অর্থমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলার পরিকল্পনা নেই

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আদালত অবমাননা করেছেন বলে মনে করছেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। তবে এ নিয়ে অর্থমন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করার কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছেন তিনি।

শনিবার ০৫ আগস্ট সিলেটের আদালত পাড়ায় সাংবাদিকদের এমন কথা জানান তিনি।

মনজিল মোরসেদ বলেন, অর্থমন্ত্রীর বয়স হয়ে গেছে। সকালে যা বলেন, বিকালে ভুলে যান। এখন উনাকে প্রশ্ন করা হলে বলবেন, এমন কথা বলেননি। তাই উনার বিরুদ্ধে আমরা আদালত অবমাননার মামলা করব না।

তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য অন্তঃসারশূন্য, সংবিধান ও আদালত পরিপন্থি। সরকার চাইলেও এ বিষয়ে নতুন কোনো আইন করতে পারবে না। এটা চাইলেও বদলানো যাবে না। গত ৪৬ বছরের ইতিহাসে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের এমন কোনো প্রতিক্রিয়া আসেনি। এটা মেনে নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। সংবিধান মানলে রায় মানতে হবে।

গতকাল শুক্রবার সিলেটে সাংবাদিকদের এই সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী প্রথমে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন । পরে তিনি বলেন, আমরা আবার পাস করব এবং অনবরত করতে থাকব। দেখি জুডিশিয়ারি কত দূর যায়।

মুহিত বলেন, এটা আমরা অ্যাসেম্বলিতে আবার পাস করব.. এই আইনটা। এই কন্সটিটিউশনাল অ্যামেন্ডমেন্টটা আমরা আবার পাস করব।

তিনি বলেন, জুডিসিয়ারির পজিশন আমার মতে আনটিনেবল (অন্যায্য)। মানুষের প্রতিনিধিদের উপর তারা খোদকারি করবে? তাদের আমরা চাকরি দেই।

শনিবার দুপুরে দক্ষিণ সুরমায় সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ভূমি পরিদর্শনে যান মুহিত। স্থানীয় একটি দৈনিক পত্রিকার প্রকাশনা উপলক্ষে সুধী সমাবেশে অংশ নেন তিনি।

প্রসঙ্গত, বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী জাতীয় সংসদে পাস হয়। ‘বিচারকদের পদের মেয়াদ’-সংক্রান্ত ষোড়শ সংশোধনী বিল অনুসারে, সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের ২ দফায় বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতাসংক্রান্ত বিধান রাখা হয়েছে। এতে বলা হয়, ‘প্রমাণিত ও অসদাচরণ বা অসামর্থ্যের কারণে সংসদের মোট সদস্যসংখ্যার অন্যূন দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দ্বারা সমর্থিত সংসদের প্রস্তাবক্রমে প্রদত্ত রাষ্ট্রপতির আদেশ ব্যতীত কোনো বিচারককে অপসারিত করা যাবে না।’ ৩ দফায় বলা হয়েছে, এই অনুচ্ছেদের (২) দফার অধীন প্রস্তাব-সম্পর্কিত পদ্ধতি এবং কোনো বিচারকের অসদাচরণ বা অসামর্থ্য সম্পর্কে তদন্ত ও প্রমাণের পদ্ধতি সংসদ আইনের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করবে। একই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর তা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।

ওই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একই বছরের ৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নয়জন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত বছরের ৫ মে হাইকোর্টের তিনজন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ গত ৪ জানুয়ারি আপিল করে। আপিলের ওপর গত ৮ মে শুনানি শুরু হয়, যা ১১তম দিনে গত ১ জুন শেষ হয়। ওই দিন আদালত মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন। গত ৩ জুলাই রায়ের সংক্ষিপ্তসার ঘোষণা করেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা।

আজকের বাজার: আরআর/ ০৫ আগস্ট ২০১৭