অর্থ উত্তোলনে বস্ত্রখাত শীর্ষে

পুঁজিবাজার থেকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে অর্থ উত্তোলনের ক্ষেত্রে বস্ত্র খাত শীর্ষে রয়েছে। এর পরেই রয়েছে মিউচুয়াল ফান্ড ও প্রকৌলশ খাত। কোম্পানিগুলোর মধ্যে সিংহভাগ কোম্পানিই ব্যবসা সম্প্রসারণ ও ব্যাংকঋণ পরিশোধের লক্ষ্যে আইপিওর মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করেছে।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সর্বশেষ প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লিখিত তথ্য বিশ্লেষণে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত এক বছরে (জুলাই ’১৬ থেকে জুন ’১৭ পর্যন্ত) সিএসইতে মোট তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে বস্ত্র খাতে তালিকাভুক্ত হয়েছে ৩৪ শতাংশ কোম্পানি। মিউচুয়াল ফান্ড খাতে তালিকাভুক্তি হয়েছে ৩৩ শতাংশ কোম্পানি। আর প্রকৌশল খাতের তালিকাভুক্তি হয়েছে ১১ শতাংশ কোম্পানি। লেদার-ফুটওয়্যার ও বিবিধ খাতের তালিকাভুক্তির হার যথাক্রমে ১১ শতাংশ করে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত বছরের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন ’১৬) খাতভিত্তিক তালিকাভুক্তির হিসাবেও বস্ত্র খাত এগিয়ে ছিল। এ সময় তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৪০ শতাংশই ছিল পোশাক ও বস্ত্র খাতের। বাকি ৬০ শতাংশ কোম্পানি রয়েছে সাধারণ বিমা, জ্বালানি এবং ওষুধ ও রসায়ন খাতের। তালিকাভুক্তিতে ২০ শতাংশ করে এ তিন খাতের কোম্পানির অবস্থান।

প্রতিবেদনের তথ্যমতে, জুলাই ’১৬ থেকে জুন ’১৭ সময়ে সিএসইতে তালিকাভুক্ত হয়েছে মোট ৯টি কোম্পানি। জানুয়ারি-জুন ’১৬ ছয় মাসে তালিকাভুক্ত হয়েছে পাঁচটি কোম্পানি। এর আগে ২০১৫ সালে সিএসইতে ১৫টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়। ২০১৪ ও ২০১৩ সালে যথাক্রমে ১৯টি এবং ১৬ কোম্পানি পুঁজিবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করে সিএসইতে তালিকাভুক্ত হয় বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

জানা গেছে, সিএসইতে পোশাক ও বস্ত্র খাতে বর্তমানে ৪৩টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে। মিউচুয়াল ফান্ড রয়েছে ৩৬টি ও প্রকৌশল খাতে তালিকাভুক্ত রয়েছে ২৯টি কোম্পানি। এছাড়া লেদার ও ফুটওয়্যার খাতে ছয়টি, সাধারণ বিমা খাতের ৩০টি, ওষুধ ও রসায়ন খাতে ২৩টি ও জ্বালানি খাতে ১৬টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৫ সালে ১৭টি কোম্পানি পুঁজিবাজার থেকে টাকা উত্তোলনের মাধ্যমে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত হয়। কিন্তু ২০১৬ সালে আটটি বা ৪৭ শতাংশ কমে ৯টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত হয়, যা চলতি বছরে আরও নাজুক অবস্থা। আর চলতি বছর একটি মিউচুয়াল ফান্ডসহ মোট সাতটি প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়।

জানা যায়, প্রতিষ্ঠানগুলো ২০১৬-১৭ অর্থবছরে উদ্যোক্তারা পুঁজিবাজার থেকে আইপিওর মাধ্যমে ৩৯০ কোটি টাকার মূলধন সংগ্রহ করেছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এ মূলধন সংগ্রহের পরিমাণ ছিল ৮৫৮ কোটি টাকা। এ হিসাবে বছরের ব্যবধানে মূলধন উত্তোলনের পরিমাণ কমেছে ৫৫ শতাংশ। আর চলতি বছর পুঁজিবাজার থেকে সংগ্রহ করা হয় মাত্র ১৭৮ কোটি টাকা। চলতি বছর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, নূরানী ডায়িং, বিবিএস কেব্লস, আমরা নেটওয়ার্ক, ওইম্যাক্স ইলেকট্রনিক, নাহি অ্যালুমিনিয়াম এবং আইসিবি এএমসিএল ফার্স্ট অগ্রণী ব্যাংক মিউচুয়াল ফান্ড।

বাজারসংশ্লিষ্টরা আইপিও প্রবাহ কমে যাওয়ার জন্য বিএসইসিসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায়ী করঝছেন। তারা আইপিও অনুমোদনে কালক্ষেপণ করেন বলেই এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়।

এ বিষয়ে ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, একটি কোম্পানির আইপিও অনুমোদন পেতে কেন লম্বা সময় দরকার, তা আমার কাছে বোধগম্য নয়। বিষয়টি নিয়ে বিএসইসি ভালো বলতে পারবে না। এছাড়া এত বেশি সময় লাগা ঠিক নয় বলে জানান। তাই এসব বিষয় বিএসইসির দেখা উচিত।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বিএসইসির উচিত দ্রুত সময়ে ভালো মানের প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজারে নিয়ে আসা। কারণ আমাদের দেশে এখনও ভালো মানের কোম্পানির অভাব রয়েছে। ভালো শেয়ারের জোগান বাজারকে সম্প্রসারিত করতে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

আজকের বাজার:এলকে/এলকে ২৬ নভেম্বর ২০১৭