আজ পবিত্র আশুরা

যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে মঙ্গলবার সারাদেশে পবিত্র আশুরা উদযাপন করছে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ। সারাবিশ্বের মুসলমানদের কাছে আশুরার দিনটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যময়।

ইসলাম ধর্মমতে, মহান আল্লাহ এই দিনে পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং এই দিনেই পৃথিবী ধ্বংস হবে। শোকের প্রতীক হিসেবে বিশ্বজুড়ে মুসলমান সম্প্রদায় বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করেন।

এটি সরকারি ছুটির দিন।

ইসলামের ইতিহাসে বিষাদময় কারবালাসহ নানা ঘটনার স্মরণে আরবি সনের হিজরি বছরের প্রথম মাস মহররমের ১০ তারিখ পবিত্র আশুরা পালিত হয়।

মহররম অর্থ অধিক সম্মানিত। মহররম মাসের দশম দিনকে আশুরা বলা হয়। আশুরার দিনে বিশ্বে সংঘটিত অলৌকিক অনেক গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ঘটনার কারণে মুসলমানদের কাছে ১০ মহররম বিশেষভাবে মহিমান্বিত।

ইসলাম ধর্মমতে, আশুরার দিনে আসমান ও জমিন সৃষ্টি করা হয়েছিল। আশুরার দিন আল্লাহ পৃথিবীর প্রথম মানব হযরত আদম (আ.) কে সৃষ্টি করেছেন। এই দিনে আল্লাহ নবীদেরকে স্ব স্ব শত্রুর হাত থেকে আশ্রয় প্রদান করেছেন। এই দিন হযরত নুহ (আ.) এর প্লাবন শেষ হয় এবং নুহ (আ.) এর জাহাজ তুরস্কের ‘জুদি’ নামক পর্বতে গিয়ে থামে। আশুরার দিন হযরত ইব্রাহিম (আ.) জালিম বাদশাহ নমরুদের অগ্নিকুণ্ড থেকে নিরাপদে মুক্তি পেয়েছিলেন। এই দিন হযরত ইউনুস (আ.) মাছের পেট থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। আশুরার দিনে হযরত আইয়ুব (আ.) দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন।

আশুরার দিন হযরত সুলাইমান (আ.) তার হারানো রাজত্ব ফিরে পান। এইদিনে হযরত ইয়াকুব (আ.) হারানো ছেলে হযরত ইউসুফ (আ.) কে ৪০ বছর পর ফিরে পেয়েছিলেন। এইদিনে হযরত ঈসা (আ.) জন্মগ্রহণ করেন এবং এইদিনেই তাকে দুনিয়া থেকে আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয়।

সর্বশেষ ৬৮০ খ্রিষ্টাব্দে এই দিনে ফোরাত নদীর তীরে ঐতিহাসিক কারবালা প্রান্তরে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসেন (রা.) সপরিবারে নির্মমভাবে শাহাদাত বরণ করেন।

ইহুদিরা আশুরা উপলক্ষে মহররম মাসের ১০ তারিখে রোজা রাখে। শিয়া সম্প্রদায় বিভিন্ন মিছিল ও শোকানুষ্ঠানের মাধ্যমে দিনটি উদযাপন করে। আশুরা উপলক্ষে ৯ ও ১০ অথবা ১০ ও ১১ মহররম তারিখে রোজা রাখা মুসলমানদের জন্য সুন্নাত। এছাড়া মুসলমানরা আশুরার দিন উত্তম আহারের জন্য চেষ্টা করে থাকে।

নফল রোজার মধ্যে আশুরার দিনে রোজা রাখা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও ফজিলতপূর্ণ। সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী করিম (সা.) সাহাবিদের নির্দেশ দিয়েছেন, ‘তোমরা ইহুদিদের থেকে ব্যতিক্রম করো, আশুরার একদিন আগে বা একদিন পরেও রোজা রাখো’, অর্থাৎ ১০ মহররমের সঙ্গে ৯ বা ১১ মহররম মিলিয়ে অন্তত দুটি রোজা রাখতে বলেছেন, যাতে ইহুদিদের সঙ্গে সাদৃশ্য না হয়।

আশুরার দিন রোজা রাখা সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘আশুরার দিনের রোজার ব্যাপারে আল্লাহ পাকের নিকট আমি আশাবাদী যে তিনি এক বছর আগের গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন’ (মুসনাদে ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল রহ.)।