বক্সিং-ডে টেস্টে অস্ট্রেলিয়াকে উড়িয়ে দিলো ভারত

নিয়মিত অধিনায়ক বিরাট কোহলিকে ছাড়াই বক্সিং-ডে টেস্টে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়াকে পরাজিত করেছে ভারত। মেলবোর্নে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে অস্ট্রেলিয়াকে ৮ উইকেটে হারিয়েছে টিম ইন্ডিয়া। এই জয়ে চার ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ১-১ সমতা আনলো ভারত। অ্যাডিলেডে সিরিজের প্রথম টেস্টে দিবা-রাত্রির ম্যাচে ভারতকে ৮ উইকেটে হারিয়েছিলো অস্ট্রেলিয়া।
সন্তান সম্ভবা স্ত্রীর পাশে থাকতে প্রথম টেস্টের পর দেশে ফিরে যাওয়া কোহলিকে ছাড়া ম্যাচের তৃতীয় দিন শেষেই জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলো ভারত। কারন দ্বিতীয় ইনিংসে ১৩৩ রানে অস্ট্রেলিয়ার ৬ উইকেটের পতন ঘটায় ভারতের বোলাররা। এতে ৪ উইকেট হাতে নিয়ে মাত্র ২ রানে এগিয়েছিলো অসিরা। ক্যামেরন গ্রিন ১৭ ও কামিন্স ১৫ রানে অপরাজিত ছিলেন।
তাই বাকী ৪ উইকেট হাতে নিয়ে আর কত রান যোগ করে ভারতকে টার্গেট ছুঁড়ে দিতে পারে অস্ট্রেলিয়া, সেটিই দেখার বিষয় ছিলো। স্বীকৃত ব্যাটসম্যানদের মধ্যে কেবল উইকেটে ছিলেন গ্রিন। তার সাথে দিন শুরু করেছিলেন কামিন্স। আগের দিনের ৯৯ রানে ষষ্ঠ উইকেট পতনের পর অবিচ্ছিন্ন ৩৪ রানের জুটি গড়ে দলকে লিড এনে দিয়েছিলেন গ্রিন ও কামিন্স। তাই আজও তাদের কাছ থেকে ভালো কিছুই আশায় ছিলো অস্ট্রেলিয়া।
কিন্তু দলীয় ১৫৬ রানে এই জুটিকে থামিয়ে দেন ভারতের পেসার জসপ্রিত বুমরাহ। ১০৩ বলে ১টি চারে ২২ রান কামিন্সকে শিকার করেন বুমরাহ। এতে গ্রিনের সাথে ২১৩ বলে গড়ে উঠা গুরুত্বপূর্ণ ৫৭ রানের জুটি যায়। এই জুটির কারনেই অস্ট্রেলিয়া লিডের দেখা পেয়েছিলো।
কামিন্সকে হারানোর পর মিচেল স্টার্ককে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন গ্রিন। সেই সাথে লিড বাড়ানোর পথে হাটেন তারা। কিন্তু জুটিটি বড় করতে পারেননি গ্রিন ও স্টার্ক। বুমরাহ’র পর ভারতকে দ্বিতীয় সাফল্য এনে দেন অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা মোহাম্মদ সিরাজ। ৪৫ রান করে সিরাজকে উইকেট উপহার দেন গ্রিন। ১৪৬ বলে ৫টি চারে নিজের ইনিংস সাজান গ্রিন।
দলীয় ১৭৭ রানে অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে বিদায় নেন গ্রিন। বাকী দু’উইকেটে আহামরি কিছুই করতে পারেনি অস্ট্রেলিয়ার শেষ দিকের ব্যাটসম্যানরা। নাথান লিঁওকে ৩ রানে সিরাজ ও শেষ ব্যাটসম্যান জশ হ্যাজেলউডকে ১০ রানে তুলে নেন স্পিনার রবীচন্দ্রন অশ্বিন। ফলে ২০০ রানে দ্বিতীয় ইনিংস শেষ হয় অস্ট্রেলিয়ার। ফলে ম্যাচ জিততে ৭০ রানের টার্গেট পায় ভারত। ৫৬ বলে ১৪ রান করে অপরাজিত থাকেন স্টার্ক।
ভারতের সিরাজ ৩টি, বুমরাহ- অশ্বিন-জাদেজা ২টি করে ও উমেশ যাদব ১টি উইকেট নেন। প্রথম ইনিংসে ২টিসহ অভিষেক ম্যাচে ৫ উইকেট নিয়ে রেকর্ড বইয়ে নাম লেখান সিরাজ। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে দ্বিতীয় বোলার হিসেবে ৫ উইকেট নিলেন তিনি।
জয়ের জন্য ৭০ রানের সহজ টার্গেটে খেলতে নেমে ৪ ওভারে ১৫ রান তুলেছিলেন ভারতের দুই ওপেনার মায়াঙ্ক আগারওয়াল ও শুভমান গিল। পঞ্চম ওভারে আগাওয়ালকে শিকার করে প্রথম উইকেট তুলে নেন অস্ট্রেলিয়ার পেসার স্টার্ক। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ৫ রানে ফিরেন তিনি। প্রথম ইনিংসে রানের থাকা খোলার আগেই স্টার্কের বলে আউট হন আগারওয়াল।
পরের ওভারে তিন নম্বরে নামা চেতেশ্বর পূজারাকে বিদায় করেন আরেক পেসার প্যাট কামিন্স। ৩ রান করেন পূজারা। ফলে ১৯ রানে ভারতের ২ ব্যাটসম্যান প্যাভিলিয়নে ফিরেন।
৫ বল ও ৩ রানের ব্যবধানে দুই ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে চাপে থাকা ভারতকে লড়াইয়ে ফেরান অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা আরেক ওপেনার শুভামান গিল ও অধিনায়ক আজিঙ্কা রাহানে। অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের দেখেশুনে খেলে রানের চাকা ঘুড়াতে থাকেন তারা। ভারত এগিয়ে যায়ন কাঙ্খিত লক্ষে।
লিঁওর করা ১৪তম ওভারে স্টার্কের হাতে জীবন পান রাহানে। ভারতকে ধাক্কা দেয়ার সুযোগ হারায় অস্ট্রেলিয়া। তবে সেই লিঁওর করা ১৫তম ওভারের পঞ্চম বলে ১ রান নিয়ে ভারতের জয় নিশ্চিত করেন রাহানে। তৃতীয় উইকেটে গিল-রাাহনের ৬৪ বলে অবিচ্ছিন্ন ৫১ রানে সিরিজে সমতাও আনতে ভারত। মেলবোর্নে এটি চতুর্থ জয় ভারতের। দেশের বাইরে এই ভেন্যুতেই সবচেয়ে বেশি জয় পেয়েছে টিম ইন্ডিয়া।
গিল ৩৬ বলে ৭টি চারে অপরাজিত ৩৫ রান করেন। ৩টি চারে ৪০ বলে ২৭ রানে অপরাজিত ছিলেন অধিনায়ক রাহানে। প্রথম ইনিংসে ১১২ রানের সুবাদে ম্যাচ সেরা হয়েছেন রাহানে।
আগামী ৭ জানুয়ারি থেকে সিডনিতে শুরু হবে সিরিজের তৃতীয় টেস্ট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (টস – অস্ট্রেলিয়া) :
অস্ট্রেলিয়া : ১৯৫ ও ২০০, ১০৩.১ ওভার (গ্রিন ৪৫, ওয়েড ৪০, সিরাজ ৩/৩৭)।
ভারত ইনিংস : ৩২৬ ও ৭০/২, ১৫.৫ ওভার (গিল ৩৫*, রাহানে ২৭*, স্টার্ক ১/২০)।
ফল : ভারত ৮ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : আজিঙ্কা রাহানে (ভারত)।
সিরিজ : চার ম্যাচের সিরিজে ১-১ সমতা।