প্রতিনিধি দল সহ গাজা সফরে ফিলিস্তিনি প্রধানমন্ত্রী

২ সেপ্টেম্বর সোমবার ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী রামি হামদাল্লাহ একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে গাজা পৌঁছান এবং অঞ্চলটিতে ফিলিস্তিনি সরকারের প্রশাসন ব্যবস্থা কায়েমের প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করেন। ফাতাহ ও হামাসের মধ্যে সমঝোতার অংশ হিসেবে প্রতিনিধিদল সহ গাজায় পৌঁছেছেন ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী।

স্থানীয় সময় সোমবার দুপুরে, ফিলিস্তিনি সরকারি কর্মকর্তা, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য ও ফিলিস্তিন জাতীয় মুক্তি আন্দোলন (ফাতাহ্‌) -এর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের নিয়ে গাজার উত্তরাঞ্চলের বেইত হানুন ক্রসিং চেকপয়েন্ট অতিক্রম করেন হামদাল্লাহ। পরে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য গোটা ফিলিস্তিন একক সরকারের অধীনে থাকা জরুরি।

তিনি বলেন, “প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের নির্দেশে আমরা গাজায় এসেছি। আমি জোর দিয়ে বলতে চাই, জর্দান নদীর পশ্চিম তীর ও গাজার ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক ঐক্য স্বাধীন ফিলিস্তিন প্রতিষ্ঠার জন্য জরুরি। আমরা গাজায় ফিরেছি এবং সমঝোতা ও জাতীয় ঐক্যের চাহিদা পূরণ করতে এসেছি।”

এর আগে, ২০০৭ সালের জুন মাসে ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন (হামাস) বল প্রয়োগের মাধ্যমে ফিলিস্তিন জাতীয় মুক্তি আন্দোলন (ফাতাহ্‌)-র কাছ থেকে গাজার নিয়ন্ত্রণ ছিনিয়ে নেয়। তখন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস জাতীয় ঐকমত্যের সরকার ভেঙ্গে দেন। জর্দান নদীর পশ্চিম তীর থাকে ফাতাহ্‌র নিয়ন্ত্রণে।

পরবর্তীতে ২০১১ সালের মে মাসে মিসরের মধ্যস্থতায় কায়রোতে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করে হামাস ও ফাতাহ্‌। ২০১২ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে, দু’পক্ষ কাতারে দোহা ঘোষণা প্রকাশ করে। তবে তখন এসব চুক্তি ও ঘোষণা বাস্তবায়িত হয়নি। চলতি বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর, আবারও মিসরের মধ্যস্থতায়, হামাস এক ঘোষণায় গাজায় নির্বাহী কমিটি ভেঙ্গে দেয়। এ কমিটি গাজা নিয়ন্ত্রণ করতো। এর মাধ্যমে গোটা ফিলিস্তিনে একটা ঐকমত্যের সরকার প্রতিষ্ঠার দুয়ার উন্মুক্ত হয়।

প্রধানমন্ত্রী হামদাল্লাহ সোমবারের সাংবাদিক সম্মেলনে ফিলিস্তিনের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐক্যের আহবান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, গাজায় নির্বাহী কমিটি ভেঙ্গে দেওয়া ছিল ফিলিস্তিনে অভ্যন্তরীণ সমঝোতা বাস্তবায়নের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তিনি সমঝোতার জন্য মিসরের প্রচেষ্টারও প্রশংসা করেন।

ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা মনে করি, প্রেসিডেন্টের প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়ায় গাজার নির্বাহী কমিটি ভেঙ্গে দেওয়ার সিদ্ধান্ত খুব গুরুত্বপূর্ণ এক পদক্ষেপ এবং এর ভিত্তিতে আমরা ঐক্যের জন্য প্রচেষ্টা চালাব। আমি দেশের শীর্ষনেতাকে কেন্দ্র করে জাতীয় সমঝোতা ও ঐক্য প্রতিষ্ঠার আহবান জানাই।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা গাজার সুষ্ঠু প্রশাসনের জন্য একাধিক কমিটি গঠন করবো। আশা করি আমাদের প্রচেষ্টায় গাজা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে এবং শিশু-কিশোরসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কষ্ট লাঘব হবে। গাজায় ইসরাইলি অবরোধের তীব্র বিরোধিতা করি আমরা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত এ অবরোধ থেকে গাজাকে মুক্ত করতে উদ্যোগ গ্রহণ করা।”

২০০৭ সাল থেকে গাজা অঞ্চলে অবরোধ আরোপ করে রেখেছে ইসরাইল। ৭০ শতাংশ স্থানীয় বাসিন্দা আন্তর্জাতিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। গাজায় বিদ্যুত ও পানীয় জলের তীব্র অভাব এবং মানুষের জীবন কষ্টময়। হামদাল্লাহ বলেন, এখন সরকারের প্রথম কাজ হচ্ছে, গাজায় মানুষের জীবনমান উন্নত করা।

সূত্র : সিআরআই

আজকের বাজার : এমএম / ৩ অক্টোবর ২০১৭