কক্সবাজারে যৌথ প্রচেষ্টায় বন, প্রাণী ও মানুষ বাঁচানোর উদ্যোগ

কক্সবাজারে বন্য প্রাণীদের চলাচল নির্বিঘ্ন রাখার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছে সরকার। এ উদ্দেশে যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে বন, প্রাণী ও মানুষ বাঁচানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের জন্য অস্থায়ী শিবির নির্মাণের জন্য অসংখ্য বন ও গাছপালা কেটে ফেলা হয়েছে। এতে বন্যপ্রাণীদের ওপর গুরুতর প্রভাব পড়েছে। মানুষের সাথে বন্য হাতিদের সংঘর্ষের ঘটনাও অনেক বেড়েছে। এ সংকট নিরসনে অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে যৌথ প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে চায় সরকার।

রোহিঙ্গাদের জন্য নির্মিত কয়েক লাখ অস্থায়ী শিবিরের ফলে বন্যপ্রাণীদের চলাচলে ও খাদ্য সংগ্রহে তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে। নিশাচরসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর প্রজনন স্থানসহ আবাসস্থলে দারুণ বিঘ্ন ঘটছে।

পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘এটি একটি বিশেষ সমস্যা। আমরা বেশ কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছি যাতে বন্যপ্রাণী, বিশেষ করে হাতির চলাচলের পথ নির্বিঘ্ন হয়।’

এশিয়ান এলিফেন্ট অব বাংলাদেশ-এর এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কক্সবাজারে বন বিভাগের হাতিদের আবাসস্থলে রোহিঙ্গা সম্প্রদায় অনুপ্রবেশ করেছে। এর ফলে হাতিদের বাসস্থান ও খাদ্য ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ পর্যন্ত, বাংলাদেশে ২৬৮টি আবাসিক বন্য হাতি, ৯৩টি অভিবাসী হাতি এবং ৯৬টি বন্দী হাতির সংখ্যা রেকর্ড করা হয়েছে।

জাতিসংঘের এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে রোহিঙ্গা ঢলের কারণে স্থানীয় সম্প্রদায় এবং পূর্বের রোহিঙ্গারা মিলে কক্সবাজারে জনসংখ্যা এখন প্রায় ১.৫ মিলিয়নে দাঁড়িয়েছে। যার ফলে সেখানকার পরিবেশের ওপর তীব্র চাপ সৃষ্টি করেছে, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।

মন্ত্রী আনিসুল বলেন, এই বিপুল সংখ্যক জনসংখ্যার কারণে বন ধ্বংস হচ্ছে এবং ইকোসিস্টেম নষ্ট হচ্ছে।

তিনি উল্লেখ করেন, বনভূমি ধ্বংস করা হলে সেটি ইকো সিস্টেমের ওপর বিরূপ পরিবর্তন সৃষ্টি করে।

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা-ইউএনএইচসিআরের তথ্যমতে, গত আগস্ট মাসে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আগমনের পর কুতুবপালং-বালুখালী শরণার্থী শিবিরে মানুষ ও হাতির সংঘর্ষে কমপক্ষে ১৩ জন মারা গেছে।

ইউএনবির সাথে আলাপকালে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, যৌথ প্রচেষ্টায় ফলে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এই ধরনের ঘটনা ঘটেনি।

তিনি বলেন, বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়, আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) এবং জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার (ইউএইএইচসিআর) সাথে যৌথভাবে একটি কর্মসূচি চলমান রয়েছে। যাতে শিবিরে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের সাথে হাতিদের সংঘর্ঘের ঘটনা কমানো যায়।

‘আমাদের বেঁচে থাকার জন্য, টিকে থাকার জন্য আমাদের বনভূমির প্রয়োজন, প্রাণীদের প্রয়োজন। এই বৈচিত্র্যময় ইকোসিস্টেমের জন্য হাতি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান,’ যোগ করেন তিনি।

রাজধানীতে অনুষ্ঠেয় সাম্প্রতিক একটি অনুষ্ঠানে বনমন্ত্রী আনিসুল বলেন, আগামী কয়েক বছরে রোহিঙ্গা সমস্যার শেষ হবে না। রোহিঙ্গারা তাদের নিজেদের দেশে ফিরে গেলে পরিবেশগত ভারসাম্য পুনরুদ্ধারের জন্য ভবিষ্যতে দাতাসংস্থাগুলো বাংলাদেশকে সমর্থন দিবে কিনা সে বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।

জাতিসংঘের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, রোহিঙাদের জন্য অস্থায়ী শিবির নির্মাণের জন্য প্রায় ৪,৩০০ একর পাহাড় ও বন কেটে ফেলা হয়েছে। কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে তাদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ও রান্নার জ্বালানির জন্য অসংখ্য গাছ কাটা হয়েছে। এতে দেশের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব অপরিবর্তনীয় থেকে যেতে পারে। তথ্যগ-ইউএনবি।

আজকের বাজার/এমএইচ