কনকনে শীতে কাঁপছে দেশ

প্রতিকী ছবি
প্রতিকী ছবি

শাহ্জাহান সাজু :
কনকনে শীতে কাঁপছে সারা দেশের মানুষ। দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এবং তৎসংলগ্ন দণি আন্দামান সাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে আকাশ কিছুটা মেঘলা রয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। এই দুই কারণে সারা দেশেই প্রচন্ড শীত পড়তে শুরু করেছে। উত্তরাঞ্চলসহ প্রায় সারা দেশের মানুষই শীতে জুবুথুথু হয়ে পড়েছেন।
বিশেষ করে উত্তরের রাজশাহী, পাবনা, দিনাজপুর ও কুষ্টিয়া অঞ্চলের উপর দিয়ে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এছাড়া শ্রীমঙ্গল ও সীতাকুন্ড অঞ্চলসহ ঢাকা, ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগের অবশিষ্টাংশের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। আবহাওয়া অধিদফতর বলছে

রোববার সকাল ৯টা থেকে আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে দিনাজপুরে ৫ দশমিক ১ ডিগ্রি, রাজশাহী ৫ দশমিক ৩ ডিগ্রি, ঈশ্বরদী ৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি এবং চুয়াডাঙ্গায় ৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শনিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল রাজশাহী ও চুয়াডাঙ্গায় ৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
রোববার ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৩ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এেেত্র সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কমেছে এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল টেকনাফে ২৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় আবহাওয়া প্রায় শুষ্ক থাকবে বলে অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের কোথাও কোথাও মাঝরি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে বলেও জানানো হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের পশ্চিমাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমী লঘুচাপ দণি বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।আবহাওয়াবিদরা বলছেন, সার্বিকভাবে দেশের তাপমাত্রা এর চেয়ে খুব বেশি না নামলেও শৈত্যপ্রবাহের কারণে শীতের অনুভূতি অনেকটা তীব্র হতে পারে। এতে কোন কোন এলাকায় তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলেই তার অনুভূতি ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো হতে পারে।

রাজধানী ঢাকাতেও আজকের শীতের তীব্রতা গত কয়েকদিনের তুলনায় অনেক বেশি। রাজধানীর অনেক এলাকায়ই দেখা গেছে সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন কর্মমূখী মানুষ জন।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরী করেন আবদুল লতিফ। আজকের শীতের তীব্রতা সম্পর্কে তিনি আজকের বাজাকে বলেন, গত কয়েক দিনের চেয়ে আজকে শীতের তীব্রতা অনেক বেশী। কান ঢেকেও রাস্তায় চলতে কষ্ট হচ্ছে।
এদিকে শীতের তীব্রতায় সব চেয়ে বেশী কষ্টে পড়েছেন ছিন্নমূল মানুষেরা। আজ রাজধানীর অনেক এলাকায় সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে ছিন্নমূল মানুষদেরকে একসঙ্গে জড়ো হয়ে আগুন পোহাতে দেখা গেছে।
আজ রোববার সকাল ৯ টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং তা কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। এছাড়া, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারাদেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। পরবর্তী ৭২ ঘন্টায় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে।

অসুখ-বিসুখ প্রতিরোধে সতর্ক থাকার পরামর্শ :
জানুয়ারির শুরু থেকেই শীতের তীব্রতা লক্ষ্য করা গেছে। গত কয়েকদিন ধরে এর তীব্রতা বেড়েই চলেছে। কনকনে শীতে কাঁপছে সারা দেশের মানুষ। শীতের তীব্রতায় বেড়ে চলেছে শীতজনিত সব ধরনের অসুখ-বিসুখ। বিশেষ করে শীতের অসুখে শিশু থেকে বৃদ্ধরাই বেশী আক্রান্ত হয়ে থাকেন বলে বলছেন বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা। মূলত শীতের সঙ্গে অপুষ্টির কারণে এ সময়ে শিশুরা রোগ প্রতিরোধ মতা হারিয়ে ফেলে। এতে শিশুরা রোগে ভোগে বেশি। তাই শীতের প্রকোপ থেকে সুরক্ষার পাশাপাশি শিশুদের পুষ্টিকর খাবারের দিকেও নজর দিতে বলছেন তারা।
তীব্র শীতে শিশুদের মধ্যে বেশিরভাগই আক্রান্ত হচ্ছে সর্দি-কাশি, অ্যাজমা, ব্রংকাইটিস, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগ ঘুরে দেখা গেছে, এখানে শিশু-রোগীর সংখ্যাই বেশি। রোগীদের মধ্যে বেশিরভাগই ব্রংকাইটিসে আক্রান্ত। এসব রোগী ঘনঘন শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ে থাকে। এর সঙ্গে রয়েছে, ঠান্ডা, শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়ার রোগী।
শীত কালিন রোগ বিষয়ে শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ইমারত হোসেন ইমু আজকের বাজাকে বলেন, শীতের তীব্রতায় শিশুরা আক্রান্ত হয় বেশি। প্রথমে ঠান্ডা, জ্বর, শ্বাসকষ্ট, পরে নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত হয়। এদের মধ্যে যারা বেশি অসুস্থ হয়ে পরে, তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি রাখা করাই শ্রেয়।
তিনি বলেন, শীতকালের শুল্ক আবহাওয়ায় শিশুরা এ্যাজমাতে আক্রান্ত হচ্ছে বেশী। শীতকালীন ডায়রিয়া, ঠান্ডা-জ¦রে আক্রান্ত শিশুদের ক্ষেত্রে বাবা-মাকে একটু বেশিই সচেতন এবং সতর্ক থাকতে হবে। সকাল থেকে রাতে ঘুমোতে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত শিশুদেরকে হালকা কুসুম গরম পানি খেতে দিলে ভালো হবে । একইসঙ্গে ফলসহ শাক-সবজি খেতে দিতে হবে। নবজাতক শিশুদের ক্ষেত্রে অবশ্যই বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ তারা খুবই স্পর্শকাতর। ঠান্ডা থেকে সুরক্ষা দিতে গরম কাপড় সব সময় গায়ে রাখতে হবে। আবার ঘেমে গেলে সাথে সাথে মুছে দিতে হবে নরম কাপড় দিয়ে। কারণ ঘাম থেকে যে ঠান্ডা লাগে ; সেটা শিশুদের জন্য আরো মারাত্বক। এসময় শিশুদের উষ্ণ আরামদায়ক কাপড় পড়ানোসহ মাস্ক পরাতে পারলে ওইসব রোগ থেকে সুরক্ষা পাওয়া যাবে বলে পরামর্শ দেন তিনি।

আজকের বাজার : এসএস / ওএফ/ ৭ ডিসেম্বর ২০১৮।