ইউরোপে করোনায় অর্ধেক মৃত্যুই বৃদ্ধনিবাসে

বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসে ইউরোপে যত মানুষ মারা গেছেন, তাদের অর্ধেকই দীর্ঘমেয়াদি পরিচর্যা কেন্দ্র বা বৃদ্ধনিবাসের বাসিন্দা।

এমন ভয়ানক তথ্য জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। ডব্লিউএইচও’র ইউরোপীয় কার্যালয়ের পরিচালক হ্যান্স ক্লুগ বৃহস্পতিবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, বৃদ্ধনিবাসগুলোর ভয়াবহ চিত্র উঠে আসছে কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে।

তিনি বলেন, ইউরোপীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে মোট মৃত্যুর হিসাবে করোনায় যত মানুষ মারা গেছেন, তাদের অর্ধেকই এই সব কেয়ার হোমের বাসিন্দা। বৃদ্ধনিবাসের পরিস্থিতিকে গভীরে উদ্বেগজনক আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, এমন মানবিক বিপর্যয়ের কথা ভাবা যায় না।

বৃদ্ধাশ্রমে সেবার দিকটি বরাবরই অবহেলিত। ক্লুগের মতে, এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের কাজও বেশি মজুরিও কম। কাজেই তাদের জন্য আরও সুরক্ষা সরঞ্জামের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান তিনি । বললেন, এই মহামারীর সময়ে তারাই বীর। এই বৈশ্বিক মহামারীতে বয়স্করাই বেশি আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকায় করোনাভাইরাস পরীক্ষার ক্ষেত্রে বৃদ্ধনিবাসগুলোকেই প্রাধান্য দেয়া উচিত বলে মত দেন ক্লুগ।

গত ১৪ এপ্রিল যুক্তরাজ্যের জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থার হাসপাতালের বাইরে নার্সিং হোম এবং বৃদ্ধনিবাসগুলোতে করোনাভাইরাসে মানুষের মৃত্যুর বিস্তারিত তথ্য দেয়ার পর দেশটির সরকারি হিসাবে প্রকাশিত মৃত্যুর চেয়ে প্রকৃত সংখ্যা আরও ১৫ শতাংশ বেশি বলে আশঙ্কা করা হয়।

তবে ডব্লিউএইচও’র ইউরোপ অঞ্চলের পরিচালক ক্লুগ বলছেন, পরিসংখ্যানের চেয়েও বৃদ্ধনিবাসগুলোতে মৃতের প্রকৃত সংখ্যা বেশি। কাজেই এসব দীর্ঘমেয়াদি পরিচর্যা কেন্দ্র কীভাবে পরিচালিত হবে তা তাৎক্ষণিকভাবে পুনর্বিবেচনা করে দেখা দরকার বলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই কর্মকর্তার মত।

তিনি জানান, বৃদ্ধনিবাসগুলোতে যারা মারা যাচ্ছেন, চিকিৎসা ও প্রিয়জনদের সেবাশুশ্রূষাসহ সব ধরনের সহযোগিতা পাওয়ার অধিকার তাদের রয়েছে। ক্লুগ বলেন, এমনকি বয়স্ক লোকজন, যাদের শারীরিক অবস্থা খুবই নাজুক, যারা দীর্ঘমেয়াদি ও দীর্ঘস্থায়ী বিভিন্ন রোগে ভুগছেন, সঠিক পরিচর্যা পেলে তারাও সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন।

বৃদ্ধাশ্রমগুলোতে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে পরিকল্পনা নেয়া দরকার বলেও মনে করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ক্লুগ বলেন, এসব পরিচার্য কেন্দ্র ভাইরাসের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। বয়সের ভারে ন্যুব্জ অবস্থা, নাজুক স্বাস্থ্য, বুদ্ধিগত প্রতিকূলতা, স্বাস্থ্যবিধি বোঝার ক্ষেত্রে সমস্যা ও স্মৃতিভ্রংশের দরুণ তারা ঝুঁকিতে থাকেন।