কঙ্গোতে অস্ত্র সমর্পণ করছে শিশু যোদ্ধারা

গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গোর শিশু যোদ্ধারা অস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা দিচ্ছে। তারা মনে করছে যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে। তারা লেখাপড়া করে বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখছে।

মাদো নামের ১২ বছর বয়সী শিশু যোদ্ধা বলেছে, কঙ্গোতে যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে বলেই মনে হচ্ছে। তার কথা শুনে আশা করা যেতেই পারে যে কঙ্গোতে যুদ্ধ শেষ হতে যাচ্ছে।

মাদো কঙ্গোর মধ্যাঞ্চলীয় কাসাই অঞ্চলের কামুইনা সাপু মিলিশিয়া বাহিনীর সদস্য। বেশ কয়েকজন প্রাপ্ত বয়স্ক যোদ্ধার সঙ্গে এই কিশোরীও কানাঙ্গা শহরে এসেছে। এটি কিশাসা থেকে প্রায় ৭শ’ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। তারা কিশাসায় অস্ত্রসমর্পণ করেছে। তারা গভর্ণরের পায়ে তাদের পুরনো রাইফেল, ম্যাচেটিস ও কবচ জমা দিয়েছে।

ডিসেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নির্বাচিত হওয়া ফেলিক্স শিসেকেদির আকস্মিক বিজয়ের পর তারা এই অস্ত্রসমর্পণ করল।

অধিকাংশ কামউইনা সাপু যোদ্ধাদের মতো শিসেকেদিও জাতিগত লুবা সম্প্রদায়ের লোক। তাদের সাথে আরো দুই শিশু ছিল। একজনের বয়স প্রায় ১০ বছর। তার মাথায় লাল পট্টি বাঁধা ও হাতে একটি বড় ছোরা ছিল।

লাল হচ্ছে মিলিশিয়াদের রঙ। সৈন্যরা জাতিগত এই গোষ্ঠীর প্রধান কামউইনা নাপুকে হত্যা করলে তারা ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে কিনশাসার বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নেয়।

এরপর থেকে তাদের এই বিদ্রোহী তৎপরতায় অন্তত ৩ হাজার লোক প্রাণ হারায় ও আরো প্রায় ১৪ লাখ লোক বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়ে।

২০১৭ সালে সংঘর্ষের তীব্রতা হ্রাস পায়। জানুয়ারি মাসে জোসেফ কাবিলার ১৮ বছরের ক্ষমতার অবসান ঘটিয়ে শিসেকেদি ক্ষমতা গ্রহণ করার পর থেকে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটে। কাবিলা অত্যন্ত কঠোরতার সাথে শাসনকাজ পরিচালনা করেন।

মাদো ছুরি ও লাল পট্টির পাশে তার তাবিজটিও রেখে দিয়েছে। সে একজন ‘ইয়ামামা’ ছিল। যেসব নারীকে তার বাবা মিলিশিয়া বাহিনীতে যোগ দিতে উৎসাহ দেয় তাদের ইয়ামামা বলে।

শিশুটি বলেন, আমাদের দলে ১০টি শিশু ছিল। এদের মধ্যে একজন মারা গেছে। সে বলে,‘আমাদের দেশকে রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।’

আঞ্চলিক গভর্ণর ডেনিস কাম্বাই ‘মেয়ে শিশুদের হাতে অস্ত্র ও তাবিজ তুলে দেয়ার জন্য’ মিলিশিয়াদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘তারা তাদের মনের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছে যে তারা অজেয়।’

এ ধরণের শিশুরা আত্মসমর্পণ করলে তাদের ইউনিসেফের কাছে পাঠানো হয়। জাতিসংঘের এই শিশু বিষয়ক সংস্থাটি তাদের আবার শিক্ষাজীবনে ফিরে যেতে সহায়তা করে।

মাদোকে নতুন কাপড় দেয়া হয়েছে। শিশুটি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। সে বলে, ‘আমি লেখাপড়া করতে চাই।’

শিশুদের শিক্ষাকেন্দ্রে কর্মরত জুলেস লোসাঙ্গো বলেন, শিশুদের শিক্ষিত হওয়া প্রয়োজন। তবে প্রায়ই দেখা যায় যে, তাদের পরিবার শিক্ষার ব্যয়ভার গ্রহণ করতে পারে না। এরফলে মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলো খুব সহজেই এই শিশুদের আবারও যোদ্ধা বানাতে পারে।

তিনি বলেন, আমরা শিশুদের সাথে কথা বলে বুঝতে পেরেছি যে তারা স্কুলে যেতে চায়। তবে পরিবার তাদের শিক্ষার ব্যয় গ্রহণ করতে পারে না।

এই শিক্ষিকা আরো বলেন, একটি শিশু যখন স্কুলে যেতে না পারে এবং সেই সময়ে কোন আন্দোলন শুরু হয়, তখন কোনকিছু না ভেবেই তারা মিলিশিয়া বাহিনীতে যোগ দেয়। তথ্য-বাসস

আজকের বাজার/এমএইচ