উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে জয় পেল নিউজিল্যান্ড

উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে আবার বিশ্বকাপের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে ফিরল নিউজিল্যান্ড। পক্ষান্তরে টুর্নামেন্ট থেকে প্রায় বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেছে ক্যারিবিয়দের।
কার্লোস ব্র্যাথওয়েটের সেঞ্চুরি ম্লান করে দিয়ে শেষ পর্যন্ত কেন উইলিয়ামসনের মাস্টার ক্লাস ব্যাটিংয়েই বিশ্বকাপে গতরাতের উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পাঁচ রানে হারিয়েছে নিউজিল্যান্ড। ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্রাফোর্ডে অনুষ্ঠিত ম্যাচে মাত্র ৭ রানে ২ উইকেট হারানোর পর অধিনায়কের ক্যারিয়ার সেরা ১৪৮ রানে ভর করে নিউজিল্যান্ড ৮ উইকেটে ২৯১ রান করে। জবাবে ব্র্যাথওয়েটের সেঞ্চুরিতে স্মরণীয় সেঞ্চুরিতে জয়ের খুব কাছাকাছি গিয়েও শেষ পর্যন্ত পরাজিত হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। জয়ের জন্য সাত বলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাত রান দরকার। এমন অবস্থায় জিমি নিশামের বলে ছক্কা হাকাতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে বোল্টের হাতে ক্যাচ দিয়ে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ব্র্যাথওয়েট আউট হলে ম্যাচ জিতে নেয় নিউজিল্যান্ড।
আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করে পাঁচটি ছক্কা ও নয়টি চার মেরে মাত্র ৮২ বলে ১০১ রান করের তীরে এসে নৌকা ডোবান ব্র্যাথওয়েট। ৪৮তম ওভারে পেসার ম্যাট হেনরিকে তুলোধুনা করে একাই ২৫ রান নেন তিনি।
বড় রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুতে হোচট খায় ক্যারিবিয়রাও। ব্যক্তিগত ১ রানে ট্রেন্ট বোল্টের শিকার হন ফর্মে থাকা শাই হোপ। তিন নম্বরে নামা নিকোলাস পুরানও ব্যক্তিগত ১ রানে বোল্টের শিকার হলে দলীয় ২০ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় জেসন হোল্ডোরের দল। তবে এক প্রান্ত ঠিকই আটকে রেখেছেন ক্রিস গেইল। প্রথম ২০ বলে মাত্র ৪ রান করা গেইল শেষ পর্যন্ত খোলস থেকে বেড়িয়ে নিজের ভঙ্গিমায় শুরু করেন শিমরোন হেটমায়ারের সঙ্গে জুটিবদ্ধ হয়ে। তারা ১২২ রান যোগ করার পর আঘাত হানেন লোকি ফার্গুসন। ৪৫ বলে ৫৪ রান করে ফার্গুসনের প্রথম শিকার হন হেটমায়ার। আট বাউন্ডারি ও এক ওভার বাউন্ডারিতে নিজের ইনিংস সাজান ফর্মে থাকা এ তারকা ব্যাটসমান। দলীয় ১৫২ রানে স্বঘোষিত ‘বিগ বস’ বিদায় নিলে মূলত আশা-ভরসা শেষ হয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের। ৮৪ বলে আটটি চার ও ছয়টি ছক্কা হাকিয়ে ৮৭ রান করা গেইল বোল্টের হাতে ক্যাচ দিয়ে মাঠ ছাড়েন ডি গ্র্যান্ডহোমের বলে। তার বিদায়ে ধ্বস নামে ক্যারিবিয় শিবিরে। এ সময় মাত্র ২৮ বলে ২২ রানে ৫ উইকেট হারায় তারা।
শেষ দিকে কেমার রোচ ও বল হাতে চার উইকেট শিকার করা শেলডন কট্রেল ছাড়া আর কেউই দুই অঙ্কের কোটা স্পর্শ করতে পারেনি।
বোল্ট ১০ ওভার বোলিং করে মাত্র ৩০ রানে ৪ উইকেট শিকার করেন। এছাড়া ফার্গুসন ৫৯ রানে নেন ৩ উইকেট।
এর আগে আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপের ২৯তম ও গতকাল দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে সাউদাম্পটনে টস জিতে আগে পয়েন্ট তালিকার দ্বিতীয় স্থানে থাকা নিউজিল্যান্ডকে ব্যাট করতে আমন্ত্রণ জানান সপ্তম স্থানে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক জেসন হোল্ডার।
ব্যাট হাতে নেমেই মহা বিপদে পড়ে যায় কিউইরা। প্রথম বলেই উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড। রানের খাতা খোলার আগেই ও ব্যক্তিগত শূন্য রানে কট্রেলের এলবিডব্লুর শিকার হন ওপেনার মার্টিন গাপটিল। আরেক ওপেনার কলিন মুনরোও ১ বলে শূন্য রানে কট্রেলের দ্বিতীয় শিকার হলে দলীয় ৭ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় গত আসরের রানার্সআপরা। বিশ্বকাপ ইতিহাসে এই দ্বিতীয়বার দুই ওপেনার শূন্য রানে আউট হলেন। এর আগে ২০১৫ বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে শ্রীলংকার দুই ওপেনার লাহিরু থিরিমান্নে ও তিলকরতেœ দিলশান ডাক মেরেছিলেন। গাপটিল-মুনরোর বিদায়ে অধিনায়ক উইলিয়ামসন এবং রস টেইলর শক্ত হাতে দলের হাল ধরেন। গত বুধবার এজবাস্টনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচ জয়ী অপরাজিত ১০৬ রানের পর টুর্নামেন্টে টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরিসহ ক্যারিয়ার সেরা ১৪৮ রানেরর সুবাদে বড় সংগ্রহ পায় নিউজিল্যান্ড। তৃতীয় উইকেট জুটিতে উইলিয়ামসন-টেইলর ১৬০ রান যোগ করার পর জুটিতে ভাঙ্গন ধরান অকেশনাল বোলার ক্রিস গেইল। ৯৫ বলে সাত বাউন্ডারির সাহায্যে ৬৯ রানে গেইলের শিকার হয়ে টেইলর বিদায় নিলে ১৬৭ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় কিউইরা। তবে এক প্রান্ত ঠিকই আগলে রেখেছেন অধিনায়ক। টম লাথামের সঙ্গে চতুর্থ উইকেট জুটিতে ৪৪ বলে ৪৩ রান যোগ করেন উইলিয়ামসন।
১৬ বল মোকাবেলায় লাথাম ব্যক্তিগত ১২ রানে কট্রেলের তৃতীয় শিকার হলে ২১০ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় কিউইরা। লাথামের বিদায়ে অধিনায়কের সঙ্গে জুটি বাধেন জেমস নিশাম। বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তারা ৪১ বলে ৪১ রান যোগ করেন এবারও জুটিতে ভাঙ্গন ধরান কট্রেল। কট্রেলের চতুর্থ শিকার হন উইলিয়ামসন। দলীয় ২৫১ ও ওয়োনডে ক্যারিয়ারে ১৩তম সেঞ্চুরি পূর্ণ করে ব্যক্তিগত ১৪৮ রানে আউট হন উইলিয়ামসন। ১৫৪ বলের ইনিংসে ১৪টি চার এবং ১টি ছক্কা হাঁকান এ তারকা ব্যাটসমান। চলতি বিশ্বকাপে চার ইনিংসে দুই সেঞ্চুরিসহ ১৮৬.৫ গড়ে নিউজিল্যান্ড অধিনায়কের মোট রান ৩৭৩। এরপর কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম ও জেমস নিশাম ঝড়ো গতিতে ৮ বলে ১৯ রান যোগ করেন। মাত্র ৬ বলে ১৬ রান করে কট্রেলের রান আউটের ফাঁদে পড়ে ডি গ্র্যান্ডহ্যোম আউট হলে ২৭০ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারায় দল। ডি গ্র্যান্ডহোম ২৩ বলে ২৮ রান করে ব্র্যাথওয়েটের শিকার হলে ২৯১ রানে থামে কিউই ইনিংস। কট্রেল ৫৬ রান ৪টি, ব্র্যাথওয়েট ২টি এবং গেইল নেন ১ উইকেট।