আইআইডিএফসি’র নতুন প্রডাক্ট ‘সেফ ইনভেস্ট’

মোহাম্মদ সালেহ আহমেদ : বাংলাদেশের মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো সচারচর তিনটা কনভেনশনাল প্রোডাক্ট নিয়ে বাজারের আছে। এগুলো হচ্ছে ইস্যু ম্যানেজমেন্ট, আন্ডার রাইর্টি ও পোর্টফোলিও ম্যানেজম্যান্ট। এতো দিন আমরা পোর্টফোলিও ম্যানেজমেন্টের একটি অংশ নিয়ে কাজ করতাম। এখন আমরা নতুন করে, বিশেষ করে এখন বাজারের যে অবস্থা সেটা পর্যালোচনা করে আমরা চিন্তা করলাম নতুন বিনিয়োগকারী কিভাবে বৃদ্ধি করা যায়।
সচরাচর একজন সাধারণ বিনিয়োগকারীর পক্ষে একবারে ৫ লাখ বা ১০ লাখ টাকা নিয়ে আসাটা এখন অনেক ক্ষেত্রেই এই বাজারে সম্ভব হচ্ছে না।

বাজারে বিনিয়োগকারী সৃষ্টির জন্য আমরা অনেকভাবেই চিন্তা ভাবনা করে দেখলাম কিভাবে বাজারে নতুন বিনিয়োগকারী সৃষ্টি করা যায়। সেই জন্যই আমরা সেফ ইনভেস্টমেন্ট নামে একটি নতুন প্রোডাক্ট বাজারে এনেছি। যেটা ২ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১ হাজারের গুনিতক যত পর্যন্ত করা যায় তত পর্যন্ত করার জন্য আমরা নতুন একটা প্রোডাক্ট ডিজাইন করেছি। এই প্রোডাক্টে আমরা ভালো সাড়া পাচ্ছি। কারণ এটা ২ হাজার টাকা দিয়ে শুরু হচ্ছে।

ব্যাংকগুলোতে যেমন ডিপিএস প্রোডাক্ট আছে এটা অনেকটা তেমনি প্রোডাক্ট। এই প্রোডাক্টের মাধ্যমে বাজারে একদিকে তহবিল প্রবাহ হবে আবার অন্যদিকে নতুন নতুন বিনিয়োগকারী বাড়বে। যেটা আমাদের বাজারে ভবিষতে একটি নতুন দিক উন্মোচন করবে।

এটা একটা সেল্ফ ডিকটেশনারি প্রোডাক্ট। এটা পুরোটাই ম্যানেজ করব আমরা। বিনিয়োগকারীরা প্রতি মাসেই ২ হাজার থেকে শুরু করে ৫ হাজার, ১০ হাজার বা ৫০ হাজার টাকা করে তাদের ব্যাংক হিসাবে জমা করবেন। আর সেই অনুযায়ী আমরা আমদের রিসার্চ ও ইনভেস্টমেন্ট টিম ও তাদের কমিটি যে সিদ্ধান্তগুলো নিবে সেগুলোর আলোকে আমরা সেই নির্দিষ্ট প্রোডাক্টটিতে নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্টে শেয়ারগুলো কিনব এবং আমরা ক্লায়েন্টের হয়ে শেয়ারগুলো কেনাবেচা করবো।

আমাদের দেশে অনেক বিনিয়োগকারী আছেন যারা সুদের দিকে যেতে চান না। যেহেতু তারা সুদের দিকে যেতে চান না তো আমরা চিন্তা করলাম এমন একটা প্রোডাক্ট বাজারে আনা যায় কিনা যেখানে আমরা ফিক্সড কোনো ইনকামও নিশ্চিত করতে পারব না আবার তাদের টাকাটার যাতে লোকসান না হয় তারও যেন নিশ্চিত করতে পারি। এসব চিন্তা থেকেই আমরা এই প্রোডাক্টটি শুরু করেছি। এর মাধ্যমে আমরা যাতে ভবিষ্যতে বড় বড় বিনিয়োগকারী সৃষ্টি করতে পারি।

এখানে আমরা ম্যানেজমেন্ট ফি আড়াই শতাংশ করে রাখছি এবং ট্রানজেকশন ফি বা ব্রোকারেজ চার্জ হিসেবে আমরা ৫০ পয়সা করে রাখছি। এগুলো ছাড়া এখানে আর তেমন কোনো চার্জ নেই। ধরেন, কেউ ৫ হাজার রাখল তাহলে বছরে তার ৬০ হাজার টাকার মতো আসবে। এখান থেকে আমরা আড়াই শতাংশ টাকা খরচ হিসেবে কেটে রাখবো।

এখানে আমরা বিনিয়োগকারীদের কোনো সিদ্ধান্ত নিচ্ছি না । কারণ বাজার সর্ম্পকে তাদের কোনো ধারণা থাকে না। তাদের বিনিয়োগের যাতে কোনো লোকসান না হয় এবং বিনিয়োগ যাতে বাড়ে সে জন্য আমাদের গবেষণা দল ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত কমিটি থাকবে। তারা এসব ব্যাপার দেখবেন।
টাকাটা তারা জমা দেবে। উনাদের হয়ে আমরা বিনিয়োগটা করব। এটা একটা নির্দিষ্ট মেয়াদে হবে। প্রথম মেয়াদটা হবে ৩ বছর থেকে ১০ বছর পর্যন্ত। এর মধ্যে যে যেভাবে ইচ্ছা বিনিয়োগ করবে। ডিপিএস’র ক্ষেত্রে দেখা যায় ২ বছরে কিংবা ১০ বছরে টাকা দ্বিগুণ হয়। এটা যেহেতু শেয়ার বাজার এখানে এটি নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে তাদের ন্যূনতম ইনকামটা যাতে নিশ্চিত করা যায় সেই জন্য আমরা দক্ষ কর্মী নিয়োগ দিয়েছি।

আমরা হিসাব করে দেখেছি, একজন যদি ২ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে। আমরা সেই টাকাটা যদি সাধারণভাবে স্কয়ার ফার্মাতেও বিনিয়োগ করি তাহলেও বছর শেষে তার ১৫ থেকে ২০ শতাংশ আয় হবে। তবে যেহেতু এটা একটা ঝুকি বাজার তাই আমরা ন্যূনতম ১০ শতাংশ আয় হলেও নিশ্চিত করতে চেষ্টা করব।

কেউ যদি টাকা তুলে নিতে চায় তাহলে তাকে সাধারণভাবে ১ থেকে ২ শতাংশ আরলি এক্সিট ফি দিয়ে তা করতে হবে। প্রথম এক বছরের মধ্যে টাকা তুলে নিলে তার মোট টাকা থেকে ২ শতাংশ কাটা যাবে এবং দ্বিতীয় বছর থেকে যে কোনো সময় টাকা তুলে নিলে তার মোট টাকা থেকে ১ শতাংশ টাকা কাটা যাবে। লাভ কিংবা লোকসান যা-ই হোক না কেন তা স্বীকার করেই তাকে হিসাবটা বন্ধ করতে হবে। তবে এখানে লোকসান হওয়ার সুযোগ কম থাকে।

আমরা এই প্রোডাক্টে সাড়া পাচ্ছি অনেক ভালো। আমরা যারা ফিক্সড ইনকামের মানুষ তাদের পক্ষে একটা বড় পরিমাণ টাকা যোগাড় করে তা কোথাও বিনিয়োগ করে সেটাকে চালিয়ে যাওয়া সব সময় সম্ভব হয় না। আমরা লিমিটেড ইনকামের মানুষদেরকে টার্গেট করে এই প্রোডাক্টটি চালু করেছি। তাদের ইনকাম থেকে ২ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা বা ১০ হাজার টাকা সেভ করে বিনিয়োগ করা ব্যক্তি বিশেষের ক্ষেত্রে কষ্ট হবে না। ব্যক্তি যেহেতু শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করতে আসবে তার যে টাকাটা অলস পড়ে থাকবে সেই টাকাটাই তিনি এখানে বিনিয়োগ করবেন। তো এখানে খুব একটা অসুবিধা হওয়ার কথা না।

আমরা তিন মাস পরপর চিঠি দিয়ে অ্যাকাউন্টের একটা স্টেটমেন্ট তাদের কাছে পাঠাব। তাদের অ্যাকাউন্টের কী অবস্থা, আয়-ব্যয় কী হলো তা জানিয়ে তাদেরকে আমরা তিন মাস, ছয় মাস কিংবা এক বছর পরপর চিঠির মাধ্যমে জানাব।

মূলত এই সেফ ইনভেস্টমেন্ট হচ্ছে ডিপিএস’র আওতাভূক্ত একটা সেভিং ইনস্ট্রুমেন্ট । যেভাবে ডিপিএস’গুলোকে একটা নির্দিষ্ট সময় পর ম্যাচিউর্ড করলে ব্যাংক বেনিফিটেড হয়, এই ক্ষেত্রেও তা-ই হবে। এটা যেহেতু ডিপোজিট প্রোডাক্ট যখন তখন তা উত্তোলন করা যাবে। সেক্ষেত্রে কিছু চার্জ কাটা যাবে। সাধারণ ব্যাংকগুলোতে যা করে আমরা তা করব।

আর এছাড়াও আমাদের দেশে অনেক বিনিয়োগকারী আছেন ইসলামিক মাইন্ডেট, তারা সুদ খাওয়া ও দেওয়া থেকে দূরে থাকতে চান। উনাদেরকে টার্গেট করে আমরা এটা শুরু করেছি। আমরা বলছি না এখান থেকে একটা ফিক্সড ইনকাম আসবে। একটা নির্দিষ্ট সময় পরে তারা বেনিফিটেড হতে পারেন। এখন যে বাজার আছে যদি আমরা এই বাজারটাকে কাজে লাগাতে পারি তাহলে একটা নির্দিষ্ট সময় পরে ব্যক্তির বিনিয়োগটা অবশ্যই তার জন্য একটা সুফল বয়ে নিয়ে আসবে। যেহেতু এটা একটা ডিপোজিট প্রোডাক্ট ব্যক্তি যখন ইচ্ছা তখন তা ভাঙিয়ে নিতে পারবেন।

আমাদের মূল টার্গেট হচ্ছে বাজারে একটি শক্তিশালী বিনিয়োগকারী দল সৃষ্টি করা। আর এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই আমরা এই প্রোডাক্টটি শুরু করেছি।

মোহাম্মদ সালেহ আহমেদ
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা
আইআইডিএফসি ক্যাপিটাল লিমিটেড।

রাসেল/