অর্ধেক সময় বন্ধ থাকত বেনাপোলের কার্যক্রম

গত ১ আগস্টের আগে দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোলে দিনে গড়ে মাত্র ৪ ঘণ্টা করে পণ্য খালাস করা হয়েছে বলে সম্প্রতি এক গবেষণা জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে। সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) একটি গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

সংস্থাটি বলছে, এই কারণে উল্লেখিত সময়ের আগে বন্দরটির আয়ও অনেক কম হয়েছে।

জরিপটি পরিচালনা করার সময় দেখা যায় যে, তৎকালীন (১ আগস্টের আগে) সরকারি নিয়ম অনুযায়ী বেনাপোল স্থল বন্দর সপ্তাহে ৬ দিন সকাল ৯ টা থেকে বেলা ৫ টা পর্যন্ত পরিচালিত হবার কথা থাকলেও বাস্তবে কর্ম সময়ের মধ্যে বেশ পার্থক্য ছিল।

সংস্থাটি বলছে, সকাল ১০ টায় মূলত কার্যক্রম শুরু হয়। আর বেলা ২টা নাগাদ তা বন্রধ হয়ে যায়। এরপর আর কোনো ট্রাকের মালামাল খালাস করা হয় না। এটা থেকে পরিস্কার যে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী দৈনিক ৮ ঘণ্টার পরিবর্তে মূলত ৪ ঘণ্টা এই বন্দরটি কার্যকর ছিল।

সানেমের জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ৪ বিলিয়ন ডলারের প্রায় অর্ধেকই আসে পেট্রাপোল-বেনাপোল স্থল বন্দর থেকে।

২০১৭ এর জুলাই মাসে জরিপটি শেষ হয়। বাংলাদেশ এবং ভারতের সরকারি ও বেসরকারি প্রায় ১০০ প্রতিনিধির উপর সানেম জরিপটি সম্পাদন করে। গবেষণা পরিচালনা করেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান, জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহযোগী মোঃ নাজমুল অভি হোসেন, গবেষণা সহযোগী মোঃ জাহিদ ইবনে জালাল, গবেষণা সহযোগী মোঃ সাদাত আনোয়ার।

বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধি বেনাপোল ও পেট্রাপোল স্থলবন্দর চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত কিনা তা নিয়ে সানেম এই অনুসন্ধানমূলক গবেষণাটি করে।

গবেষণায় বলা হয়, বেনাপোল স্থল বন্দর নানাবিধ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন যা বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের জন্য ক্ষতিকর। পেট্রাপোল বন্দরে ৪৩ শতাংশ অবকাঠামো সন্তোষজনক অবস্থানে আছে বলে গবেষণায় জানা গেছে। তবে আইন, প্রশাসন, উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার ও পর্যাপ্ততায় ৪৫ শতাংশ অসন্তোষজনক।

গবেষণা থেকে জানা যায়, বেনাপোল বন্দরের পণ্য মজুদ করার ক্ষমতা ৪০ হাজার মেট্রিক টন। যা প্রয়োজনের তুলনায় অপর্যাপ্ত। প্রায় ১ লাখ মেট্রিক টন পণ্য স্থানীয় বিভিন্ন গুদামে স্তুপ করে রাখা আছে। বেনাপোল বন্দরে এখন প্রায় ৪৩ টি পণ্য রক্ষণাবেক্ষণ ছাউনি রয়েছে, যা মানহীন।

ভারত থেকে প্রতিদিন গড়ে ৩৫০ টি ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করে। বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে যায় মাত্র ৮০ টি ট্রাক। সেই তুলনায় পেট্রাপোল বন্দরে প্রায় ১৫শ’ ট্রাক ইন্টিগ্রেটেড চেক পোস্টে (আইসিপি) অপেক্ষায় থাকে। ভারত কোনো কোনো প্রদেশে থেকে বনগাঁ পৌঁছাতে সময় লাগে ১৭ দিন।

বেনাপোল বন্দরে কার্যক্রম পরিচালনা ২০ শতাংশ ও অবকাঠামো মাত্র ৮ শতাংশ পর্যাপ্ত রয়েছে। বন্দরটিতে ৬৪ শতাংশ সামাজিক ও স্থানীয় পরিবেশ অসন্তোষজনক হিসেবে বিচার করেছে গবেষণাটি।

গবেষণায় বেনাপোল বন্দরে ৬০ টি গুদামঘর, ৫ দশমিক ৫ মিটার প্রশস্ত রাস্তা নির্মাণের সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি পেট্রোপোল বন্দরের সাথে সমন্বয় করারও প্রস্তাব রাখা হয়েছে। পেট্রাপোল বন্দরে আইসিপিতে উন্নত ও সংহত রিস্ক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম এর কার্যকর বাস্তবায়ন করার সুপারিশ করা হয়েছে।

আজকের বাজার:এলকে/এলকে ১৮ অক্টোবর ২০১৭