রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য পূরণই বড় চ্যালেঞ্জ

সরকারের রাজস্ব আহরণের উপর নির্ভর করছে আগামী ২০২০-২০২১ অর্থ বছরের আকার। আর এটিই হবে আগামী বাজেটের নতুন চ্যালেঞ্জ। একইসঙ্গে করোনা ভাইরাসের চাপে থাকা চলতি অর্থবছরের বাজেট কতটা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে সেটাও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে মন্তব্য করছেন অর্থনীতিবিদরা।

তবে আগামী অর্থবছরের বাজেট তিন মাসের জন্য অন্তবর্তীকালীন একটি বাজেট দেওয়া হবে না কি পূর্ণাঙ্গ অর্থবছরের বাজেট দেওয়া হবে সেটা নিয়েও দ্বিধায় রয়েছে অর্থমন্ত্রণালয়।

জানা গেছে, কৃষি ও স্বাস্থ্যখাতকে প্রাধান্য দিয়ে আগামী অর্থবছরের বাজেটের সম্ভাব্য আকার হতে পারে পাঁচ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি আকার ধরা হবে দুই লাখ ২৯ হাজার ৯১০ কোটি টাকা। তবে শেষ মুহূর্তে এটির আকার বেড়ে দুই লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা হতে পারে। বাজেট ঘাটতি গিয়ে দাঁড়াবে পৌনে দুই লাখ কোটি টাকা। জিডিপি’র অংশ হিসেবে যা কিনা পাঁচ শতাংশের কিছু ওপরে। উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরে বাজেটের আকার রয়েছে পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা।

নতুন অর্থ বছরের বাজেট নিয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এর ফেলো ও অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘আগামী ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নে সরকারকে সব চেয়ে বেশি নজর দিতে হবে রাজস্ব আহরণের দিকে। কারণ করোনাভাইরাসের কারণে সব কর্মকাণ্ড এলোমেলো হয়ে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘কোথা থেকে আর্থিক সংস্থান হবে সে দিকে নজর দিতে হবে। রাজস্ব আহরণ কীভাবে হবে। বিদেশি উৎস থেকে কী পরিমাণ অর্থ সংস্থান করা সম্ভব হবে। দেশের আর্থিকখাত থেকে কতটা অর্থ যোগান দেওয়া সম্ভব হবে এসব কঠিন বিষয় সরকারকে মোকাবিলা করতে হবে। আগামী বাজেট প্রণয়নে সরকারকে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে।’

পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. শামসুল আলম বলেন, ‘অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখা সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। দেশে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে রাজস্ব আহরণ থমকে আছে। এছাড়াও বাজেট বাস্তবায়নে ব্যাংকিং খাত থেকে কতটা সহায়তা নেওয়া সম্ভব সেটা ভেবে দেখতে হবে। রাজস্ব আদায় কম হলেও বাজেটের আকার বর্তমান অর্থবছরের চেয়ে বেশি বড় না হলেও ছোট হবে না।’

এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রণালয়ের বাজেট বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ‘‘১১ জুন বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করার তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। বছরের শুরুতে বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়। তখন থেকেই বাজেট প্রণয়নের কাজ শুরু করেছিলাম। কাজ অনেকটা এগিয়ে গেছে।

‘এবারের বাজেট তিন মাসের জন্য হবে নাকি পূর্ণাঙ্গ বাজেট হবে সে বিষয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনার উপর নির্ভর করছে। তবে দুটো ব্যবস্থাই আমরা তৈরি করে রেখেছি।”

অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রাক-বাজেট আলোচনা না হওয়ায় ইতোমধ্য আগামী বাজেটের জন্য দেশের সরকারি-বেসরকারি সব গবেষণা প্রতিষ্ঠান, অর্থনীতিবিদ, সাবেক অর্থসচিবসহ বিশিষ্টজনদের কাছ থেকে লিখিত পরামর্শ চেয়েছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে অর্থসচিব আবদুর রউফ তালুকদার গত ২১ এপ্রিল দেশের ৫০ জন বিশিষ্টজনের কাছে একটি অভিন্ন চিঠি দিয়েছেন।

সূত্র জানায়, ৭ মে সরকারি অফিস খোলার পর নতুন অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করার সময় বাকি থাকবে মাত্র এক মাস। এই স্বল্প সময়ের মধ্যে পুরো অর্থবছরে বাজেটের খুঁটিনাটি বিষয় শেষ করা সম্ভব কি না এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।