বিয়ানীবাজার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিম্নমানের খাবার, ঠিকাদারের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়

বিয়ানীবাজারের ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিম্নমানের খাবার সরবরাহের অভিযোগ তুলেছেন রোগীরা। জানা গেছে, হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার কারণে দীর্ঘ সাত বছর বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে খাবার সরবরাহের জন্য নতুন ঠিকাদার নিয়োগ স্থগিত রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে অন্তত ১০ বার সময় বর্ধিত করে একই খাবার সরবরাহ করছেন সঞ্জিব কর নামের এক ব্যক্তি।

সর্বশেষ গত বছরের ১৭ জুন পুনরায় আরও এক বছরের জন্য ঠিকাদার নিয়োগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ এনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়েছেন তিনি। চলতি বছরের জুনে এই নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এই সুযোগে কোন তদারকি না থাকায় রোগীদের মাঝে তিনি নিম্নমানের খাবার সরবরাহ করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরকারিভাবে সরবরাহ করা সকালের নাস্তা এবং দুপুর ও রাতের খাবার এতই নিম্নমানের যে এগুলো খেয়ে রোগীরা আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। এছাড়া রোগীদের খাবার যে রান্না ঘরে তৈরি হয় তার অবস্থাও চরম অস্বাস্থ্যকর। গত কয়েক বছর থেকে এ অবস্থা চলতে থাকলেও সংশ্লিষ্টদের তাতে কোন গরজ নেই। জানা যায়, ৫০ শয্যার এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বেশিরভাগ আবাসিক রোগী মহিলা ও শিশু। সিলেট জেলার অন্যান্য উপজেলা থেকে এই প্রতিষ্ঠানটি ভালো মানের সেবা দেয়ায় এখানে রোগীর সংখ্যা বেশি। একাধিকবার হাসপাতালটি জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছে। বিশেষ করে সিজারিয়ান অপারেশনে সফলতার কারণে দেশব্যাপী সাড়া ফেলেছে এ প্রতিষ্ঠান। সেবার মান নিয়ে এ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো বড় ধরণের অভিযোগ নেই। কিন্তু খাবার সরবরাহ নিয়ে রোগীদের অভিযোগের শেষ নেই। এখানে বোয়াল মাছের বদলে রোগীদের পাঙ্গাস মাছ দেয়া হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অন্যান্য যেসব খাবার সরবরাহ করা হয় সেগুলোও অস্বাস্থ্যকর।

হাসপাতালের প্রধান সহকারী রফিক উদ্দিন বলেন, কে.বি সাইন নামক একটি প্রতিষ্ঠান গত কয়েক বছর থেকে এখানে খাবার সরবরাহ করছে। ২০১৩ সালে খাবার সরবরাহের ক্ষেত্রে নতুন টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ করা হলে সংক্ষুব্ধ হয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার সঞ্জিব কর একই বছরে হাইকোর্টে একটি রিট মামলা (নং ১১৬৪৮) দায়ের করেন। এরপর থেকে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা নিয়ে তিনিই এখনও পর্যন্ত খাবার সরবরাহ করছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রোগীদের সপ্তাহে তিন দিন মাংস ও চার দিন মাছ সরবরাহের কথা থাকলেও ১০ দিনেও মাংস সরবরাহ করা হয়না। বাকি দিন রুই, কাতল ও মৃগেল মাছের বদলে দেয়া হয় পাঙ্গাস ও তেলাপিয়া মাছ। মাছের মাথা ও লেজ বাদ দিয়ে রোগীদের দেয়ার নিয়ম থাকলেও তাও মানা হচ্ছে না। চিকন চালের বদলে রোগীদের খাওয়ানো হয় মোটা ও নিম্নমানের চাল। রোগীরা সাধারণত ওই খাবার খেতে চান না।

আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ও নার্সিং সুপার ভাইজারের উপস্থিতিতে সরবরাহকৃত মালামাল রান্নার জন্য প্রস্তুতির কথা বলা হলেও তা করা হয় না। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার তার ইচ্ছামাফিক পণ্য সরবরাহ করে থাকেন। রোগীদের খাসির মাংসের বদলে ব্রয়লার, রুই মাছের বদলে পাঙ্গাস ও তেলাপিয়া মাছ দেয়া হলেও সরকারি নিয়মে খাসি ও রুই মাছের বিল উত্তোলন করছেন ঠিকাদার। হাসপাতালের বাবুর্চি নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান, এখানে রোগীদের খাবারের কোন তালিকা নেই। ঠিকাদাররা যখন যা দেন তাই আমরা রান্না করে সরবরাহ করি।

হাসপাতালে ভর্তি শ্বাসকষ্টের রোগী আব্বাছ উদ্দিন (৬৫) জানান, হাসপাতাল থেকে সকালে যেসব পাউরুটি সরবরাহ করা হয় তা মুখে দেয়া যায়না। আরেক রোগী রুবিনা বেগম (২৯) মাছ-মাংস রান্নায় মসলা কেবলমাত্র ছোঁয়ানো হয় বলে অভিযোগ করেন। এছাড়া ভাতও দুর্গন্ধযুক্ত বলে তিনি জানান। রোগীরা অভিযোগ করেন, অনেক সময় ভাতে মৃত তেলাপোকাসহ বিভিন্ন ধরণের পোকা ও ময়লা জিনিস পাওয়া যায়। অনুসন্ধানে জানা যায়, কে.বি সাইনের স্বত্তাধিকারী সঞ্জিব কর দীর্ঘদিন থেকে হাসপাতালে খাবার ও মনোহারী দ্রব্য সরবরাহ এবং ধোলাই’র টেন্ডারে অংশ নেন এবং নিয়মিত তিনি টেন্ডারও পান। শুধুমাত্র ২০১৩ সালে এর কিছুটা ব্যাতিক্রম হওয়ায় তিনি বাদী হয়ে উচ্চ আদালতে রিট করায় আদালত তার পক্ষেই রায় দেন। এ প্রসঙ্গে সঞ্জিব করের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এমনকি তার মোবাইল ফোনে ম্যাসেজ দিয়েও কোন সদুত্তর পাওয়া যায়নি। বিয়ানীবাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: মোয়াজ্জেম আলী খান বলেন, নিম্নমানের খাবার সরবরাহের বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব। রোগীদের স্বাস্থ্য নিয়ে কারো ছিনিমিনি খেলতে দেয়া হবেনা বলে তিনি সাফ জানিয়ে দেন। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে আপিল করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একাধিক চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যদি এ বিষয়ে ব্যবস্থা না নেয় তাহলে তাদের কিছু করার নেই বলেও তিনি অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন। সূত্র-ইউএনবি

আজকের বাজার/আখনূর রহমান