ইসির নির্দেশনায় বিএনপির সুবিধা, আ’লীগের অসুবিধা দেখছেন তথ্যমন্ত্রী

আসন্ন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণায় মন্ত্রী ও এমপিরা অংশ নিতে পারবেন না বলে নির্বাচন কমিশন(ইসি)যে নির্দেশনা দিয়েছে তাতে বিএনপির সুবিধা হলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অসুবিধা দেখছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির(ডিআরইউ)নবনির্বাচিত কমিটির নেতাদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ এবং সমসাময়িক বিষয় নিয়ে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন,‘ইসির সিদ্ধান্ত হচ্ছে মন্ত্রী এমনকি এমপিরাও প্রচার-প্রচারণায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। কিন্তু সংসদীয় গণতন্ত্রের অন্যান্য দেশে বিষয়টি এ রকম নয়। ভারতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরাও মন্ত্রী হিসেবে পাওয়া সুযোগ-সুবিধা বাদ দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করতে পারেন, এমপিরা তো পারেনই। ইংল্যান্ডে মন্ত্রী এবং এমপিরা নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করতে পারেন। পৃথিবীর অন্যান্য সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশেও এমপি এবং মন্ত্রীরা সরকারি প্রটোকল এবং সুযোগ-সুবিধা বাদ দিয়ে অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু আমাদের দেশে ইসির যে নির্দেশনা তাতে মন্ত্রী এমনকি এমপিরাও প্রচার-প্রচারণায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। এ নির্দেশনা বিএনপিকে সুবিধাজনক অবস্থায় নিয়ে গেছে, আওয়ামী লীগের জন্য অসুবিধা হয়েছে।’

‘আপনারা দেখেছেন ইসি আমাদের উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রার্থীকে নোটিশ দিয়েছে, বিএনপিকে কিন্তু নোটিশ দেয়নি। এ বিষয়গুলো যদি আমরা দেখি তাহলে দেখা যায় সিইসি বা ইসির যে কার্যক্রম এতে বিএনপি সুবিধাপ্রাপ্ত হয়েছে। আওয়ামী লীগ এ ক্ষেত্রে অসুবিধাজনক অবস্থায় আছে সিইসির বিভিন্ন সিদ্ধান্তের কারণে,’যোগ করেন তিনি।

জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাষণে‘জাতি হতাশ হয়েছে’বলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যে মন্তব্য করেছেন তার জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন,‘বিএনপি মনে করে দেশের সমস্যা রাজনৈতিক। তাদের দাবি হচ্ছে সহসা আরেকটি নির্বাচন দেয়া। এ দাবি কিন্তু জনগণের নয়, বিএনপির দাবি। দেশে কোনো রাজনৈতিক সমস্যা নেই, রাজনৈতিক সমস্যা আছে বিএনপির মধ্যে। নেতৃত্বের দুর্বলতা এবং দিক নির্দেশনাহীন যাত্রা, সব মিলিয়ে বিএনপির মধ্যে রাজনৈতিক সংকট রয়েছে। বিএনপির রাজনৈতিক সংকট তো প্রধানমন্ত্রী সমাধান করতে পারবেন না। দেশে কোনো রাজনৈতিক সংকট নেই।’

‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতায় দেশের মানুষ খুশি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী যেভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সেটি যেমন ব্যাখ্যা করেছেন, একই সাথে দেশকে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান সেটিও বলেছেন। দুর্নীতি ও অনিয়ম-অনাচারের বিরুদ্ধে যে অভিযান তিনি শুরু করেছেন সেটি অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছেন। তিনি এটিও বলেছেন-আমি বলব না আমরা সব ক্ষেত্রে সফল হয়েছি, আমাদের নিশ্চয়ই অনেক ক্ষেত্রে দুর্বলতা ছিল। সেটিও তিনি স্বীকার করেছেন,’বলেন তথ্যমন্ত্রী।

দেশের মানুষ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে অভিনন্দন জানিয়েছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন,‘বিএনপি খুশি হতে পারেনি স্বাভাবিকভাবে, কারণ বিএনপির যে দাবি এবং প্রত্যাশা সেগুলো একান্ত নিজের দাবি, এগুলো জনগণের বিষয় নয়। সেই কারণে বিএনপি হতাশ হয়েছে, দেশের মানুষ খুশি হয়েছে।’

সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আজকাল প্রচুর গণমাধ্যম, বিশেষ করে অনলাইন(পোর্টাল)হওয়ার কারণে দেখা যাচ্ছে সত্যিকার অর্থে সাংবাদিক হওয়ার মতো যোগ্যতা না রাখা অনেকে নিজেদের সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন। বিশেষ করে অনেকগুলো অনলাইনের ক্ষেত্রে এগুলো হচ্ছে, সেখানে ব্যাপক প্রশিক্ষণের প্রয়োজন।

‘যারা সাংবাদিক হওয়ার যোগ্য নন কিংবা আসলে তারা সাংবাদিক নন, কিন্তু একটা অনলাইন খুলে বসে কার্ড বানিয়ে সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন। এতে বৃহত্তর সাংবাদিক পরিবারের গুটি কয়েকজনের জন্য বদনাম হয়। এটি যাতে না হয় তার একটি উপায় সম্মিলিতভাবে সবাইকে খুঁজে বের করা প্রয়োজন।’

‘অনলাইন পত্রিকার নিবন্ধন দেয়ার কাজ শুরু হয়েছে। একটি সংস্থার তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। আরেকটি সংস্থার কাছ থেকে প্রতিবেদন পেলে নিবন্ধন দেয়া শুরু হবে। নিবন্ধন দেয়া হলে ভুঁইফোড় অনলাইন স্বাভাবিকভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। সত্যিকার অর্থে অনলাইন হিসেবে সংবাদ পরিবেশনের জন্য নয়, ভিন্ন উদ্দেশ্যে যেগুলো খোলা হয়েছে সেগুলোর ডোমেইন বন্ধ করে দেব,’যোগ করেন মন্ত্রী।

তিনি জানান, গণমাধ্যমকর্মী আইনের খসড়ার ভেটিং আইন মন্ত্রণালয় চূড়ান্ত করে ফেলেছে। সাংবাদিকদের‘শ্রমিক’হিসেবে যে আখ্যা দেয়া হয়েছিল তা সংশোধন করা হয়েছে। সহসাই এটি মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে।‘এ আইন পাস হলে গণমাধ্যমের সাথে যুক্ত সবার আইনি সুরক্ষা দেয়া সম্ভব হবে।’

সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যার বিচার নিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন,‘বিচার নিয়ে আমরা তাগাদা দিতে পারি। কিন্তু বিষয়টি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। আপনাদের হয়ে আমি আবারো কথা বলব, যাতে এটি তাড়াতাড়ি সমাধানে পৌঁছে যায়, রহস্য উদ্ঘাটিত হয়।’

নবম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন নিয়ে তিনি বলেন,‘আমি আশা করব সংবাদপত্রের মালিক বা পরিচালনা পক্ষ সহসা ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন করবে। কারণ ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন করলে সেখানে যারা কাজ করেন শুধু তারাই লাভবান হবেন না, প্রকৃতপক্ষে পুরো সংবাদপত্র পরিবার লাভবান হবে। এতে করে সাংবাদিকরা কাজ করতে উৎসাহ বোধ করবেন।’তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান, তথ্যসচিব কামরুন নাহার, প্রধান তথ্য কর্মকর্তা সুরথ কুমার সরকার এবং ডিআরইউ সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ ও সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ চৌধুরীসহ সংগঠনের অন্য নেতারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। সূত্র-ইউএনবি

আজকের বাজার/আখনূর রহমান