মেঝেতে বসে খাওয়ার উপকারীতা

এক সময়ের নিত্য সংস্কৃতি এখন ভাবাই দায়। সময়ের বিবর্তনে এখন সারা বিশ্ব জুড়েই সব মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য অংশে পরিণত হয়েছে চেয়ার। শুধু কাজের জন্যই নয় খাওয়ার জন্যও ডাইনিং টেবিলের চারপাশে চেয়ার সাজিয়ে বসেন। কিন্তু অতীতকালে মানুষ খাওয়ার সময় মেঝেতে বসে খেতেন। পশ্চিমা বিশ্বে এর অনুশীলন করা না হলেও কিছু সংস্কৃতির মানুষ এখনো এটা অনুসরণ করেন। এই প্রাচীন রীতিটির মূল হচ্ছে যোগ ব্যায়াম এবং আয়ুর্বেদ। এর বিজ্ঞানভিত্তিক স্বাস্থ্য উপকারিতাও আছে। মেঝেতে বসে খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতার বিষয়টি জেনে  নেওয়া যাক

ইয়োগার ভঙ্গি

খাওয়ার সময় মেঝেতে বসে খেলে আপনার বসার ভঙ্গিটি একটি ইয়োগার ভঙ্গির মতোই হয়। যাকে সুখাসন, স্বস্তিকাসন বা সিদ্ধাসন বলে। এ ধরনের বসার ধরণটি খুবই সাধারণ ও সহজ। পায়ের উপর পা ভাঁজ করে বসলে মেরুদন্ড সোজা এবং বুক প্রসারিত থাকে। পাগুলো কার্যত সমান্তরাল থাকে। শরীরের উপরের অংশের কাজ করার খুবই স্থায়ী একটি ভঙ্গি এটি। যখন আপনি সুখাসন ভঙ্গিতে বসে খাবার গ্রহণ করবেন তখন আপনার যোগব্যায়াম ও করা হবে।

পরিপাকের উন্নতি ঘটায়

পায়ের উপর পা ভাঁজ করে বসলে পেটের পেশীতে পাচক রস নিঃসৃত হয় যা সঠিক ও দ্রুত হজমের জন্য প্রয়োজন। তাছাড়া এভাবে বসলে মন শান্ত হয় এবং মেরুদন্ডের নীচের অংশে চাপ পড়ে। ফলে শিথিলতা সহজতর হয়। এছাড়াও পেশী টান মুক্ত হয় এবং উচ্চ রক্তচাপ কমে। আয়ুর্বেদ মতে, এই সবগুলো বিষয়ই একত্রে কাজ করে সঠিকভাবে খাদ্য হজমে সাহায্য করে। একটি সুস্থ শরীরের মূল হচ্ছে খাদ্যের সর্বোচ্চ হজম।

দীর্ঘজীবী হতে সাহায্য করে

২০১২ সালের ইউরোপিয়ান জার্নাল অফ প্রিভেন্টিং কার্ডিওলজি তে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে জানা যায় যে, মেঝেতে বসা থেকে কারো সাহায্য ছাড়াই উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতার সাথে দীর্ঘজীবী হওয়ার সম্পর্ক বিদ্যমান। বসা থেকে উঠে দাঁড়ানোর জন্য শরীরকে নমনীয় ও শক্তিশালী হতে হয়, যা সাধারণ দুর্ঘটনা, আঘাত এবং পড়ে যাওয়া রোধ করার জন্য প্রয়োজনীয়। যদি একজন মানুষের বসা থেকে উঠে দাঁড়াতে সমস্যা হয় তাহলে তার পরবর্তী ৬ বছরের মধ্যে মৃত্যুবরণ করার সম্ভাবনা ৬.৫ গুণ বেশি। এই গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের বয়স ৫১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে ছিলো।

সামর্থ্য ও নমনীয়তার উন্নতি ঘটায়

এভাবে মেঝেতে পা ভাঁজ করে বসলে কোমড়, হাঁটু এবং গোড়ালির ব্যায়াম হয়। এতে মেরুদন্ড, কাঁধ ও বুকের নমনীয়তা বৃদ্ধি পায়। শরীর নমনীয় থাকলে নির্দিষ্ট কিছু রোগ থেকে দূরে থাকা যায়। অন্যদিকে দীর্ঘক্ষণ চেয়ারে বসে থাকলে পিঠের নীচের অংশ দুর্বল, টাইট ও ব্যথাযুক্ত হয়।

শারীরিক ভঙ্গি সঠিক হতে সাহায্য করবে

খাওয়ার সময় আড়াআড়িভাবে পা রেখে মেঝেতে বসলে আপনাআপনিই আপনার দেহ ভঙ্গি ঠিক হয়ে যায়। এভাবে বসলে পিঠ সোজা থাকে, মেরুদন্ড প্রসারিত হয় এবং কাঁধকে পেছনের দিকে ঠেলে দেয়। এই ভঙ্গি সকল ধরনের ব্যথা মুক্ত হতে সাহায্য করে।

রক্ত চলাচলের উন্নতি ঘটায়

মেঝেতে বসে খাওয়া রক্ত সংবহনতন্ত্রের জন্য ও উপকারী।এভাবে বসলে হৃদপিণ্ড দিয়ে রক্ত খুব সহজেই শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে যায়। এছাড়া খাওয়ার সময় এভাবে বসলে হৃদপিণ্ডে কম চাপ পড়ে। ভালো রক্ত সংবহনের অর্থই হচ্ছে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান বিভিন্ন অঙ্গে পৌঁছে যাওয়া।

ওজন কমতে সাহায্য করে

নীচে বসে খেলে শরীর ও মনের উপর প্রশান্তির প্রভাব পড়ে। প্রশান্ত দেহ আপনি যা খাচ্ছেন তার উপর ফোকাস করতে পারে, যা অতিরিক্ত খাওয়া প্রতিরোধ করে। এটি হওয়ার কারণ এই ভঙ্গিতে বসলে ভেগাস স্নায়ু ভালোভাবে কাজ করে এবং অনেক কার্যকরীভাবে সংকেত পাঠাতে পারে। এছাড়াও এভাবে বসে খেলে খাওয়া ধীর গতির হয়। ফলে পাকস্থলী ও মস্তিষ্ক পর্যাপ্ত সময় পায় আপনার পেট ভরেছে কিনা তা বোঝার জন্য।

আজকের বাজার: আরআর/ ০৭ মে ২০১৭