। দ্বিতল এই সেতুর উপর দিয়ে চলবে বাস এবং নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন।

পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হলে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বড় ভ’মিকা রাখবে বলে করছেন অর্থনীতিবিদরা। শুরুর দিকে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছে এমন অভিযোগ তুলে অর্থায়ন করা থেকে সরে দাঁড়ায় বিশ্বব্যাংক। পরে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজে হাত দেয় সরকার। সেতুর কাজ অনেকখানি এগিয়ে যাওয়ার পর বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ ভিত্তিহীন প্রমাণ হয়েছে।

চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি মূল সেতুর কাজ করছে। আর নদীশাসনের কাজ করছে চীনেরই আরেক প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো করপোরেশন। এ ছাড়া দুই প্রান্তে টোল প্লাজা, সংযোগ সড়ক, অবকাঠামো নির্মাণ করছে দেশীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

মেট্রোরেল: বাঁচবে সময়, বাঁচবে তেল; জ্যাম কমাবে মেট্রোরেল স্লোগান নিয়ে এগিয়ে চলেছে দেশের প্রথম মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ। হলি আর্টিজানে হামলায় ছয় জাপানি প্রকৌশলী নিহত হওয়ার কারণে মাঝপথে বেশ কিছুদিন মেট্রোরেলের কাজ বাধাগ্রস্ত হয়। পরে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা এবং যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়ায় অল্প সময়ের মধ্যেই বিদেশিরা কাজ শুরু করেছে। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর থেকে ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের কাজে সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে ২৫ শতাংশ।

মোট ছয়টি প্যাকেজে আটটি দরপত্রের মাধ্যমে মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়ন করার কাজে হাত দেয় সরকার। প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) দেবে ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা। আর সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন হচ্ছে ৫ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা। প্রায় ২১ কিলোমিটার দীর্ঘ মেট্রোরেল প্রকল্পে থাকবে ১৬টি স্টেশন। উত্তরা তৃতীয় ফেইজ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এবং বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত এ প্রকল্পের সম্পূর্ণ কাজ ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

অ্যাপভিত্তিক পবিহন সেবার জনপ্রিয়তা: গণপরিবহন সংকট, অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা আর সিএনজি চালকদের দাপটে নাকাল যাত্রীদের অনেকেই এখন নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন মোবাইল ফোনে অ্যাপসভিত্তিক গাড়ির শেয়ার নেটওয়ার্ক উবারের ওপর। ২০১৬ সালের নভেম্বরে ঢাকায় উবারের সেবা চালুর পর বিআরটিএ সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এই সেবাকে অবৈধ ঘোষণা করেছিল। কিন্তু দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠা এই পরিবহন সেবা বন্ধ না করে নীতিমালা করার কাজে হাত দিয়েছে সরকার।

উবারের জনপ্রিয়তার ধারায় স্থানীয় আরও কিছু প্রতিষ্ঠান অ্যাপসভিত্তিক মোটরবাইক সেবা শুরু করেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে পাঠাও, স্যাম, চলো, আমার বাইক, আমার রাইড, ময়ুর, ওয়েজ। বিকল্প এসব পরিবহন সেবার জনপ্রিয়তা বাড়ছে দিনে দিনে। পরিবহন সেবার পাশাপাশি বহু মানুষের কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হচ্ছে। অন্যদিকে সিএনজি চালকদের দৌরাত্ম্যও কমেছে অনেকখানি। এসব অ্যাপস বন্ধের দাবিতে লাঘাতার ধর্মঘটের হুমকি দিয়েছেন তারা।

ফ্লাইওভার: যানজটের তীব্র যন্ত্রণা থেকে রাজধানীবাসী রেহাই পাবেন- এমন আশা নিয়ে মৌচাক-মালিবাগ-মগবাজার ফ্লাইওভারটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয় গেল ২৬ অক্টোবর। এতে যানজটের তীব্রতা যেমন কমেছে, তেমনি নির্মাণকালীন দূর্ভোগ থেকে নিস্তার পেয়েছেন নগরবাসী। যদিও অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ মনে করেন, শহরের মধ্যে এভাবে অপরিকল্পিত ফ্লাইওভার নির্মানে সাময়িক যানজট সাময়িক কমালেও দীর্ঘমেয়াদে এর কোন সুফল আসবে না।

পায়রা বন্দর: পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলায় পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটি হবে বাংলাদেশের তৃতীয় বাণিজ্যিক সমুদ্র বন্দর। মোট ১৯টি অংশে পায়রা গভীর বন্দর বাস্তবায়ন করা হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- মূল অবকাঠামো নির্মাণ, নদী খনন, মাল্টিপারপাস টার্মিনাল, চারটি কন্টেইনার টার্মিনাল ও একটি এলএনজি টার্মিনাল, বিদ্যুৎকেন্দ্র, রেলপথসহ শিপইয়ার্ড স্থাপন ইত্যাদি।

সরকারের লক্ষ্য-২০১৮ সালের মধ্যে পায়রাবন্দর পুরোপুরি চালু এবং গভীর সমুদ্রবন্দর ২০১৯ সালে চালু করা। কিন্তু দাতাদের অর্থায়ন এখনও নিশ্চিত হয়নি।

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে : বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকা থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালি পর্যন্ত ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ চলছে। ২০১৫ সালের ১৭ আগস্ট প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। নগরবাসীর যানজটের ভোগান্তি লাঘবে সরকার ১২ হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজধানীর সড়ক, বিশেষ করে রেললাইনের ওপর দিয়ে এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে।

বিআরটি: যানজট নিরসনে গাজীপুর থেকে ঢাকার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং বিমানবন্দর থেকে কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত ‘বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট’ (বিআরটি) নির্মাণের কথা শুনে নগরবাসির মনে আশার সঞ্চার হলেও তাতে কিছুটা ছেদ পড়েছে। অর্থায়নের অভাব এবং নানা কারণে এই দুই প্রকল্পের নির্মাণকাজে কাক্সিক্ষত অগ্রগতি নেই। কবে হবে বিআরটি তা নিয়ে বছরজুড়ে আলোচনা ছিল যানজটে নাকাল নগরবাসীর মুখে।

বিআরটি বাস্তবায়নে বিদ্যমান সড়কের মাঝ বরাবর বিআরটি’র নির্ধারিত বাসের জন্য পৃথক লেন নির্মাণ করা হয়। মোড়গুলোয় বাসকে ওভারপাসের মাধ্যমে পার করা হয়। তাই এই বাস কখনো যানজটে আটকা পড়ে না। যানজট নিরসনে বিআরটি সবচেয়ে কার্যকর, ব্যয়ও অনেক কম।

আজকের বাজার:এনএল/ডিএস/এলকে ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭