আজ ঐতিহানিক স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস

ছবি : ইন্টারনেট

আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি, ঐতিহাসিক স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস। বাংলাদেশের ইতিহাসে গণতান্ত্রিক সংগ্রামের অনন্য একটি দিন। ৫২’র ভাষা আন্দোলনের ছাত্র-বিক্ষোভের পর বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ছাত্রবিক্ষোভের দিন।

১৯৮৩ সালের আজকের এই দিনে  ‘মজিদ খানের শিক্ষানীতি’ বিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে ছিলো। তখন দেশের ছাত্র সমাজ মজিদ খানের শিক্ষানীতি প্রত্যাখ্যান করে ১৪ ফেব্রুয়ারি ডাক দেয় ছাত্র জমায়েতের। সেই জমায়েতে গুলি চালায় পুলিশ। আর বিকেলে কলা ভবনে ঢুকে নির্বিচারে লাঠিচার্জ করে এরশাদ সরকারের সামরিক বাহিনী। মিছিলে প্রথম গুলিবিদ্ধ হন জয়নাল। এরপর একে একে জাফর, কাঞ্চন, দীপালী সাহাসহ নাম না জানা আরও অনেকে।

১৯৮২ সালের ২৪ শে মার্চ লে. জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এক সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখলের পরপরই তাকে ছাত্রদের প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয়েছে। একইসাথে শুরু হয় ধরপাকড়। প্রথমদিনেই কলাভবনে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে পোস্টার লাগাতে গিয়ে গ্রেপ্তার ও সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন ছাত্রনেতা শিবলি কাইয়ুম, হাবিবুর রহমান ও আব্দুল আলী।

সে সময় সামরিক সরকারের শিক্ষামন্ত্রী মজিদ খান ক্ষমতায় এসেই নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন খর্ব ও রেজাল্ট খারাপ হলেও যারা ৫০% শিক্ষার ব্যয়ভার দিতে সমর্থ, তাদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ দেওয়ার কথা বলা হয় এতে।

এই নীতিতে দরিদ্ররা উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হতে পারে বলে ছাত্ররা এর প্রবল বিরোধিতা করে। ১৯৮২ সালের ১৭ ই সেপ্টেম্বর শিক্ষা দিবসে এই শিক্ষানীতি বাতিলের দাবিতে ছাত্র সংগঠনগুলো ঐকমত্যে পৌঁছে।

এরই ধারাবহিকতায় ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারির জন্ম। এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ মজিদ খানের কুখ্যাত শিক্ষানীতি প্রত্যাহার, বন্দি মুক্তি ও গণতান্ত্রিক অধিকারের দাবি ও গণমুখী, বৈজ্ঞানিক ও অসাম্প্রদায়িক শিক্ষানীতির দাবিতে ছাত্র জমায়েত ডাকে।

হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ মিছিলটি হাইকোর্টের গেটের সামনে ব্যারিকেডের সামনে বসে পড়ে এবং ছাত্রনেতারা তারের ওপর উঠে বক্তৃতা শুরু করে। এসময় পুলিশ বিনা উস্কানিতে তারের একপাশ সরিয়ে রায়ট কার ঢুকিয়ে দিয়ে রঙ্গিন গরম পানি ছিটাতে থাকে, বেধড়ক লাঠিচার্জ, ইট-পাটকেল ও বেপরোয়া গুলি ছুড়তে শুরু করে। গুলিবিদ্ধ হয় জয়নাল। এরপর গুলিবিদ্ধ জয়নালকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারা হয়।

এসময় দিপালীও গুলিবিদ্ধ হন এবং পুলিশ তার লাশ গুম করে ফেলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিহত ও আহতদের এ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়ে নিয়ে আসতে চাইলে ঘটনাস্থলে ঢুকতে দেয়নি পুলিশ বাহিনী। কিছু না ঘটা সত্ত্বেও পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের হত্যা করা হয়েছে, এমন অপপ্রচার চালিয়ে সামরিক সরকার উস্কে দেয় পুলিশকে। ঐদিন নিহত হয়েছিল জয়নাল, জাফর, কাঞ্চন, দীপালীসহ আরো অনেকে। সরকারি মতেই গ্রেপ্তার করা হয় ১ হাজার ৩৩১ জন ছাত্র-জনতাকে, বাস্তবে এই সংখ্যা আরো বেশি ছিল। খোঁজ মেলেনি অনেকেরই।

সেই থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি হয়ে ওঠে মুক্তিকামী মানুষের প্রতিরোধ চেতনার দিন। সেসময়কার রাজনৈতিক আন্দোলনের কর্মীরা দিনটি পালন করছে ‘স্বৈরাচার প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে।

আজকের বাজার : আরএম/১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮